
শীতকালে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের অসুখে ভুগতে দেখা যায়। পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর প্রায় ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ। নবজাতকদের ক্ষেত্রে তো এই হার আরও বেশি। প্রতিবছর প্রায় ১৯ শতাংশ নবজাতক হাসপাতালে ভর্তি হয় হাইপোথারমিয়া বা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়ার জন্য। এ জন্য নবজাতকদের উষ্ণ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
শূন্য থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুরা নবজাতক হিসেবে পরিচিত। এদের ত্বক কোমল, নাজুক। নবজাতকেরা দ্রুত বড়দের মতো পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। এমনকি তারা বড়দের থেকে প্রায় চার গুণ দ্রুত শরীর থেকে তাপমাত্রা হারায়। এই অবস্থা আরও জটিল হয় তাদের, যারা স্বাভাবিক সময়ের আগে এবং অল্প ওজন নিয়ে জন্মায়।
সোজা কথায় বলতে গেলে, নবজাতককে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে কয়েক স্তরের পোশাক প্রয়োজন। কয়েক স্তরের পোশাক পরানো অনেক দিক দিয়েই উপকারী। এতে তাপমাত্রা অনুযায়ী পোশাকের স্তর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
শিশুর পোশাক হিসেবে প্রথমেই পাতলা, নরম, সুতি জামা পরানো যেতে পারে। এরপরের স্তরে নরম উলের তৈরি ফুলহাতা পোশাক পরাতে হবে। সরাসরি উলের পোশাক না পরানোই ভালো। এতে নবজাতকের গায়ে র্যাশ বা অ্যালার্জি হতে পারে। খসখসে কিংবা শক্ত কাপড়ে ক্ষতি হতে পারে তাদের সংবেদনশীল ত্বকের। নবজাতকের ওপর কম্বল দেওয়া যেতে পারে।
নবজাতকের মাথায় টুপি পরানোর কথা ভুললে চলবে না, হাত ও পায়ে মোজা পরিয়ে রাখতে হবে।
যে পোশাকই পরানো হোক না কেন, সেটি যাতে অতিরিক্ত না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। শিশু যেন ঘেমে গিয়ে ঠান্ডা লেগে না যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। শিশুকে পোশাক পরিয়ে দেওয়ার পর তার কাপড়ের নিচে হাত দিয়ে দেখতে হবে শিশুর শরীর গরম আছে কি না। অতিরিক্ত গরম বা ঘেমে গেছে বলে মনে হলে কাপড়ের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
নবজাতকের শীতের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখতে হবে পোশাকটি যেন বেশি ভারী অথবা খসখসে না হয়। শীতের পোশাকের কাপড় সুতি, নরম উল, ফ্লানেল কাপড়ের হলে পরে আরাম পাবে।
হালকা শীত থেকে শুরু করে তীব্র শীতে পরার উপযোগী বাহারি নকশা ও আকারের সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি জ্যাকেট, হুডি সোয়েটার, পায়জামাসহ নানা ধরনের পোশাক শীতে নবজাতকদের জন্য বেশ উপযোগী ও আরামদায়ক।
মেয়ে ও ছেলেশিশুর জন্য ভিন্ন ভিন্ন নকশার শীত পোশাক পাওয়া যায়। এ ছাড়া চাইলেই নিউবর্ন সেট, কম্বল ইত্যাদিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
নবজাতকের শীতের পোশাক, কম্বল যেন সহজে পরিষ্কার করা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শীতে এমনিতেই বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই শীতের জামা কাপড় প্রতি সপ্তাহে এবং প্রয়োজন হলে আরও অল্প সময় ব্যবধানে ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া উত্তম। একই পোশাক যেন না পরিষ্কার করে টানা বেশি দিন ব্যবহার না করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অবশ্যই নজর রাখতে হবে নবজাতকের মুখ যেন খোলা থাকে, পোশাকের অংশবিশেষ বা কম্বল দিয়ে নাক–মুখ ঢেকে রাখা যাবে না। এতে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে।
নবজাতককে কিছুক্ষণ পরপরই খেয়াল রাখতে হবে, দেখতে হবে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।