
২৫ জুন মাগুরায় রাইস কুকারে ভাত রান্না করতে গিয়ে সেতু আক্তার (৩০) নামের একজন নারী বিদ্যুতায়িত হোন। এ সময় তাঁর সাত মাস বয়সী মেয়ে আনিশা মায়ের কোলে ছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
রাইস কুকার এখন বেশ ব্যবহৃত একটি হোম অ্যাপ্লায়েন্স। এটি শুধু ভাত রান্না নয়, অনেক সময় সবজি, খিচুড়ি, পোলাও, এমনকি স্টিম করা খাবার তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি রাইস কুকার বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ডের খবর ক্রমেই বাড়ছে। এতে মানুষ আহত হচ্ছে, ঘরবাড়ি পুড়ে যাচ্ছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটছে।
কেন রাইস কুকার বিস্ফোরণ ঘটে?
রাইস কুকার মূলত একটি ইলেকট্রিক হিটিং ডিভাইস। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার না করলে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। অগ্নিনির্বাপণ প্রযুক্তি বিশ্লেষক আইসিইএল প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক প্রকৌশলী পারভেজ মাহমুদ বলেন, রাইস কুকারের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প তৈরি হয়। যদি সেই বাষ্প নির্গমনের সঠিক পথ না থাকে, তাহলে ভেতরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
অনেকেই প্রেশার রিলিজ বাল্ব পরিষ্কার না রাখার কারণে এই সমস্যায় পড়েন। অনেকে ধারণা করেন বেশি পানি দিলে ভাত ভালো হবে। কিন্তু অতিরিক্ত পানি দিলে ভেতরের চাপ বেড়ে যায় এবং কুকারের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। এতে শর্টসার্কিট, ওভারফ্লো বা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। পুরোনো বা নিম্নমানের রাইস কুকারে ইলেকট্রিক তার বা কম্পোন্যান্টে ত্রুটি থাকলে তা স্পার্কিং বা শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুন লাগাতে পারে।
রাইস কুকারের ঢাকনাটি ঠিকমতো না লাগালে ভেতরের তাপ ঠিকভাবে বের হতে পারে না। এতে কুকার অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। কুকারের নিচে বা প্রেশার রিলিজ অংশে যদি খাবার জমে থাকে, তাহলে এটি স্বাভাবিক কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে বাষ্প আটকে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার আগে তার ব্যবহারবিধি একটু খেয়াল করে পড়া উচিত।
প্রতিটি কুকারের একটি ইউজার ম্যানুয়াল থাকে। সেটি মনোযোগ সহকারে পড়া উচিত। এ ছাড়া রাইস কুকারের মতো পণ্য ব্যবহারের সময় শিশু-কিশোরদের দূরে রাখুন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, অনেক সময় আমরা গৃহপরিচারিকা ও সহায়কদের মাধ্যমে রাইস কুকার ও অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করতে দেই। এ বিষয়ে তাদের সতর্কতা কম থাকে বলে আপনাকেই সতর্ক থাকতে হবে।
রাইস কুকার ব্যবহারে সতর্কতা
রাইস কুকার নিরাপদে ব্যবহারের জন্য কিছু সহজ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। রাজধানী ঢাকার প্রগতি সরণির ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ভালো ব্র্যান্ডের রাইস কুকার কিনুন। নামীদামি ব্র্যান্ডে সাধারণত সুরক্ষামূলক ফিচার থাকে যেমন অটোমেটিক শাট-অফ, ওভারহিট প্রোটেকশন, প্রেশার রিলিজ সিস্টেম ইত্যাদি। নির্দেশনা অনুযায়ী চাল-পানির অনুপাত বজায় রাখুন। ওভারলোড করবেন না।
কুকার চালুর আগে নিশ্চিত করুন যে বাইরের অংশ এবং কেবলটি শুকনা রয়েছে। কেবল বা প্লাগ ক্ষতিগ্রস্ত কি না, খেয়াল রাখুন। অনেক সময় রান্নাঘরে ইঁদুর বা তেলাপোকা তার কামড়ে নষ্ট করে ফেলে। যদি কেবল ছেঁড়া বা পুরোনো হয়, তাহলে সেটি অবিলম্বে বদলে ফেলুন। খাবার কুকারে রেখে দীর্ঘ সময় প্লাগ ইন করে রাখবেন না। রান্না শেষে ওয়ার্ম মোডে দীর্ঘক্ষণ কুকার রাখা আগুনের ঝুঁকি বাড়ায়।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
প্রতিবার ব্যবহারের পর কুকারের ভেতরের অংশ, ঢাকনা এবং প্রেশার রিলিজ বাল্ব ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। প্রকৌশলী পারভেজ মাহমুদ বললেন, কখনোই সাবানের পানি দিয়ে ভেতরের হিটিং প্লেট ভিজিয়ে ফেলবেন না। এটি শর্টসার্কিট হতে পারে। কখনোই রান্নার সময় ঘর ছেড়ে বাইরে চলে যাবেন না। ভেতরের পাত্রে প্লাস্টিকের উপকরণ ব্যবহার করলে গলে গিয়ে আগুন লাগতে পারে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, প্রেশার কুকার ও রাইস কুকার গুলিয়ে ফেলবেন না।
এদের কাজ ও গঠন আলাদা। যেটি ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে, শুধু সেই কাজেই তা ব্যবহার করুন। একটি ভালো রাইস কুকার ৩ থেকে ৪ বছর ভালো সেবা দিতে পারে। বেশি পুরোনো রাইস কুকার ব্যবহার না করাই ভালো। পুরোনো কুকার নিয়মিত পরীক্ষা করুন। ৪ থেকে ৫ বছরের বেশি পুরোনো কুকার হলে সেটি ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে চেক করিয়ে নিন।