গাছ কি আসলেই ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে

সাধারণ একটি বাড়ির বাতাসকে বিশুদ্ধ করতে ৬৮০টি গাছ প্রয়োজন হবে
ছবি: সুমন ইউসুফ

একটা কথা চালু আছে, নির্দিষ্ট কিছু গাছ ঘরে বা বাইরে বাতাসের দূষণকারী পদার্থগুলো কমিয়ে দিয়ে বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। আদতেই কি তা ঠিক?

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষণায় এমন গাছের ব্যাপারে জানা গেছে, যা বদ্ধ ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে। তবে সেই গবেষণা নেহাতই ছোট্ট কুঠুরির মতো জায়গায় করা হয়েছে। বিজ্ঞানের সব জটিল হিসাব-নিকাশ করে এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি জানিয়েছে, সেই গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী আমাদের সাধারণ একটি বাড়ির বাতাসকে বিশুদ্ধ করতে ৬৮০টি গাছ প্রয়োজন হবে। বাস্তবে যা কার্যকর করা অসম্ভব।

তাহলে কি ঘরে, বারান্দায়, ছাদে কিংবা বাড়ির সামনের একচিলতে জায়গায় লাগানো গাছ স্বাস্থ্যগত দিক থেকে আমাদের কোনো উপকারেই আসে না? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে? জানাচ্ছেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।

পর্যাপ্ত গাছ থাকলে সেখানকার বাতাস যে তুলনামূলক বিশুদ্ধ থাকে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই

দূষণের ভয়াবহ বার্তা

নগরায়ণ করতে গিয়ে আমরা নির্বিচারে গাছ কাটছি। তাই অক্সিজেনের উৎসই এখানে কম। আমাদের নিশ্বাসে ছেড়ে দেওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড নিয়ে নেওয়ার মতো গাছবন্ধুদের আমরাই হত্যা করছি। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের নানা খাত থেকে বাতাসে অহরহ দূষণকারী পদার্থ যুক্ত হচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশের ধূসর বাতাস হয়তো আপনি স্বচক্ষেই দেখেছেন। মোটরযানের ধোঁয়া তো আছেই, সিগারেট নামের নিষিদ্ধ বস্তুর ধোঁয়াতেও বোঝাই হয়ে থাকছে লোকালয়ের বাতাস। এসব ধোঁয়া বাতাসে মিশে যায়। চোখে দেখা না গেলেও বাতাস হয়ে থাকে দূষিত। সেই বাতাসেই শ্বাস নিচ্ছি আমি, আপনি, আমাদের সন্তানেরা।

গাছের পরশ বাতাসে

যত ধরনের দূষণকারী পদার্থ আমাদের চারপাশের বাতাসে মিশে আছে, সেগুলোর বড় একটা অংশ শোষণ করে নেওয়ার মতো নির্দিষ্ট কোনো গাছ আদতেই এই পৃথিবীতে আছে কি না, তা হলফ করে বলা মুশকিল! কারণ, এ পর্যন্ত হওয়া কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাই এ বিষয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত করতে পারেনি। তবে কোনো জায়গায় পর্যাপ্ত গাছ থাকলে সেখানকার বাতাস যে তুলনামূলক বিশুদ্ধ থাকে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি ধুলাবালুর একটা পরতও কিন্তু আটকে যায় গাছে। আবার গরমের সময়টায় গাছের পরশে বাতাস খানিকটা ঠান্ডাও হয় বৈকি। এ ছাড়া গাছের উপস্থিতিতে মানসিক চাপ এবং অবসন্নতা দূর হয়। মনে আসে প্রশান্তি। বুঝতেই পারছেন, ঘরের চারপাশজুড়ে রাখা যেকোনো গাছই আপনার জন্য উপকারী হবে নিঃসন্দেহে।

বিষাক্ত কি না জানা নেই, এমন গাছ লাগানো হলে সেগুলো শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখুন

দূষণের প্রভাব কমাতে জনপ্রিয় কিছু গাছ

কেউ কেউ বলেন, বাড়ির কাছে নিমগাছ কিংবা রাবারগাছ লাগানো হলে ঘরে পরিশুদ্ধ বাতাস ঢোকে। কারও কারও মতে, এরিকা পাম, ব্যাম্বু পাম, স্পাইডার, ড্রাসিনা, স্নেক প্ল্যান্ট, মানিপ্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, পিস লিলি, বস্টন ফার্ন প্রভৃতি গাছ ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে। এমন ধারণার সপক্ষে কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা রয়েছে। তবে সেগুলোর কোনোটিই সন্দেহাতীত নয়।

যা করবেন

ঘরের ভেতরে, ছাদে কিংবা বাড়ির আশপাশে যতটুকু জায়গাই পাবেন, সেখানে গাছ লাগান। সেটি যে গাছই হোক না কেন। উপকার পাবেন নিশ্চয়ই। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, কিছু গাছের পাতা মুখে দেওয়া বিপজ্জনকও হতে পারে। তাই শিশু ও পোষা প্রাণী থাকলে ঘরে কোনো গাছ রাখার আগে সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। বিষাক্ত হতে পারে কিংবা বিষাক্ত কি না জানা নেই, এমন গাছ লাগানো হলে সেগুলো শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখুন।