অপরিচিত কাউকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুতালিকায় না রাখাই ভালো
অপরিচিত কাউকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুতালিকায় না রাখাই ভালো

ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহারের সময় এই ৫ শিষ্টাচার কি আপনি মেনে চলেন?

এখন স্কুলপড়ুয়া থেকে বয়স্কদের হাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এটা যেন দৈনন্দিন জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা আমাদের মধ্যে যোগাযোগ যেমন বাড়িয়েছে, একইভাবে বাড়িয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতি।

আমাদের সমাজে যেমন ভালো মানুষের পাশাপাশি অনেক বাজে লোকও রয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে

ও ঠিক তা–ই। আর এসব বাজে লোকের কাজ হলো ভুলভাল তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তিতে রাখা।

অনেকে না বুঝেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যান। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সময় কিছু শিষ্টাচার আমাদের সবারই মেনে চলা উচিত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের শিষ্টাচার সম্পর্কে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুইনসল্যান্ডের স্কুল অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড আর্টসে পিএইচডিরত তাহমিনা হক। তাঁর কথায় উঠে এসেছে ৫টি বিষয়।

১. শুধু পরিচিত ব্যক্তিদেরই বন্ধুতালিকায় রাখুন

একজন মানুষ সম্পর্কে কিছুই না জেনে হুট করে আমরা সাধারণত তার বন্ধু হয়ে যাই না। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা হয়তো শুধু কারও ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) দেখেই তাকে বন্ধু হওয়ার জন্য ‘অ্যাড রিকোয়েস্ট’ দিই, অথবা কারও বন্ধু ‘রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট’ (অনুরোধ গ্রহণ) করি।

যেহেতু আমরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্সে আমাদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করি, তাই অপরিচিত ব্যক্তিদের বন্ধুতালিকায় রাখার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি একজন অপরিচিত মানুষের সামনে উন্মুক্ত করে রাখছি।

এটি আমাদের জন্য নানা ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই অপরিচিত কাউকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুতালিকায় না রাখাই ভালো।

২. মন্তব্য করার সময় সতর্ক থাকা

চলতি বছরের মার্চ মাসে রাকিবুল হাসান নামের এক ফেসবুকধারী অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার একটি পোস্টে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওই ব্যক্তির মন্তব্যের স্ক্রিনশটসহ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান অভিনেত্রী।

ভাইরাল সেই পোস্টের কিছুদিন পরেই রাকিবুল হাসান যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন, সেখান থেকে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করতে গিয়ে কোথায় থামতে হবে, সেটা জানা জরুরি।

তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই কোনো না কোনোভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্যের স্বীকার হন। কোথাও মন্তব্য করার আগে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, মন্তব্যটির কারণে আমরা যেন কোনোভাবেই বিদ্বেষ না ছড়াই।

একই সঙ্গে নিজের মন্তব্য কারও অনুভূতিতে যেন আঘাত না হানে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

৩. অনুমতি ছাড়া অন্যের ছবি আপলোড নয়

তানজিলা (ছদ্মনাম) তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে বেশ কিছু ছবি তুললেন। তিনি বন্ধুদের বলেছিলেন, তাঁরা যেন এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট না করেন।

কিন্তু বাড়ি পৌঁছানোর আগেই তানজিলা দেখেন, তাঁর বন্ধুরা এরই মধ্যে সেসব ছবি ফেসবুকে আপলোড করে দিয়েছেন। কারও কাছে হয়তো মনে হতে পারে, বন্ধুদের মাঝে এটা হতেই পারে, এ আর এমন কি! কিন্তু কারও ছবিই তাঁর অনুমতি ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা উচিত নয়।

এতে তাঁর হয়তো কোনো ক্ষতি হতে পারে, যা আমরা জানিই না। তাই অবশ্যই কারও সঙ্গে ছবি তুলে তা পোস্ট করার আগে তাঁর অনুমতি নিন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কিছু শেয়ার করার আগে তা সত্য কি না, যাচাই করে নিন

৪. তথ্য যাচাই করুন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজকাল বিভিন্ন ধরনের ভুয়া তথ্য ঘুরে বেড়ায়। অনেক ভুয়া তথ্য আবার বিশ্বাসযোগ্য কোনো মিডিয়ার নিউজকার্ডের আদলে ঘুরে বেড়ায়। এসব তথ্য দেখে আমরা বিচলিত হই। যাচাই ছাড়া যা দেখে অনেকে ভুল তথ্যের ফাঁদে পড়তে পারেন।

আমরা অনেক সময় না বুঝেই এসব তথ্য শেয়ার করি। আবার অনেক সময় এআই দিয়ে তৈরি ছবি এতটাই বাস্তব দেখায় যে সত্য-মিথ্যা বোঝার অবস্থা থাকে না। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কিছু শেয়ার করার আগে তা সত্য কি না, যাচাই করে নিন।

নিউজকার্ড দেখেই সঙ্গে সঙ্গে তা শেয়ার না করে, নির্ভরযোগ্য মিডিয়ার সাইট বা পেজ থেকে আপলোড করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করে নিন।

৫. অযথা ট্যাগ করবেন না

অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট করার পর সেটা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন। আর সেই প্রচেষ্টা থেকে অনেকে একটা ছবি বা স্ট্যাটাস লিখে ৫০ জনকে ট্যাগ করেন।

বেশির ভাগ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপে কাউকে ট্যাগ করা হলে একটি নোটিফিকেশন আসে। কোনো অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন যে কাউকে বিব্রত করতে পারে।

তাই কাউকে কোথাও ট্যাগ করার আগে তার সঙ্গে মানুষটি যুক্ত কি না, সেটা বুঝে নিন। অযথা কাউকে নিজের কাজে ব্যবহার করলে ওই মানুষটি বিরক্ত হতে পারেন।