জীবনে যে সংকটই আসুক, ভাই-বোন পাশে থাকলে সবকিছুই সহজ হয়ে যায়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ভাই বা বোনটি মুখে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে যে আপনার কোনো ক্ষতি হলে তাদের কিছুই আসে যায় না। তাদের সেই সামান্য খোঁচা মারা কথা কিন্তু মুহূর্তেই আপনাকে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে। ভালোবাসা, বিশ্বাস ও জীবন নিয়ে আপনাকে সে এমন কিছু শিক্ষা দিতে পারে, যা অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।
‘রেড ফ্ল্যাগ! ভুলে যাও’—কোনো কিছু না ভেবে সরাসরি এমন কথা শুধু ভাই-বোনেরাই বলে। আপনার পছন্দের মানুষটির ব্যাপারে কোনো দ্বিধা ছাড়াই আপনাকে সে সাবধান করবে। বলবে, ‘ও ছেলে বা মেয়েটি তোমার জন্য নয়।’ ভাই-বোনেরা কখনো মিষ্টি কথা বলে আপনাকে সান্ত্বনা দেবে না। তাদের সেই নির্মম সত্যবাদিতায় বিরক্ত হয়ে মাঝেমধ্যে নিজের অস্তিত্ব গোপন করতে ইচ্ছা করলেও মন তো ঠিকই জানে যে এটা আসলে একধরনের গভীর ভালোবাসা।
হয়তো সে আপনার জন্মদিন ভুলে যাবে, কিন্তু আপনার মন ভেঙেছে শুনে ঠিকই রাত তিনটায় আপনার কাছে হাজির হবে। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ঘুরতে যাওয়া বাতিল করলেও দেখবেন বাসায় আপনার পছন্দের খাবার হাতে নিয়ে ফিরবে। ভাই-বোনেরা শেখায়, আনুগত্য কোনো দেখানোর জিনিস নয়, এটা আসলে অভ্যাস। এটা সেই নিশ্চয়তা দেয় যে কেউ একজন সব সময় আপনার পাশে আছে।
একসঙ্গে বড় হওয়ার দরুন অনেক পরিবারেই ভাইবোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কাজ করে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এতে মাঝেমধ্যে হিংসা ভাব আসাও স্বাভাবিক। কেউ প্রকাশ না করলেও একজনের ভালো ফল, ভালো চাকরি অন্যজনকে সাময়িকভাবে অপ্রস্তুত করে। তবে এমন মনোভাব দ্রুত কাটিয়ে উঠে ভাই–বোনের সাফল্যে আনন্দিত হই আমরা। নিজে সংগ্রাম করলেও অন্যের সাফল্যে হাসিমুখে আনন্দ করতে এবং উৎসাহ দিতে শিখি।
প্রিয় পোশাক নষ্ট করেছে কিংবা আপনার সবচেয়ে গোপন কথাটি হয়তো মা–বাবাকে সে-ই বলে দিয়েছে। রাগ করে ‘আর কোনো দিন কথা বলব না’ ঘোষণা দিয়েও ঠিক পরদিনই কিন্তু তার সঙ্গে আবার কথা বলছেন। ক্ষমা যে কোনো নাটকীয় অঙ্গভঙ্গি নয়; বরং জীবনে এগিয়ে যাওয়ার এবং স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার একটি কৌশলমাত্র, ভাই–বোনের সম্পর্ক আমাদের তা–ই শেখায়।
শোবার ঘর থেকে জন্মদিনের কেক, টিভির রিমোট থেকে শুরু করে মানসিক আঘাত—ভাই–বোনের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই চলতে থাকে ভাগাভাগির এই শিক্ষা। কীভাবে আলোচনা করতে হয়, আপস করতে হয় এবং মিটমাট করতে হয়, সবই শেখায় এই সম্পর্ক।
সম্পূর্ণ ভিন্ন মতামত নিয়ে ঝগড়া করেও কীভাবে একসঙ্গে থাকা যায়, একে অপরকে ভালোবাসা যায়, এই শিক্ষা আপনি আপনার ভাই–বোনের কাছেই পেয়ে থাকেন। সম্পর্ক রাখার জন্য যে সব সময় একই মানসিকতা থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
সব ভালোবাসার ভাষা কাব্যিক নয়। কখনো কেকের বড় টুকরা রেখে দেওয়া, মায়ের বকা থেকে বাঁচানো, কখনো আবার খুনসুটি, গুঁতোগুঁতির মধ্যেও ভালোবাসা লুকানো থাকে। ভালোবাসা প্রকাশের যে অনেক রূপ হতে পারে, তা প্রথমত ভাই-বোনই শেখায়।
সূত্র: ফেমিনা