ঈদের দিনের বড় একটা অংশ আমাদের রান্নাঘরেই কেটে যায়। আত্মীয় ও গরিব-দুঃখীদের মধ্যে কোরবানির মাংস বণ্টন থেকে রান্না—সব এই রান্নাঘর থেকেই হবে। তাই ঈদের আগেই রান্নাঘরটা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে রাখা প্রয়োজন। উপায় জানাচ্ছেন ফাবিহা ফাইজা হক

কোরবানির মাংস ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক রান্নার জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর মসলা ও বাসনকোসন। আকিজ কলেজ অব হোম ইকোনমিকসের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া হোসেন জানান, ঈদের দিন যেসব জিনিস দরকার পড়বে, আগে থেকেই সেগুলো হাতের কাছে মজুত রাখতে হবে।
গুছিয়ে রাখুন রান্নাঘর
কোরবানির ঈদে আপনার রান্নাঘরের যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনে পড়বে, সেটা হলো ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজ। আর তাই ঈদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে ফ্রিজটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে রাখুন। মাংস যাতে সহজেই রাখতে পারেন, তার জন্য ফ্রিজে জায়গা খালি রাখুন।
ঈদে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন ছুরি, বঁটি, দা, কাঁচি, চপিং বোর্ড, হাঁড়িপাতিল—সব গুছিয়ে রাখুন। যেসব জিনিসে ধার দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলো আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখুন।
ওভেন, রাইস কুকার, ব্লেন্ডার, ফুড প্রসেসর—রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় এই সামগ্রী পরিষ্কার–পরিপাটি করে রাখুন।
রান্নাঘরে স্বভাবতই পিঁপড়ার উৎপাত বাড়তে পারে, তাই পিঁপড়া দূর করার প্রস্তুতিও আগে থেকে নিয়ে রাখুন।
রান্নাঘরটি স্বাভাবিকভাবেই রক্ত আর মাংসের গন্ধ ও দাগে ভরে যাবে। চটজলদি এসব ময়লা পরিষ্কার করে ফেলার জন্য ভিনেগার, ক্লিনার, ডেটল, স্যাভলন অথবা ব্লিচিং পাউডার হাতের কাছে রাখুন।
ঈদে রান্নাঘরে মাংস–চর্বির ছড়াছড়ি থাকবে, তাই আগে থেকেই ঢাকনাওয়ালা একটি ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করে রাখুন।
যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপকরণ হাতের কাছে থাকলে আপনার কষ্ট ও সময়—দুটোই বেঁচে যাবে।
কিনে রাখুন মসলাপাতি–চাল–আটা
ঈদের আগেই মাংসের জন্য আদা, রসুন, পেঁয়াজ, হলুদ, মরিচ, তেজপাতা, গরমমসলা, গোলমরিচ, জায়ফল, শাহি জিরা, জয়ত্রী, পোস্তদানা, সয়া সস, তেল, টক দই প্রভৃতি প্রয়োজনীয় মসলা কিনে রাখুন। গুঁড়া মসলাগুলো আলাদা আলাদা কৌটায় নাম লিখে ভরে রাখুন। প্রয়োজনের সময় সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। গরম মসলা আর জিরা বেশি আলোতে না রাখা ভালো। নষ্ট বা গন্ধ হয়ে যায়।
ভেজা মসলাগুলো ব্লেন্ড করে ছোট ছোট বক্স বা আইস কিউব বক্সে রেখে বরফ করে জিপ লক ব্যাগ বা পলি ব্যাগে রেখে দিতে পারেন। প্রয়োজনের সময় একটি–দুটি মসলার কিউব দিয়ে সহজেই তরকারি রান্না সেরে ফেলতে পারবেন।
আগে থেকে পোলাওয়ের চাল কিনে রাখতে পারেন যেন দাম বাড়লেও পরিমাণমতো প্রয়োজনের সময়ে হাতের কাছে পান। এ ছাড়া চপ-কাটলেট বা পরোটা তৈরিতে আটা, ময়দা বা বেসন প্রয়োজন হতে পারে। এসব উপকরণ পোকা থেকে বাঁচাতে কয়েকটি মেথিপাতা দিয়ে রাখুন।
ঈদের কিছুদিন আগেই গ্যাসের সিলিন্ডার বা প্রিপেইড গ্যাস রিচার্জ করে রাখুন।
ব্যাগ জোগাড় করুন
কোরবানির ঈদ মানেই তো এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে মাংস বিলানো। আর এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর পলি ব্যাগ। আগে থেকেই এই ব্যাগ জোগাড় করে না রাখলে ঈদের দিন বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। নিজের বাসাতেও ডিপ ফ্রিজে মাংস, কলিজা, মগজ ইত্যাদি আলাদাভাবে রাখার জন্য পলি ব্যাগ প্রয়োজন। উচ্ছিষ্ট মাংস ও ময়লা ফেলার জন্যও মুখ আটকে রাখা যায়, এমন কিছু প্লাস্টিকের বিন ব্যাগ কিনে রাখুন।
বড় পাতিল পরিষ্কার করে রাখুন
কোরবানির সময় মাংস রান্নার জন্য প্রয়োজন হয় বড় বড় পাতিল। এগুলো সারা বছর তেমন একটা প্রয়োজন পড়ে না বলে ময়লা হয়ে থাকতে পারে। তাই এগুলো ঈদের আগেই পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখুন, ঈদের দিনের কাজ কমে যাবে। ঈদের দু–এক দিন আগেই অতিথি আপ্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বাসনকোসন ধুয়ে, মুছে নিন।
ঈদে খাবারঘরের সাজ
কোরবানির ঈদে খাওয়াদাওয়াই হলো ঈদের মূল আকর্ষণ। তাই খাবারঘরের সাজটিও আকর্ষণীয় হওয়া চাই।
খাবারঘরটা আসবাবে ঠাসা না হলেই ভালো। চলাফেরার জন্য যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। খাবারঘরের আকার–আকৃতি অনুযায়ী খাবার টেবিল বেছে নিন।
ঈদে অতিথিসমাগম বেশি থাকে। তাই খাওয়ার পরপরই টেবিল পরিষ্কার করে ফেলুন। ধোয়া প্লেট–বাটি টেবিলের ওপর না রেখে পাশে কোনো টেবিল বা ক্যাবিনেটের ওপর রাখলে ভালো হয়।
প্লেট, নাশতার বাটি, ফিরনির বাটি, চামচ—সব আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখুন। অতিথি খেতে বসার পর যেন আলমারি থেকে বাসনকোসন বের করতে না হয়।
কোরবানির ঈদে প্রচুর তেল–ঝোলের রান্না হয়ে থাকে, খাবার টেবিলে তাই গাঢ় রঙের ম্যাট ও রানার ব্যবহার করলে ভালো হবে।
খাবার টেবিলে অতিরিক্ত কোনো শোপিস না রাখাই ভালো। ছোট একটি ফুলদানিতে কিছু তাজা ফুল অথবা মোমবাতি রাখাই ভালো। অনেকে খাবার টেবিলে সুগন্ধি ফুল না রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে খাবার বা ফুল, কোনো গন্ধই ভালোভাবে পাওয়া যায় না।
আগের দিন
ঈদের আগের রাতেই কিছু রান্না করে রাখুন।
ঈদের আগের দিন রাতেই মিষ্টি কিছু পদ, যেমন পায়েস, পুডিং, কাস্টার্ড রান্না করে রাখতে পারেন। তাহলে ঈদের দিন শুধু ঝাল বা মাংসের পদগুলো রান্না করলেই চলবে। ঈদের দিন কিছুটা হলেও নিজেকে ও পরিবারকে সময় দিতে পারবেন।