যানজটের শহর ঢাকায় রাইড শেয়ারিং অনেকের জন্য ভরসার জায়গা
যানজটের শহর ঢাকায় রাইড শেয়ারিং অনেকের জন্য ভরসার জায়গা

রাইড শেয়ারিংয়ে নিজেকে নিরাপদে রাখতে যা করবেন

যানজটের শহর ঢাকায় রাইড শেয়ারিং অনেকের জন্য ভরসার জায়গা। তবে যাতায়াত সহজ হলেও মাঝেমধ্যে যাত্রীদের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়। তাই অ্যাপ ব্যবহার করার সময় নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি।

যাত্রীদের অভিজ্ঞতা

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মারিয়া হোসেন নিয়মিত উবার ব্যবহার করেন। কয়েক সপ্তাহ আগে ধানমন্ডিতে যাওয়ার পথে চালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে ঝামেলায় পড়েন তিনি। মারিয়া জানান, তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া দিতে চাইলে চালক জোর করে নগদ টাকা দাবি করেন এবং হুমকিও দেন। পরে তিনি উবার অ্যাপে অভিযোগ করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিকার পান।

আরেক যাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির হোসাইন খান (ছদ্মনাম), রাতের বেলায় রাইড শেয়ারিংয়ে সমস্যায় পড়েন। বাইকচালক ইচ্ছা করে দীর্ঘ পথে ঘুরতে থাকেন। বিরক্ত হয়ে আবির ৯৯৯ নম্বরে কল করেন এবং পরে উবার কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানান। দ্রুতই উবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।

মারিয়া ও আবিরের এসব অভিজ্ঞতা বলছে, শহুরে জীবনে রাইড শেয়ারিং আমাদের সময় বাঁচালেও নিরাপত্তা বিষয়টি অবহেলার নয়।

অ্যাপে থাকা নিরাপত্তা ফিচার

রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর কিছু নিরাপত্তা ফিচার আছে, যা যাত্রীদের জানা উচিত—

চালক ও গাড়ির তথ্য
রাইড নিশ্চিত হওয়ার পর চালকের নাম, ছবি, গাড়ির মডেল, নম্বরপ্লেট ও রেটিং দেখা যায়। যাত্রা শুরুর আগে এসব মিলিয়ে নিন।

রেটিং ও ফিডব্যাক
যাত্রা শেষে অভিজ্ঞতা জানালে খারাপ রেটিং পাওয়া চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ইন-অ্যাপ শেয়ারিং
রাইডের রুট, গাড়ির অবস্থান ও আনুমানিক পৌঁছানোর সময় বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করা যায়।

জিপিএস ট্র্যাকিং
প্রতিটি রাইড জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্র্যাক করা হয়।

এসওএস বাটন
জরুরি অবস্থায় ৯৯৯ নম্বরে কল বা সরাসরি অ্যাপ থেকেই নিরাপত্তা টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব।

অডিও রেকর্ডিং ও পিন ভেরিফিকেশন
চাইলে যাত্রাকালীন অডিও রেকর্ড করা যায়। আবার রাইড শুরু হওয়ার আগে চার সংখ্যার পিন দিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সঠিক গাড়ি বেছে নিয়েছেন কি না।

টু-ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশন
নতুন ডিভাইস থেকে লগইন করলে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
পাঠাও ব্যবহারকারীদের জন্য আছে ‘পাঠাও সেফটি’ মেনু, যেখানে রিয়েল টাইম সাপোর্ট এবং জরুরি প্রয়োজনে ১৩৩০১ নম্বরে কল করার সুবিধা রয়েছে।

নিজের নিরাপত্তার জন্য যা করবেন

তথ্যপ্রযুক্তি গবেষক মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, অ্যাপগুলোর নিরাপত্তা ফিচার কাজে লাগালেও যাত্রীদেরও সচেতন থাকতে হবে। তাঁর পরামর্শ—

  • গাড়িতে ওঠার আগে চালক ও গাড়ির তথ্য মিলিয়ে নিন।

  • ভুল গাড়িতে ওঠা থেকে বিরত থাকুন।

  • যাত্রাপথে অ্যাপে প্রদর্শিত রুট ঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, খেয়াল করুন।

  • প্রয়োজনে বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে রাইডের তথ্য শেয়ার করুন।

  • যাত্রা শেষে অবশ্যই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রিভিউ দিন।

  • সব সময় ফোনে পর্যাপ্ত চার্জ রাখুন, যাতে জরুরি সময়ে যোগাযোগ করা যায়।

শেষ কথা

রাইড শেয়ারিং আমাদের দৈনন্দিন যাতায়াতকে সহজ করেছে। তবে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য শুধু অ্যাপের ফিচারের ওপর নির্ভর না করে যাত্রী হিসেবেও সতর্ক থাকা দরকার। সচেতনতা আর সতর্ক ব্যবহারে যাতায়াত হতে পারে ঝামেলাহীন ও নিরাপদ।