অনুপ্রেরণা

‘তোমাকে কী দরকার, টেইলর সুইফট তো আছেই!’

কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বের ১০০ উদীয়মান ব্যক্তির তালিকা (টাইম হানড্রেড নেক্সট) প্রকাশ করে আসছে টাইম। ২০২৩ সালের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন মার্কিন গায়িকা কেলসি বেলেরিনি। শুধু গায়কিই নয়, গানের কথার জন্যও ৩০ বছর বয়সী এই তারকার সুনাম আছে। কেমন করে লেখালেখির ভূত তাঁর মাথায় ভর করল?

সবকিছুর কেন্দ্রে, সবকিছুর শেষে গানই কেলসি বেলেরিনির ভালোবাসা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

যুক্তরাষ্ট্রের নক্সভিলে আমি বড় হয়েছি। আমাদের ছোট্ট বাড়িটার সামনে বিরাট বড় একটা খোলা জায়গা ছিল। ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল পশুর ডাক্তার হব। কারণ, আমি ভীষণ প্রাণিপ্রেমী। গায়ক হব, গান লিখব, এসব সুদূর কল্পনায়ও ছিল না।

প্রথম গান লিখি ১৩ বছর বয়সে। সে সময় আমার মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম। পৃথিবীর সব দুঃখবোধ যেন একসঙ্গে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মনে আছে, ওপরতলায় বসে গানটা যখন লিখছি, তখন বৃষ্টি হচ্ছে। লেখা শুরুর আগমুহূর্তেও মনে হচ্ছিল, ভেতরটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। অথচ পুরো গানটা লিখে শেষ করার পর আচমকাই মনটা শান্ত হয়ে গেল। তখনই বুঝলাম, লেখালেখি আমার কাছে প্যাশনের চেয়ে বেশি কিছু। মনে হলো, জীবনের কঠিন সময়ের সঙ্গে যেন লড়াই করতে পারি, মানিয়ে নিতে পারি, সে জন্যই এ উপহার আমি পেয়েছি।

১৪ বছর বয়সে ঠিক করলাম, গায়িকা হব। নক্সভিলে ছোট্ট একটা মিউজিক কোম্পানি ছিল, নাম ন্যাশভিল। মা আমাকে ন্যাশভিলের একজন কর্মীর সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে গেলেন। তিনি বললেন, ‘তুমি কি নিশ্চিত? গানই করতে চাও?’ আমি দ্বিধান্বিত গলায় বললাম, ‘ঠিক জানি না। মনে হয়।’ তিনিই একটা মিটিংয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন।

পরদিন আমার চেয়ে বড় সাইজের একটা গিটার নিয়ে হাজির হলাম। তখনো ভালোমতো গিটার ধরতেই শিখিনি। কোনোমতে বাজালাম, গাইলাম। উল্টো দিকে বসা মানুষটার মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম, তিনি বলতে চাইছেন, ‘তোমাকে কী দরকার, টেইলর সুইফট তো আছেই!’ খুবই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলাম। বের হয়ে আসার সময় ভাবছিলাম, ‘নাহ, আমাকে দিয়ে হবে না। গানটান করব না। আর কোনো মিটিং আমি চাই না।’

মার্কিন গায়িকা কেলসি বেলেরিনি

বাড়ি ফিরে কয়েক দিন লেখালেখি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করলাম। ফল হলো উল্টো। আরও বেশি বেশি লিখতে শুরু করলাম। কদিন পর আবার গেলাম ন্যাশভিলে। এবার গান শোনানোর সময় কেন যেন মনে হলো, ‘হ্যাঁ, আমি এটাই করতে চাই।’

কীভাবে শুরু করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। প্রথমেই যেটা করলাম, ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত যাকে পেলাম, তাঁকেই ফেসবুকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো শুরু করলাম। যে কারও সঙ্গে দেখা করতে, কাজ করতে আমি প্রস্তুত ছিলাম। কারণ, এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাটা খুব দরকার ছিল। আমার বার্তাটা ছিল খুব সহজ, ‘হাই! আমি কেলসি। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারো?’

সৌভাগ্যক্রমে ব্ল্যাক রিভার এন্টারটেইনমেন্টে কাজ করেন, এমন একজনের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব ছিল। তিনি সাড়া দিলেন, ‘ঠিক আছে। আসো একদিন। দেখি কী হয়।’ মিটিং হলো। সপ্তাহখানেক পরই চূড়ান্ত হলো আমার চুক্তি।

সবাই জানত, আমি গায়ক হতে চাই। একটা গান লিখলেই ইচ্ছা হতো সবাইকে গিয়ে গিয়ে শোনাই।

স্টুডিওর আমি আর হাজারো শ্রোতার সামনে আমি—দুটি কিন্তু একদমই আলাদা মানুষ। মনে আছে, একসময় ল্যাপটপে ওয়ার্ড ফাইল খুলে বসে বসে কনসার্টেরও স্ক্রিপ্ট লিখতাম। যেমন ‘লাভ মি লাইক ইউ মিন ইট’ গানটা শেষ হলে ‘ইয়েহ বয়’ শুরু করার আগে আমি এগুলো এগুলো বলব। আসল কথা হলো, মানুষের সামনে কথা বলতে ভীষণ ভয় লাগত।

কেলসি বেলেরিনি

এখন অবশ্য অতটা করে না। জানি না, হয়তো বয়স হয়েছে বলে। কিংবা এখন হয়তো ভুল কিছু বলে ফেলার ব্যাপারে অতটা উদ্বিগ্ন নই। এখন গানেই থাকে পূর্ণ মনোযোগ।

সৃজনশীল যেকোনো কাজেই আমার আগ্রহ। নতুন যেকোনো সুযোগ কাজে লাগাতে আমি উদ্‌গ্রীব। কিন্তু সবকিছুর কেন্দ্রে, সবকিছুর শেষে গানই আমার ভালোবাসা।

সূত্র: কেলসি বেলেরিনির ইউটিউব চ্যানেল ও টাইম ডটকমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার