
ইয়াহ্ বিরিয়ানি! ইয়াহ্ বিরিয়ানি! ২৬ মার্চ দুপুরে পুরান ঢাকার গ্র্যান্ড নবাব রেস্তোরাঁয় বিরিয়ানির প্লেট সামনে রেখে যেন বিরিয়ানি খাওয়ার তর সইতে পারছিলেন না অস্ট্রেলিয়ান মাস্টার শেফের বিচারক ম্যাট প্রেস্টন। তাই খাওয়ার আগে ইয়াহ্ বিরিয়ানি বলে উচ্ছ্বসিত হচ্ছিলেন বারবার। একনাগাড়ে প্লেটের সব খাবার খেয়ে বললেন, ‘যে খাবারে দুটি শর্করা উপাদান (ভাত, আলু) থাকে, তা কি ভালো না লেগে পারে? সঙ্গে জাফরানি শরবতের প্রশংসা! জানালেন খাবারে সামান্য ঝাল ছিল, তার সঙ্গে এই মিষ্টি শরবতটি খেতে বেশ ভালো লেগেছে।
রিভোলির আমন্ত্রণে ‘মিট ম্যাট প্রেস্টন’ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন ম্যাট প্রেস্টন। ঢাকায় পৌঁছে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন খাবারের দোকানে। স্বাদ নিচ্ছেন রাস্তার ধারের দোকানের খাবারেরও। আর রাস্তাঘাটে ভক্তদের দেখা মিললে হাসিমুখে কথা বলছেন। জানতে চেয়েছিলাম কেমন লাগছে বাংলাদেশ? ‘এক্সাইটিং! এখানকার মানুষ খুবই বন্ধুসুলভ ও প্রাণবন্ত।’
এ তো এ অঞ্চলের প্রশংসা। কিন্তু খাবার কেমন? মাস্টার শেফের এই বিচারকের কাঁধেই দেওয়া হয়েছিল এ বিচারের ভার। জানালেন, ঢাকা খাবারের জন্য চমৎকার জায়গা। রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে রাস্তার ধারেও খাবার পাওয়া যায় বাংলাদেশে। এখানে যাঁরা রাঁধেন, তাঁদের জন্য রান্নার স্থানীয় অনেক উপাদান রয়েছে। ফলে অনেক ধরনের খাবার তৈরি করতে পারেন তাঁরা। খাবারে রয়েছে আভিজাত্যের ব্যাপার। খাবারে একটু টক, একটু তিতা ও হরেক রকমের ভর্তা বৈচিত্র্য এনে দেয়।
খাবারের উপাদান দেখতে ম্যাট প্রেস্টন গিয়েছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল কাঁচাবাজারে। বাজার ঘুরে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ানরা ক্রিকেট যেমন পছন্দ করে, আমি ঠিক তেমনই শাকপাতা পছন্দ করি। এই বাজারে অসংখ্য ধরনের শাক দেখে আমি মুগ্ধ।’ বাজার থেকে ম্যাট কিনলেন মাওয়া। বিরিয়ানি রান্নার কাজে নয়; দেশে ফিরে মাওয়া গুঁড়ো করে আইসক্রিম ও দইয়ের সঙ্গে খেতে। আর বিস্কুট বানানোতে মাওয়া ব্যবহার করবেন বলে জানালেন তিনি। মাছের বাজারেও যান ম্যাট, দেখেন হরেক রকমের মাছ।
এই কদিনে মাস্টার শেফের এই বিচারকের ভালো লেগেছে ঢাকার কিছু খাবার। তার মধ্যে রয়েছে পরোটা, বাকরখানি, ঢ্যাঁড়সভর্তা, চিংড়িভর্তা, বেগুনভর্তা, মাছের কোপ্তা ও মিষ্টি দই। তবে মিষ্টি দইটা ‘অ্যামাজিং’ ছিল বলেন ম্যাট প্রেস্টন। আর বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার চা-এর তেমন কোনো পার্থক্য নেই। হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেন, এ ব্যাপারটি পরীক্ষা করতে রাস্তার ধারে চা খেয়েছেন তিনি। সঙ্গে চায়ে বিস্কুট চুবিয়ে খাওয়ার ব্যাপারটা নাকি খুবই ইন্টারেস্টিং ছিল তাঁর কাছে।
সবশেষে জানালেন বাংলাদেশ ও বাইরের খাবারের সঙ্গে মূল পার্থক্য কী তা। মিষ্টি পানির অনেক মাছ পাওয়া যায় এখানে এবং রান্নায় সরিষা ও সরিষার তেলের ব্যবহার রয়েছে বেশি।
অ্যাপল টার্ট টাটিন
উপকরণ: আপেল ৬টি, ১টি লেবুর রস, ক্যাস্টর সুগার ২০০ গ্রাম, দারুচিনি গুঁড়া এক চিমটি, মাখন ২০০ গ্রাম (টুকরো করা), ভ্যানিলা আইসক্রিম অথবা ক্রিম পরিবেশনের জন্য।
প্রণালি: আপেলগুলো কোয়ার্টার করে কেটে নিন। অর্ধেক লেবুর রস ও ৫০ গ্রাম চিনির সঙ্গে মাখিয়ে কোয়ার্টার করে কেটে রাখা আপেলগুলো একটি ঝাঁঝরির মধ্যে রেখে দিতে হবে। এক ঘণ্টা রেখে দিন। বাকি চিনিটুকু একটি ওভেন প্রুফ ফ্রাইপ্যানের ওপর ছিটিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে চুলায় দিতে হবে। হালকা সোনালি রং হয়ে এলে নামিয়ে নিন। মাঝেমধ্যে ঝাঁকিয়ে নিতে পারেন। বাকি লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে প্যানটি নামিয়ে নিন আগুন থেকে। কোয়ার্টার করে কাটা আপেলগুলো প্যানের ওপর সাজিয়ে দিন। আপেলের কোনো কাটা অংশ দেওয়া না হলে ছোট ছোট করে কেটে ওপরে ছিটিয়ে দিতে পারেন। মাঝারি আঁচে ১০ মিনিট রান্না করুন। কিছু আপেল থেকে বেশি পানি বের হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ক্যারামেল খুব বেশি পাতলা হয়ে না যায়। ঘন হতে হবে। প্যানটি চুলার ওপর থেকে সরিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ওভেন প্রিহিট করে নিন।
পাফ পেস্ট্রির ময়ানটি ৩ মিলিমিটার পুরু করে বেলতে হবে। এবার ২৭ সেন্টিমিটার গোল আকারের কিছু দিয়ে গোল করে কেটে নিন। দারুচিনি গুঁড়া ওপর থেকে ছিটিয়ে দিয়ে মাখন মাখিয়ে দিতে হবে। কাঠের চামচের উল্টো পাশ দিয়ে পেস্ট্রির চারপাশ বোটে দিয়ে ওভেনে ঢুকিয়ে দিন। মাঝে একটু ফুটো করে দিন ধোঁয়া বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। ৩০ মিনিট বেক করুন হালকা সোনালি বাদামি না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। হয়ে যাওয়ার পর ওভেনের ভেতরে ১০ মিনিট রেখে দিন ঠান্ডা হওয়ার জন্য। মাঝারি আঁচে ৬০ সেকেন্ড চুলার ওপরে রাখুন যাতে ক্যারামেল থেকে টার্টটি আলগা হয়ে আসতে পারে। উপুড় করে প্যানটি থেকে বের করে নিন। ওপরে ভ্যানিলা আইসক্রিম অথবা ক্রিম দিয়ে ঠান্ডা অথবা গরম পরিবেশন করুন।