তালের শাঁস খেয়েছেন নিশ্চয়ই এত দিন। এবার পাকা তালের পিঠা-ক্ষীর খাবার সময়। তালের কয়েক পদের রেসিপি দিয়েছেন ফাতিমা আজিজ।

তালের মালাই পিঠা
উপকরণ: পিঠার জন্য: তালের ক্বাথ ১ কাপ, চিনি আধা কাপ, সাদা আটা ২ কাপ, নারকেল (কোরানো) আধা কাপ, খাওয়ার সোডা ১ চা-চামচ, লবণ ১ চিমটি, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেল ভাজার জন্য, দুধ পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেল বাদে অন্যান্য উপকরণ একত্রে মিশিয়ে মেখে আধা ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিন। কড়াইয়ে তেল গরম হলে তাল-পোস্ত পিঠার মতো একই নিয়মে ভেজে দুধের মালাই ক্ষীরে পিঠাগুলো ভিজিয়ে দিন। কয়েকবার ফুটে উঠলে নামাতে হবে।
দুধ-মালাইয়ের উপকরণ: দুধ (২ লিটার দুধকে ঘন করে জ্বাল দিয়ে) ১ লিটার, চিনি সিকি কাপ, গুড়ের বাতাসা ২৪০ গ্রাম, এলাচি গুঁড়া সিকি চা-চামচ, মাওয়া আধা কাপ, ক্রিম ১৭০ গ্রাম বা এক কৌটা, বাদাম ও পেস্তা কুচি দেড় টেবিল চামচ, কাজু বাদাম কুচি দেড় টেবিল চামচ।
প্রণালি: দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন হয়ে এলে বাতাসা এবং মাওয়া দিয়ে নাড়ুন। এবারে কাজ বাদাম কুচি ও অর্ধেক বাদাম-পেস্তা কুচি দিয়ে নেড়ে নিন। হয়ে গেল মালাই ক্ষীর। এবার গরম পিঠাগুলো এতে ছেড়ে দিয়ে নাড়ুন। এবার চিনি দিয়ে আরও কিছু মাওয়া এবং এলাচ গুঁড়ো দিয়ে আলতোভাবে নাড়ুন যেন পিঠা না ভাঙে। নামানোর আগে ক্রিম দিয়ে হালকা নেড়ে তারপর বাটিতে ঢেলে দিন। ওপরে অবশিষ্ট-বাদাম পেস্তা কুচি ছিটিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন তালের মালাই পিঠা।
তাল-পোস্ত পিঠা
উপকরণ: তালের ঘন ক্বাথ ১ কাপ, চিনি দেড় কাপ, আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, ময়দা আধা কাপ, পোস্তদানা ২ টেবিল চামচ, কোরানো নারকেল ১ কাপ, খাওয়ার সোডা ১ চা-চামচ, ফেটানো ডিম ১টি, ঘন দুধ ১ কাপ, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, মাখন ২ টেবিল চামচ, লবণ ১ চিমটি, তেল ভাজার জন্য।
প্রণালি: চালের গুঁড়া, ময়দা, লবণ, গুঁড়া দুধ এবং খাওয়ার সোডা একত্রে মিশিয়ে নিন। বড় বাটিতে তালের সঙ্গে চিনি, ডিম এবং মাখন মিশিয়ে ভালো করে ফেটে নিন। এবারে কোরানো নারকেল ও দুধ মিশিয়ে নিন তালের মিশ্রণের সঙ্গে। এতে অল্প অল্প করে চালের গুঁড়া ও ময়দার মিশ্রণ মিশিয়ে ঘন মসৃণ গোলা তৈরি করে এক ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিন। গোলার ঘনত্ব অনুযায়ী চালের গুঁডা এবং ময়দার মিশ্রণ কম-বেশি লাগতে পারে। গোলার ঘনত্ব পিঠা তৈরির আন্দাজমতো হলে পোস্তদানা ছিটিয়ে মিশিয়ে তারপর ঘণ্টা খানেক ঢেকে রেখে দিন। কড়াইয়ে তেল গরম হলে গোলার মিশ্রণ পুনরায় মিশিয়ে ১ টেবিল চামচ করে কয়েকটি গোলা ছেড়ে দিন। মৃদু আঁচে লালচে করে ভেজে তেল ছেঁকে উঠিয়ে টিস্যু পেপার বা কিচেন টাওয়েলে রাখুন। এভাবে সবগুলো পিঠা ভেজে তুলুন। পরিবেশন পাত্রে সাজিয়ে পরিবেশন করুন তাল-পোস্ত পিঠা। ইচ্ছা করলে রোস্টেড পোস্তদানা ছিটিয়ে পরিবেশন করা যেতে পারে।
তিল-তাল ক্ষীর
উপকরণ: তালের ঘন ক্বাথ ১ কাপ, ঘন দুধ ১ লিটার, কোরানো নারকেল ১ কাপ, রোস্টেড সাদা তিল গুঁড়া বা বাটা ২ টেবিল চামচ, বাদাম, পেস্তা ও কাজু কুচি ২ টেবিল চামচ, চিনি দেড় কাপ, ঘি সিকি কাপ ও ১ টেবিল চামচ, রোস্টেড সাদা তিল দেড় টেবিল চামচ।
প্রণালি: এক লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে দেড় কাপ করুন। বাদাম ও পেস্তা কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে কুচি করে নিন। ফ্রাইপ্যানে ঘি গরম করে আঁচ কমিয়ে ১ টেবিল চামচ রোস্টেড সাদা তিল বাটা ফোড়ন দিন। এতে ঘি দিয়ে নেড়ে তালের ক্বাথ দিয়ে মাঝারি আঁচে অনবরত নাড়ুন। দু-একবার ফুটে উঠলে কোরানো নারকেল, ঘন দুধ ও চিনি দিয়ে অনবরত নাড়ুন। ঘন হয়ে যখন তালের সুগন্ধি বের হবে তখন আঁচ কমিয়ে বাকি রোস্টেড বাটা তিল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নাড়ুন। এবার ১ টেবিল চামচ বাদাম, পেস্তা ও কাজু কুচি দিয়ে নেড়ে পরিবেশন পাত্রে ঢেলে নিন। ওপরে বাকি ১ টেবিল চামচ ঘি ছড়িয়ে রোস্টেড সাদা তিল ও অবশিষ্ট বাদাম, পেস্তা ও কাজু কুচি ছিটিয়ে দিন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন তিল-তাল ক্ষীর।
তালের পাটিসাপটা
উপকরণ: ব্যাটারের জন্য: ময়দা ১ কাপ, ঘন দুধ ১ কাপ, চিনি ৬ চা-চামচ, ছোট এলাচ গুঁড়া আধা চা-চামচ, ডিম ১টি, লবণ ১ চিমটি, মাখন বা ঘি ২ চা-চামচ।
ক্ষীর বা পুরের জন্য: তালের ক্বাথ ১ কাপ, নারকেল (কোরানো) ১ কাপ, ঘন দুধ ১ কাপ (আধা লিটার দুধকে জ্বাল দিয়ে), চিনি আধা কাপ, এলাচ গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাজু, কিশমিশ ও পেস্তা কুচি ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, তেল ব্রাশ করার জন্য।
প্রণালি: পুরের সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে অল্প আঁচে চুলায় দিন। অনবরত নাড়তে থাকুন। আঠালো হলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। ব্যাটারের সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে মসৃণ ব্যাটার তৈরি করে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিন।
ননস্টিক ফ্রাইপ্যানে তেল ব্রাশ করে নিন। প্যান গরম হলে ১ চামচ করে ময়দার গোলা বা ব্যাটার দিয়ে দিন। প্যান ঘুরিয়ে গোলা রুটির মতো পাতলা ও বড় করুন। এবার তাতে পুর দিয়ে রোল করে নিন। এপিঠ-ওপিঠ সেঁকা ভাজা হলে নামিয়ে নিন তাল ক্ষীরের তালের পাটিসাপটা।
তাল-চিড়ার নাড়ু
উপকরণ: চিড়া আধা কেজি, তেজপাতা ১টি, আখের গুড় ৮০০ গ্রাম, ভাজা জিরা আধা চা-চামচ, তালের ক্বাথ আধা কাপ (কমও লাগতে পারে)।
প্রণালি: চিড়া ভালো করে কাপড়ে ছেকে নিন যেন কোনো বালু না থাকে। শুকনো খোলায় চিড়া টেলে নিন। বড় একটি ফ্রাইপ্যান বা কড়াইয়ে তেজপাতা, গুড় এবং তালের ক্বাথ একত্রে মিশিয়ে জ্বাল দিন। গুড় এবং তালের ক্বাথ ফুটে ওঠার পর তাতে জিরা এবং চিড়া দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন। চুলা থেকে নামানো মাত্রই দুহাত ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে নাড়ু বানিয়ে নিন। অল্প অল্প করে গুড়, তাল, চিড়ার মিশ্রণ হাতের তালুতে নিয়ে গোল করে নাড়ু তৈরি করতে হবে। প্রতিবারই হাত দুটো ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নেবেন। গরম অবস্থায় নাড়ু না বানালে নাড়ু তৈরি হবে না। ঠান্ডা হয়ে গেলে মুঠ করে নাড়ু বানানো যাবে না। চিড়াগুলো খুলে খুলে যাবে।