কাঁচা আম খেয়েও ওজন বাড়ছে না তো?

কাঁচা আমের লোভনীয় স্বাদে জিবে আসে জল। কুচি করা কাঁচা আম লবণ-মরিচ কিংবা কাসুন্দি দিয়ে মাখিয়ে খাওয়া হয় গরমের দিনগুলোয়। অনেক বাড়িতেই রান্না হয় আমের টক, আম-ডাল কিংবা বাহারি আমের আচার। কাঁচা আমের শরবতে প্রচণ্ড গরমে প্রাণের তৃষ্ণা মেটে। কাঁচা আমের পুষ্টিগুণও দারুণ। এমনিতে টক স্বাদের ফল খেলে ওজন বাড়ে না। তবে টক ফলটাকে খাওয়ার উপযোগী করে তুলতে গিয়ে আমরা তাতে যেসব উপাদান যোগ করি, তাতে ওজন বাড়ার ভয় থাকে।

কাঁচা আমের পুষ্টিগুণও দারুণ
ছবি: প্রথম আলো

গভর্নমেন্ট কলেজ আব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার জানালেন, কাঁচা আমে রয়েছে প্রয়োজনীয় নানান ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, ফোলেট এবং কপারের মতো উপাদান পাওয়া যায়। সুস্থ থাকতে আমাদের যা রোজই প্রয়োজন। কাঁচা আমে আরও রয়েছে খানিকটা শর্করা এবং বেশ কিছুটা আঁশ। এক কাপ পরিমাণ কাঁচা আম থেকে ১০০–এরও কম ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই কেবল কাঁচা আম খাওয়া হলে ওজন বাড়ে না।

বিপত্তি যেখানে

খাওয়ার উপযোগী করে তোলার জন্য কাঁচা আমের সঙ্গে অনেকেই চিনি যোগ করেন। তাতেই ক্যালরির মোট পরিমাণ বাড়ে। বাড়ে ওজন বাড়ার ঝুঁকি। চিনির বিকল্প হিসেবে মধু বা গুড় যোগ করলেও লাভ নেই। এগুলোতেও ক্যালরির পরিমাণ বেশ খানিকটা বাড়বে। মুশকিলটা হলো চিনি, গুড় বা মধু কোনোটিই যোগ করা না হলে শুধু কাঁচা আম খাওয়া অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তবে কেবল ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যই নয়, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকেই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হিসেবে চিনি, গুড় বা মধু কম পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত, এমনটাই বলছিলেন ফাতেমা আকতার। তাই কাঁচা আমের সঙ্গে এগুলো যোগ করলেও অবশ্যই পরিমাণটা অল্প রাখুন।

কাঁচা আমের সঙ্গে লবণের পরিমাণও কম রাখা উচিত

লবণেও বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি

লবণ যোগ করা হয় কাঁচা আমের সঙ্গে। বিট লবণ, পিংক সল্ট প্রভৃতিও কিন্তু লবণ। এগুলো তাই সাদা লবণের বিকল্প নয়। কাসুন্দিতেও লবণ থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে বাড়ে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি। তাই কাঁচা আমের সঙ্গে লবণের পরিমাণও কম রাখা উচিত।

যেভাবে হারিয়ে যায় কিছু পুষ্টি উপাদান

• তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁচা আমের চাটনি, আচার, আম-ডাল প্রভৃতি রান্নাজাতীয় পদ থেকে আপনি ভিটামিন সি পাবেন না।

• রান্নার সময় বাষ্পের সঙ্গে ভিটামিন বি৬ এবং নায়াসিনও হারিয়ে যেতে পারে।

• শরবত তৈরি করা হলে আপনি আঁশের উপকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

কাঁচা আম পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। গরমে আরাম পেতে কাঁচা আমের নানা পদ খাওয়া যেতেই পারে। তবে সুস্থতার জন্য অবশ্যই চিনি ও লবণের পরিমাণ কম রাখুন। ঝিরি ঝিরি কুচি করে বিভিন্ন মসলা দিয়ে মাখিয়ে খেতে পারেন কাঁচা আম, যেটিকে সাধারণভাবে আমভর্তা বলা হয়। খুব পাতলা করে কাটা হলে চিবানোর সময় দাঁতে কম টক অনুভূত হয়। ফলে অতিরিক্ত চিনি বা লবণের প্রয়োজন পড়ে না। লবণ-চিনির ব্যবহার আরও কমিয়ে আনতে শরবত করেও খেতে পারেন কাঁচা আম। তাতে আঁশ ছাড়া অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ঠিকই পাবেন।