কীভাবে মসলা খাওয়া ভালো

মসলায় বাড়ে খাবারের স্বাদ। পুষ্টিও মেলে। আবার মসলার ভুল ব্যবহার অসুস্থতারও কারণ হয়ে ওঠে। জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন ধরনের মসলার ভালো–মন্দ নানা দিক।

মসলায় বাড়ে খাবারের স্বাদ। পুষ্টিও মেলে খানিক। আবার মসলার ভুল ব্যবহার অসুস্থতারও কারণ হয়ে ওঠে। মসলায় যদি থাকে অস্বাস্থ্যকর উপাদান, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার ঝুঁকি আরও বাড়ে। চলুন, ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরীর কাছ থেকেই জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন ধরনের মসলার ভালো–মন্দ নানা দিক।

মসলায় বাড়ে খাবারের স্বাদ

বাটা মসলা

বাটা মসলার স্বাদটা একেবারেই আলাদা। এমনকি ব্লেন্ডারে মিহি করে নেওয়া মসলাও বাটা মসলার মতো সুস্বাদু হয় না। স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও বাটা মসলা অনেক বেশি নিরাপদ। বাটা মসলা অল্প পরিমাণে ব্যবহার করলেই খাবারের রং হয় সুন্দর। বাটা মসলায় রাসায়নিক উপাদান থাকার ঝুঁকি নেই। বাড়িতে মসলা বেটে নিতে পারেন। ছোট ছোট খোপ করা মুখবন্ধ পাত্রে করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দেওয়া হলে বেশ কয়েক দিন ব্যবহার করা যায়। তবে দীর্ঘদিন এভাবে মসলা রেখে দেওয়াও উচিত নয়। যাঁরা প্রায়ই অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য বাটা মসলার রান্না সবচেয়ে ভালো।

গুঁড়া মসলার ব্যবহারে খাবারের রংও হয় চমৎকার

গুঁড়া মসলা

গুঁড়া মসলায় রান্না করা তুলনামূলক সহজ। আলাদাভাবে মসলা তৈরির ঝামেলাও থাকে না। গুঁড়া মসলার ব্যবহারে খাবারের রংও হয় চমৎকার। তবে বাজারের সব গুঁড়া মসলার মান এক নয়। মসলা মানসম্মত না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। কখনো কখনো সন্দেহ করা হয়, মসলার গুঁড়ায় হয়তো অন্য কোনো কিছুর গুঁড়া দেওয়া হয়েছে। যদি মসলায় এমন কিছু মেশানো থাকে, তাহলে পেটব্যথা বা অ্যাসিডিটির মতো কিছু সমস্যা তো হতেই পারে, তা ছাড়া ক্ষতি হতে পারে লিভার বা কিডনির। বুঝতেই পারছেন, গুঁড়া মসলা খেতে চাইলে সেটির মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কতটা জরুরি। প্রয়োজনে গোটা মসলা কিনে এনে নিজে পরিষ্কার করে নিয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। এরপর নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে পেশাদার ব্যক্তিকে দিয়ে গুঁড়া করিয়ে নিন। এভাবে আপনি পাবেন নিরাপদ গুঁড়া মসলা।

কাটা মসলাও স্বাস্থ্যকর

কাটা মসলা

কাটা মসলাও স্বাস্থ্যকর। তবে এ ধরনের পদে তেলের পরিমাণ বেশি দেওয়া হয়ে থাকে। বেশি তেলের রান্না স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাতেও অ্যাসিডিটি বাড়ে। আর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তো রয়েছেই।

আদা-রসুন-পেঁয়াজ

আদা, রসুন বা পেঁয়াজের মতো উপকরণ কেটে কিংবা বেটে রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। কেটে ব্যবহার করলে যিনি এগুলো খেতে পছন্দ করেন না, খাওয়ার সময় তিনি তা সরিয়ে ফেলতে পারেন। বেটে দেওয়া হলে খাওয়ার সময় অবশ্য আলাদাভাবে তা দাঁতে পড়ে না। বাটা পেঁয়াজে ঝোল হয় চমৎকার। রসুন আর আদাবাটায় ঝোল ঘন হয়। মনে রাখবেন, এসব মসলার খোসা ছাড়ানো বা কাটার পর দ্রুত ব্যবহার করে নেওয়া উচিত। আদা-রসুন অবশ্য দু-তিন দিনের জন্য ডিপ ফ্রিজে রাখা যায়।

আদা, রসুন বা পেঁয়াজের মতো উপকরণ কেটে কিংবা বেটে রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন

কতটা মসলা দেবেন

যেকোনো নিরাপদ মসলাও অতিরিক্ত ব্যবহার করা হলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে। অনেক বেশি পরিমাণে মসলার ব্যবহারে খাবারের স্বাদও নষ্ট হয়। তাই মসলা ব্যবহারে পরিমিতিবোধ থাকা জরুরি। রোজ একই ধরনের খাবার খেতে হলে একঘেয়েমি চলে আসতেই পারে। তাই হালকা মসলায় রান্না করা যায়, এমন দেশি বা বিদেশি পদ তৈরি করতে পারেন মাঝেমধ্যে। মসলার প্রয়োগবিধিও হওয়া চাই ঠিকঠাক। যেমন সরাসরি গরম তেলে গুঁড়া মসলা দিলে খাবারটা সুন্দর দেখায় না। হালকা মসলার রান্না সুন্দরভাবে পরিবেশন করলে পরিবারের সব বয়সী সদস্যই তাতে আগ্রহ পাবেন, থাকবেন নিরাপদ।