Thank you for trying Sticky AMP!!

দুজন দুজনার কত যে আপন

সংগীতশিল্পী এস আই টুটুল ও অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। ভালোবেসে বিয়ে করেন ১৯৯৯ সালের ১৯ জুলাই। সেই হিসাবে ১৭ বছর পার করতে যাচ্ছেন দুজনে। ভালো-মন্দে এই দম্পতি দিল্লিকা লাড্ডু খাওয়ার গল্প বলেছেন অধুনার পাঠকদের জন্য।

১৭ বছর ধরে এভাবে পরস্পরের পাশে থেকে চলছেন টুটুল ও তানিয়া দম্পতি। ছবি: খালেদ সরকার

১৯৯৮ সালের শেষ দিকের ঘটনা। একদিন সন্ধ্যায় ছেলে আর মেয়েটি হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি সমুদ্রপাড়ে। হঠাৎ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছেলেটি বলল—তোমাকে একটা ‘সিরিয়াস’ কথা বলতে চাই।
—সিরিয়াস? হুম বলো।
—আমার চোখের দিকে তাকাও, তারপর বলছি।
মেয়েটি চট করে ছেলেটির চোখের দিকে তাকাল। চোখে পলকও ফেলছে না। ভয়ে ছেলে নিজেই চোখ সরিয়ে নিল।
এরপর একনিশ্বাসে বলল—আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
কথাটা শুনেই মেয়েটা ‘হাঁ’ হয়ে গেল। এরপর কোনো কথা না বলে সোজা রুমে। তিন দিন সময় নিয়ে হ্যাঁ বলছিল মেয়েটি।
তবে বিয়েটা তাঁরা করেছিলেন পরের বছরের ১৯ জুলাই। ‘অতঃপর তাহারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল।’ এবার ১৭ বছর পার হতে যাচ্ছে। সিনেমার কাহিনীর মতো জীবন শুরু করা এই গল্প তারকা দম্পতি এস আই টুটুল ও তানিয়ার। সেবার এলআরবির এক মাসের একটি সফরে উপস্থাপক হিসেবে সঙ্গে গিয়েছিলেন তানিয়া আহমেদ। সেখানেই ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছিলেন সেই সময়ের এলআরবি সদস্য টুটুল। আর এই কাজে ‘বস’ আইয়ুব বাচ্চুর চোখ এড়াতে টুটুলকে সাহায্য করেন তাঁর বন্ধু রিয়াদ। তা-ও রীতিমতো আলো জ্বালিয়ে-নিভিয়ে সংকেত দিয়ে। প্রেমের পর অবশ্য বসকেই সবার আগে জানিয়েছিলেন এস আই টুটুল। এরপর বসের পরামর্শে দেশে ফিরে কিছুদিন চেনা-জানা (প্রেম), তারপর বিয়ে।
একসঙ্গে ভালো-মন্দ মিশিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন বছরগুলো। উত্তরায় বসে সেসব কথা শুনছিলাম দুজনের মুখে। নস্টালজিক হয়ে দুজনে কখনো ফিরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দিনগুলোয়। তানিয়া বলেন, ‘আমি খুবই লাকি যে টুটুলের মতো একজন সঙ্গী পেয়েছি। একজন ভালো বাবা, একজন ভালো বন্ধু আবার একজন ভালো স্বামী, একসঙ্গে এত গুণ কারও মধ্যে পাওয়া তো ভাগ্যেরই।’

এস আই টুটুল

তানিয়া যেমন বোঝেন টুটুল কথা বলতে গিয়ে তোতলাচ্ছেন, তার মানে সে রেগে যাচ্ছে। টুটুল আবার যেমন অনেকদিন খেয়ালই করেননি যে তানিয়া হাতঘড়ি পরছেন না। তবে টুটুল এটাও জানেন খুব বেশি কষ্ট পেলে তানিয়া বাথরুমে ঢুকে কাঁদবে। বোঝাপড়ার এই জায়গাটা দুজনেই খুব উপভোগ করেন। টুটুল বলেন, ‘একসঙ্গে চলতে গেলে ভুলত্রুটি হবেই। তবে সবার আগে পরিবার, এ কথাটা মাথায় রাখলে সামনে চলাটা বাঁধা না। ব্যস্ততা থাকবে, পরিবারকেও সময় দিতে হবে।’
পরিবারের কাছে যেতে এবারও ঈদে টুটুল-তানিয়া চলে যাবেন কুষ্টিয়া। সেখানেই ঈদের ছুটি কাটাবেন টুটুলের ভাইবোনদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ জন একসঙ্গে। তানিয়া বলেন, ‘বাড়িতে অনেকের জন্যই কেনাকাটা করার আছে। সময় করে সেসবও করতে হবে।’

তানিয়া আহমেদ

কথার এক ফাঁকে দুজনের কাছে আলাদাভাবে অন্য জনের ভালো-মন্দ নিয়ে ১০টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই। যেখানে টুটুল সম্পর্কে তানিয়া ১০টা প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দেন। আর টুটুল দশের মধ্যে ভুল করেন তিনটি। তবে এটুকু ভুলে তাঁদের কিছু যায় আসে না। নম্বর দেখে দুজনেই হেসে বলেন, বলেছিলাম না ভালো-মন্দ মিলিয়েই জীবন!

তানিয়ার চোখে টুটুল
যা কিছু ভালো: একজন ভালো মানুষের ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’। হোক সেটা স্বামী হিসেবে, বাবা হিসেবে, বন্ধু বা ভাই হিসেবে। সবাই তাকে ভালোবাসে। পেশার প্রতি ওর শ্রদ্ধা খুব বেশি। সন্তানদের সঙ্গে সখ্য ভালো। খুব সহজে রাগে না। ভুল করলে সেটা মেনে নিয়ে শোধরানোর চেষ্টা করে। কখনো হতাশায় ভুগলে সে খুব আন্তরিকভাবে পাশে থাকে। ফলে কাজটা সহজ হয়ে যায়।

সমালোচনা: পারিবারিক যেকোনো কাজে সময় নিয়ে তার গড়মিল হবেই। আজকাল রাগটা বেড়েছে। একদমই পোশাক বা ফ্যাশনসচেতন না। বাছবিচার ছাড়া যেটা পায় সেটাই পরে ফেলে।

টুটুলের চোখে তানিয়া
যা কিছু ভালো: সন্তানদের পড়াশোনা, বাসার বাজার, দেয়ালের রং—সবটাই তানিয়া ঠিক করে। আমার ভুলগুলো সে সহজেই মাফ করে দেয়। মন খারাপ করে কখনো ভাত না খেয়ে বসে থাকে না। আমাকে সাহস জোগায়। খুব ভালোবাসে। তার ভাবনা আমাদের পুরো পরিবার নিয়ে। ছোট থেকে বড় সবাইকে সে সহজে আপন করে নিতে পারে। পেশাগত জীবনে একজন অভিনেত্রী হিসেবে সে খুব ভালো।
সমালোচনা: তানিয়ার সমালোচনা করাটা মুশকিল। তবে সে ভবিষ্যৎ বা টাকাপয়সা নিয়ে বেশি ভাবে না। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারে না।