Thank you for trying Sticky AMP!!

ভালো বাবা-মা হতে চাইলে

সন্তানের পরিপূর্ণ শারীরিক আর মনোসামাজিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ বলে থাকেন ‘বাবা-মায়ের আবার ধরন কী’, ‘বাবা-মা মানেই বাবা-মা’। কথাটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। সন্তানের প্রতি আচরণ আর দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে বাবা-মায়ের ধরনকে অনেক ভাগে ভাগ করা যায়।

সব বাবা-মা–ই চান সন্তানের মঙ্গল হোক। কিন্তু তাঁদের এই চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে সব সময় যে তাঁরা ঠিক পথে চলেন তা নয়—নিজের মনের অজান্তেই, সন্তানের মঙ্গল হওয়ার বদলে অনেক সময় তার বিকাশে বিঘ্ন ঘটাতে পারে বাবা-মায়ের আচরণ। সন্তান যখন ছোট থাকে, তখন তার খাবার, ঘুম, জ্বর–সর্দি নিয়েই তাঁদের ভাবনা। কিন্তু সেই সন্তান যখন বড় হতে থাকে, তখন ভাবনাচিন্তার ডালপালা অনেকখানি বড় হয়ে যায়। সে স্কুলে কাদের সঙ্গে মিশছে? বন্ধুরা কেমন? সে আবার নেশার খপ্পরে পড়ছে কি না? বন্ধুদের সঙ্গে তাকে ঘুরতে যেতে দেওয়া ঠিক কি না—এমনি নানান জিজ্ঞাসা বাবা-মার মনে উঁকি দেয়।

সন্তানদের এই বড় হওয়ার সময়টা বেশ সতর্কতার সঙ্গে নাড়াচাড়া করতে হবে বাবা-মাকে। তবে এজন্য তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে কিন্তু সন্তানের জন্মের পরপরই। যেটাকে বলা হয় ‘গুড প্যারেন্টিং’ বা সন্তান লালন–পালনের আদর্শ কৌশল। সত্যিকার অর্থে ভালো মা–বাবা হতে চাইলে কী করতে পারেন।

 ভালো বাবা-মা হতে চাইলে কী করবেন

* সন্তানের প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন। তাকে ভালোবাসছেন অথচ তা প্রকাশ করছেন না, এমনটা যেন না হয়।

* সন্তানের কথাগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। তাকে তাচ্ছিল্য করবেন না।

* ‘গুণগত সময়’ দিন। অর্থাৎ যতটুকু সময়ই তার সঙ্গে থাকছেন না কেন সে সময়টুকু শুধু তাকেই দিন।

* সফলতার পাশাপাশি জীবনে ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়ার মতো করে তাকে তৈরি করুন। তার কোনো ব্যর্থতাকে সমালোচনা-বিদ্রূপ করবেন না। সন্তানের ছোটখাটো সাফল্যকেও উদ্‌যাপন করুন।

* তার সামনে কোনো অপরাধ করা বা অপরাধের পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। তাকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হলে বাবা–মা নিজেরা মিথ্যা বলবেন না, আইন ও নিয়ম ভাঙবেন না (যেমন: রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে গাড়িতে যাবেন না, লিফটের সামনে বা বেতন দেওয়ার লাইন ভেঙে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না)

* তার ওপর অযথা চাপ তৈরি করবেন না-‘তোমাকে এটা পারতেই হবে’, এ ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ তাকে দেবেন না।

* তাকে কোনো অবস্থাতেই মারবেন না, তীব্র কটাক্ষ করে বকবেন না, প্রয়োজনে বুঝিয়ে বলুন।

* অন্য কারও সঙ্গে সন্তানের তুলনা করবেন না, তাকে অহেতুক সন্দেহ করবেন না

* গোপন নজরদারি করবেন না, প্রয়োজনে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন।

* তার ভালো কাজের প্রশংসা করুন, অপছন্দের কাজ করলে একটা পর্যায় পর্যন্ত সেটির প্রতি গুরুত্ব দেবেন না।

* সন্তানের সঙ্গে ক্যারম বা লুডুসহ বিভিন্ন খেলা খেলুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিবারের সবাই মিলে বেড়াতে যান। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে সন্তানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।

* সন্তানের মোবাইল ফোন বা ট্যাব ব্যবহার সীমিত করুন। প্রয়োজনে আপনি নিজেও মোবাইল ফোন বা ট্যাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার কমিয়ে দিন।

* পরিবারে সবাই অন্তত একবেলা একসঙ্গে বসে খাদ্য গ্রহণ করুন। সন্তানকে নিজের হাতে খেতে উৎসাহিত করুন। সে কম খায় এই অজুহাতে তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেবেন না।

* সন্তানকে কখনোই একই আদেশ বা নির্দেশ বারবার দেবেন না।

* তার বন্ধুদের গুরুত্ব দিন। ভালো বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে উৎসাহিত করুন। তবে পরিষ্কার ধারণা রাখুন সে কাদের সঙ্গে কোথায় যাচ্ছে, কার বাসায় রাত কাটাচ্ছে।

* স্কুলগামী সন্তানের স্কুলের বই শিশুকেই পড়তে দিন। আপনি তার পড়ার বই মুখস্থ করবেন না। স্কুলের বই–ব্যাগ তাকেই সাজাতে দিন। স্কুল থেকে সে যেন নিজের পড়া নিজেই তুলে নিয়ে আসে। তার বই-ব্যাগ গোছানো থেকে বিরত থাকুন, স্কুলের পড়া আপনি সংগ্রহ করবেন না।

* সন্তানের সামনে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য বা তার শিক্ষকের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। বাবা-মা একে অপরকে ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ বা নিন্দা করবেন না, তর্কে জড়াবেন না।

* বয়স অনুযায়ী তার শারীরিক পরিবর্তন আর নিরাপত্তা নিয়ে ধারণা দিন।

* সন্তানের আচরণে কোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা লক্ষ করলে মনোবিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আহমেদ হেলাল
সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।