অনেক পরিবারেই বউ–শাশুড়ির মধ্যে একটা ‘শীতল যুদ্ধ’ চলতে দখা যায়। কোনো একটা বিশেষ কারণে নয়, হয়তো ছোট্ট একটা ঘটনা থেকেই দিনের পর দিন সম্পর্কটা তিক্ত হতে থাকে। অথচ ওই শাশুড়ি যেমন নিজের সন্তানদের ভালোবাসেন, বউও তাঁর বাবা–মাকে ভালোবাসেন। তাহলে শ্বশুরবাড়িতে এসে কেন পাল্টে যায় সেই রূপ!
২০১৯ সালে কলকাতার পরিচালক প্রিথা চক্রবর্তী বউমা আর শাশুড়ির এই সাপে–নেউলে সম্পর্ক নিয়ে একটি চলচ্চিত্র বানিয়েছেন ‘মুখার্জী দার বউ’ নামে। সেখানে তিনি বেশ কয়েকটি বিষয় দেখিয়েছেন।
মাছের পেটি খেতে ভালোবাসা মেয়েটি শ্বশুরবাড়িতে এসে প্রথম দিন খেতে বসে পেল মাছের আরেকটি অংশ। তার চোখের সামনে দিয়ে পেটি চালান হয়ে গেল অন্য প্লেটে। কিংবা শাশুড়িকে শিক্ষা দিতে বউমার আরেকটি টিভি কিনে আনার মতো দৈনন্দিন নানা ঘটনা। স্বামীর ডায়াবেটিস আছে, তাই স্ত্রী মিষ্টি থেকে তাকে দূরে রাখে। আর মা চেষ্টা করে ছেলের চায়ে দুই চামচ বেশি চিনি দিতে। দুজনই যা করছে হয়তো মানুষটাকে ভালোবেসে করছে, কিন্তু দিন শেষে তারা (বউ–শাশুড়ি) একজন আরেকজনের কাছে হচ্ছে চক্ষুশূল। শেষে অবশ্য নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে মুখার্জি বাড়ির বউ–শাশুড়ি হয়ে যায় ভালো বন্ধু।
কিন্তু বাস্তবে আর কটা পরিবারে ভুল শুধরানোর মতো উদাহরণ চোখে পড়ে। অনেক সময় এই রেষারেষির জাঁতাকলে ভাঙন ধরে সংসারে। ছেলে হয়তো বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান। কোনো পরিবার মাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের মতো ঘটনাও ঘটে এই তুচ্ছ বিষয়গুলো থেকে। তাই এমন পরিস্থিতি ঘটার আগে দুজনেরই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বউ হিসেবে কীভাবে মোকাবিলা করবেন এমন পরিস্থিতি, সে পরামর্শ থাকছে এখানে।
শুরুতেই আপনি এমন একটি স্থান নির্বাচন করুন, যেখানে আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না। এরপর সেখানে বসে নোট নিন, কোন কোন বিষয়গুলো শাশুড়ির সঙ্গে আপনার নিয়মিত ঘটছে। যদি ছোট কোনো ঘটনাও আপনার মনে দাগ কাটে, সেটা টুকে ফেলুন। লেখা বিষয়গুলো যাচাই করে দেখুন আপনার সঙ্গে ঘটা সব কটি বিষয় যৌক্তিক কি না। কোনো ঘটনায় নিজের দোষ থাকলে সেটাও বিবেচনায় রাখুন।
শাশুড়ির অবস্থানও বিবেচনা করুন
আপনি হয়তো আপনার শাশুড়ির কাছ থেকে যেমন ব্যবহার আশা করছেন, সেটা পাচ্ছেন না। তাঁর কাছে থেকে যেটা আশা করছেন, তিনি ঘটাচ্ছেন তার উল্টোটা। এমন পরিস্থিতিতে আপনার শাশুড়ির দিকটা বিশেষ বিবেচনায় রাখুন। তিনি যে সমাজ বা পরিবারে ছিলেন বা আছেন, সেখানকার পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি দুই রকম হতেই পারে। তাই বলে তাঁকে হাস্যকরভাবে তুচ্ছ করে ফেলবেন না। বরং তাঁকে সময় দিন পরিস্থিতি বুঝে নিতে।
শাশুড়ি যদি আপনার সংসারে থাকেন, তাহলে তিনি অনেক বিষয় না–ও বুঝতে পারেন। আবার আপনি যদি শ্বশুরবাড়িতে থাকেন, সেখানকার বিষয়গুলো আপনার বেড়ে ওঠার সঙ্গে না–ও মিলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সংঘর্ষ এড়িয়ে শাশুড়িকে বুঝতে হবে বউয়ের দিকটাও। তাঁকে কিছু বিষয় বুঝিয়ে নিতে পারেন।
কোনো কারণে আপনার যদি শাশুড়ির সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক হয়, তাহলে একবার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করুন। একবার শাশুড়ির অবস্থানে নিজেকে বসিয়ে ভাবুন, কোন পরিস্থিতিতে তিনি খারাপ ব্যবহার করছেন। অনেক সময় পরিবারে বা দূরের কোনো আত্মীয়স্বজন তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বানোয়াট গল্পে কান ভারী করতে পরে। বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করুন। সবকিছুর পরও যদি মনে হয় আপনি সঠিক, তাহলে শাশুড়ি যে ভুল করেছেন, সেটা তাঁকে বুঝিয়ে দিন।
একটা মিথ্যা লুকাতে গিয়ে আরও বেশি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ফেলি আমরা অনেক সময়। তেমন কিছুও ঘটতে পারে বউ–শাশুড়ির সম্পর্কে। তাই সূক্ষ্মভাবে বিষয়টি ভেবে দেখা জরুরি।
যেকোনো আকাঙ্ক্ষা বা প্রত্যাশা মানুষকে ভোগান্তির দিকে নিয়ে যায়। তাই শাশুড়ির কাছে কোনো উচ্চাশা রাখবেন না। কোনো দুর্ভোগের দিকে নিজেকে ঠেলে না দিয়ে বরং সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার ভাবনা মাথায় রাখুন।
আপনার মায়ের সঙ্গে শাশুড়িকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। জন্মের পর থেকে আপনার মা আপনাকে চেনেন। তাই আপনার সেখানে একটা ‘কমফোর্ট জোন’ তৈরি হয়ে গেছে। আপনার চোখ দেখেও হয়তো মা অনেক কিছু বলে দিতে পারবেন। শাশুড়ির জন্য যেটা খুব মুশকিল কাজ। তাই ‘আমার মা হলে এই করতেন’ ভাবনা বাদ দিন। বরং তিনি আপনার জন্য যতটা করছেন, সেটা নিয়ে খুশি থাকুন।
আপনার জীবন আপনি কীভাবে যাপন করবেন, সেটা নিজে ঠিক করুন। আপনার যদি মনে হয় ঠিক আছে, তাহলে শাশুড়ির অনুমোদন আছে কি না, সেটা না ভাবলেও চলবে। শ্বশুরবাড়ির হাততালি পেতে নিজের ইচ্ছাশক্তি অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার কিছু নেই।
অনেক সময় শাশুড়ি ঘরের মধ্যে একধরনের আচরণ করেন, লোকের সামনে অন্য রকম। তিনি যদি এমন লোকদেখানো আচরণ করে থাকেন, তাহলে সরাসরি এর প্রতিবাদ করুন। এসব বিষয় মেনে নিলে সম্পর্ক আরও খারাপ হবে।
সূত্র: ফিজিওলজি টুডে