
মিডিয়া অঙ্গনে সহকর্মীদের সাধারণত ‘ভাই’ বা ‘আপা’ বলে সম্বোধন করার চল। সেই সম্পর্ক নিয়েই বিপাকে পড়েছেন নাট্যকার ও অভিনয়শিল্পী দম্পত্তি বৃন্দাবন দাস ও শাহনাজ খুশির সন্তান সৌম্য জ্যোতি। মা-বাবাও তারকা হওয়ার কারণে সহকর্মীদের সম্বোধন করতে মুখে ভাই বা আপা শব্দ আনতেই পারেন না সৌম্য–দিব্য। অন্যদিকে আঙ্কেল আন্টি বলতে গেলেও বিপাকে পড়েন। এই নিয়ে প্রায়ই বেশ মজার ঘটনা ঘটে।
ঈদের সিনেমা ‘উৎসব’-এ তারিক আনাম খান, অপি করিম, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরীর পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সৌম্য জ্যোতি। সেই সিনেমার প্রচারণায় গিয়েও আবার একই বিড়ম্বনায় পড়েন সৌম্য। সিনেমাটি নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন সিনেমা হলের সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে হয় অভিনয়শিল্পীদের। ‘সহকর্মীদের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল’ সম্প্রতি এমন প্রশ্ন ঘিরে সৌম্যর সামনে আসে সম্বোধন নিয়ে মজার এক অভিজ্ঞতা।
সংবাদ সম্মেলনে ডান পাশে চঞ্চল চৌধুরী বসেছেন। বাম পাশে জয়া আহসান। দুজনের মাঝে তরুণ অভিনেতা সৌম্যকে দেখা যায়। সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সৌম্য বলেন, ‘আমি আসলে ভাগ্যবান। সহকর্মী হিসেবে, গুণী শিল্পীদের পেয়েছি। অভিনয়ের সময়ে আমাকে খুব বেশি কাঁপাকাঁপি করতে হয়নি। সবাই সহযোগিতা করেছে। অপি আন্টি, চঞ্চল আঙ্কেল...।’ দুই অভিনয়শিল্পীকে আঙ্কেল ও আন্টি সম্বোধন করার পরে চঞ্চল হেসে বলেন, ‘আমি আঙ্কেল।’ ততক্ষণে পাশের সবাই হেসে ওঠেন। পাশ থেকে জয়া বলেন, ‘আমাকে আন্টি বলিস না।’ তখন সৌম্য ‘জয়া’ নাম ধরেই কথা বলতে থাকেন। কিন্তু সবার হাসিতে কথা থেমে যায়। যে ভিডিও ক্লিপটি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল।
জয়া আহসান পাশ থেকে বলতে থাকেন, ‘ও কিন্তু আমাকে ছোট থেকে শুধু জয়া বলেই ডাকে।’ হাসতে হাসতে চঞ্চল বলেন, ‘আমাকেও কিন্তু সে সব সময় নাম ধরে, চঞ্চল ডাকে। কিন্তু এখন সে হেসে বলছে আঙ্কেল।’ হাসির রোলের মধ্যেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে যাচ্ছিলেন তরুণ অভিনেতা সৌম্য।
এই সময় সৌম্য হাসি থামিয়ে বলেন, ‘সিনেমায় অভিনয় করছেন তারিক আঙ্কেল, দিনার আঙ্কেল।’ জয়ার পাশেই বসে ছিলেন তারিক আনাম খান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘ভাগ্য ভালো যে আমাকে আঙ্কেল বলেছে, দাদু বলে নাই।’ আবারও হাসির রোল।
সম্পর্ক ঘিরে এমন মজার ঘটনা সৌম্যদের প্রায়ই ঘটে। এই নিয়ে কথা হয় সৌম্যের সঙ্গে। শুরুতেই হেসে এই অভিনেতা বললেন, ‘আমি সম্পর্ক নিয়ে আজব এক সিচুয়েশনে পড়েছি। অফস্ক্রিনে সবার সঙ্গে দেখা হলে আড্ডা হলে কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন অনস্ত্রিনে কথা বলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ি।’
বৃন্দাবন ও শাহনাজ খুশি দীর্ঘদিন ধরে দেশের নাট্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের যমজ সন্তান দিব্য–সৌম্য বড় হয়েছেন তারকাবেষ্টিত পরিবেশে। পারিবারিক আয়োজনে তাঁরা মা–বাবার সম্পর্কের সূত্র ধরেই তাঁদের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এতে আগে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। তবে দুই ভাই অভিনয়ে আসার পরে সম্পর্ক ঘিরে এমন মধুর বিড়ম্বনা শুরু হয়েছে।
সৌম্য বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই মা–বাবার কলিগদের দেখে বড় হয়েছি। নিয়মিত দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। কেউ সম্পর্কে আঙ্কেল, কেউ আন্টি, কেউ ভাই, কেউ মামা, কেউ খালু। একসময় সেভাবেই অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু অভিনয় শুরুর পরে ঝামেলা তৈরি হলো। ক্যামেরার সামনে নাম ধরেও ডাকা যাবে না আবার আঙ্কেল আন্টি, চাচা বলতে গেলেও সমস্যা। এখন আমি যদি দেশের বড় বড় শিল্পীদের শুধু নাম ধরে ডাকি, তাহলে যে কেউ স্ক্রিনে এভাবে কথা বলতে দেখলে ভাববেন আমি বড়দের অসম্মান করছি।’
সৌম্য জানান, নাট্যকার বৃন্দাবন দাস ও সালাউদ্দিন লাভলু জুটির যত নাটক শুটিং হয়েছে, এসব নাটকের সব শিল্পীসহ বেশ কিছু তারকা দুই ভাইকে অনুমতি দিয়েছেন আঙ্কেল–আন্টি, মামা–চাচা না বলে শুধু ভাই বলে ডাকতে। এই তালিকায় রয়েছে চঞ্চল, মোশাররফ, জয়া আহসান, শামীম জামানসহ অনেকে। এর আগে জয়া আহসানকে আন্টি বললেও সম্প্রতি সৌম্য জয়ার সঙ্গে নকশীকাঁথার জমিন সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তখন জয়াও বলে দিয়েছেন, নাম ধরে ডাকতে।
সৌম্য বলেন, ‘এখন ক্যামেরার সামনে কাকে কী বলব, এই নিয়ে চিন্তায় থাকি। সম্পর্ক নিয়ে কেউ মন খারাপ করুক বা হাসাহাসি করুক, এটা চাই না। দর্শক আমাকে ভুল বুঝুক, সেটাও চাই না। এখন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি নারী–পুরুষ সব সহকর্মীকে স্যার বলে ডাকব। এটাই আমার জন্য নিরাপদ।’