
দিনা (ছদ্মনাম) বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রেমে পড়েছিলেন এক সহপাঠীর। শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো, দিনরাত গল্প, চা-পর্ব, সন্ধ্যাবেলার হাঁটাহাঁটি; কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই বদলে গেল সেই গল্প। একটু দেরিতে ফোন ধরলে রাগ, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করলেই সন্দেহ, মাঝেমধ্যে রেগে গিয়ে চেঁচামেচি—এসবই যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠল। ‘ভালোবাসে বলেই তো এমন করে’—এই বিশ্বাসে দিনা বারবার নিজেকে বোঝাতেন। একসময় বুঝতে পারলেন, এই সম্পর্ক তাঁকে শুধু কষ্টই দিচ্ছে, তাই আর না। দিনার মতো অভিজ্ঞতা অনেকেরই হতে পারে। তাই সম্পর্কের শুরুতেই কিছু বিষয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। এমন ১০টি আচরণ নিচে তুলে ধরা হলো, যা কোনো সম্পর্কেই সহ্য করা উচিত নয়।
কাউকে অপমান করা অথবা কটু কথা বলা একধরনের মানসিক নির্যাতন। সঙ্গী প্রায়ই আপনাকে অপমান করলে কিংবা রেগে গিয়ে গালাগাল করলে সহ্য করা উচিত নয়।
শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতন দুটিই অপরাধ। শারীরিক আঘাত যেমন একধরনের সহিংসতা, ঠিক তেমনি মানসিক চাপে ফেলে রাখা বা সব সময় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করাও সহিংসতা। গায়ে হাত তোলা কিংবা কিছু নিয়ে ভয় দেখানো সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তোলে।
আপনি কখন কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে যাচ্ছেন, এমনকি কার সঙ্গে কী কথা বলছেন, সব আপনার সঙ্গীর জানার প্রয়োজন নেই। যখন আপনার সঙ্গী নিয়মিত আপনার ফোন চেক করেন বা সব সময় জানতে চান, আপনি কোথায়, কার সঙ্গে—তখন তিনি আপনার ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন। অতিরিক্ত ঈর্ষা একটি সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা অন্যকে অপমান করে একধরনের আনন্দ পান। অনেকে অনায়াসেই বন্ধুদের সামনে সঙ্গীকে ঠাট্টার ছলে অপমান করে, শরীর ও চেহারা নিয়ে মন্তব্য করে বসে। এমন আচরণ সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস নষ্ট করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ককে দুর্বল করে তোলে।
যদি একজন সঙ্গী বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন, যেমন কোনো কারণ ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিত না হওয়া কিংবা কথা দিয়ে কথা না রাখা, তাহলে তা সম্পর্কের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার অভাব প্রকাশ করে।
অনেক সময় প্রেমিক বা প্রেমিকা তাঁর সঙ্গীর কোনো বন্ধুকে তাঁর পছন্দ নয় বলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে বলে। আবার অনেকে সঙ্গীর পরিবার ও বন্ধুদের অসম্মান করে। মনে রাখবেন, আপনার প্রিয়জনদের ছোট করার অধিকার কাউকেই দেওয়া উচিত নয়।
বিশ্বাসই সম্পর্কের ভিত। একটি সম্পর্কে যদি কেউ প্রতারণা করে ও বারবার মিথ্যা বলে, তবে সেই সম্পর্কের ভিত আলগা হতে থাকে।
গঠনমূলক সমালোচনা যেমন আমাদের নিজেদের ভুল শোধরাতে সাহায্য করে, তেমনি অহেতুক সমালোচনা আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে। প্রতিটি মানুষের চিন্তাভাবনা ও জীবনযাত্রা আলাদা। তাই আপনি পৃথিবীকে যেভাবে দেখেন, আপনার সঙ্গীও যে সেভাবেই দেখবেন, এমন ভাবা অনুচিত। প্রতিটি ছোটখাটো বিষয়ে ভুল ধরলে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয় এবং মনে ক্ষোভ তৈরি হয়।
কেউ যদি আপনাকে বলে, ‘তোমার চাকরির কী দাম আছে?’ তাহলে কেমন লাগবে, ভাবুন তো! সঙ্গীর এমন ব্যবহার কখনোই মেনে নেওয়া উচিত নয়। পেশাগত জীবন সম্পর্কে সঙ্গীর সিদ্ধান্তকে সব সময় সম্মান করা জরুরি। সঙ্গীর পেশাকে তুচ্ছ করা মানে তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করা।
গ্যাসলাইটিং হলো এমন এক মানসিক কৌশল, যেখানে একজন সঙ্গী ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে নিজের অনুভূতি বা স্মৃতি নিয়ে সন্দেহে ফেলে দেয়। যেমন একটি ঘটনা হয়তো আপনার মনে আছে; কিন্তু আপনার সঙ্গী বলছে, ‘এসব কিছুই তো হয়নি।’
সূত্র: এমএসএন