
অনেকেই আছেন প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই এখন প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে পরামর্শ নিতে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারস্থ হচ্ছেন। এত দিন চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হলেও অনেকে এখন ডেটিংয়ের নানা সমস্যা সমাধানেও এআইয়ের সাহায্য নিচ্ছেন।
ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে বসবাসরত র্যাচেল নামের এক নারী জানান, প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করার বিষয়ে চ্যাটজিপিটির পরামর্শ নিয়েছিলেন তিনি। র্যাচেলের মতো অনেকেই সম্পর্কের জটিলতা নিরসনে এআইয়ের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
অনলাইনভিত্তিক ডেটিং ফার্ম ম্যাচের-এর গবেষণা অনুসারে, জেন-জিদের প্রায় অর্ধেকই ডেটিং পরামর্শের জন্য চ্যাটজিপিটির মতো লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বা এলএলএম ব্যবহার করেছেন, যা অন্য যেকোনো প্রজন্মের চেয়ে বেশি। এলএলএম একধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যেটি মানুষের মতো লেখা সম্পাদন করে। ব্রেকআপের মেসেজ লিখতেও অনেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে ঝুঁকছেন।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের মনোবিজ্ঞানী এবং সম্পর্কবিশেষজ্ঞ ড. ললিতা সুগলানি বলেন, কাউকে ভালো লাগার কথা কীভাবে জানাবেন বা সম্পর্ক নিয়ে যাঁরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে এআই। টেক্সট লিখতে, কনফিউজিং মেসেজ বিশ্লেষণ করতে এবং বিকল্প মতামত গ্রহণের ব্যাপারে এটি তাঁদের সাহায্য করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু উদ্বেগের কথাও উল্লেখ করেন এই মনোবিজ্ঞানী। ‘ব্যবহারকারীকে সাহায্য করবে এবং তার পক্ষে মতামত দেবে—এলএলএম এমনভাবেই তৈরি। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সেটি ব্যবহারকারীর কথাই পুনরাবৃত্তি করে। আবার অসামঞ্জস্যপূর্ণ উদাহরণ বা অনুমানকে সঠিক মতামত হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে।’
যেহেতু এআই অনুভূতিশূন্য, তাই এর বার্তাগুলো আবেগহীন ও স্ক্রিপ্টেড মনে হয়। যাঁকে পাঠানো হচ্ছে তাঁর কাছে এগুলো বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর লাগতে পারে। তবে সুখবর হলো, সম্পর্ক-সংশ্লিষ্ট পরামর্শের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন সেবা তৈরি হচ্ছে।
‘মেই’ একটি বিনা মূল্যের এআই জেনারেটেড সার্ভিস। ওপেন এআই ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত এই সেবা কথোপকথনের মতো করে সম্পর্কের সমস্যাগুলো সমাধান করে। নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠাতা এস লি বলেন, এআই টুলে উত্থাপিত অর্ধেকেরও বেশি সমস্যা যৌনতা-সম্পর্কিত। এ ধরনের বিষয় নিয়ে অনেকেই বন্ধু বা থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। মানুষ এআই ব্যবহার করছে, কারণ মনস্তাত্ত্বিক সেবা পাওয়ার উৎসগুলো এখন পর্যন্ত অপর্যাপ্ত।
তবে এআই থেকে পরামর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নও উঠছে। একজন মানব পরামর্শদাতা জানেন কখন হস্তক্ষেপ করলে কাউকে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে বাঁচানো যাবে। কিন্তু একটি অ্যাপের পক্ষে কি সেই নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব?
তবে মেই অ্যাপের সুরক্ষাব্যবস্থা অনেকটাই শক্তিশালী বলে দাবি করা হয়। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেন এআই জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ মডেলটিতে অসুস্থ মানসিকনির্ভরতা এবং অযথা প্রশংসা করার প্রবণতা এড়ানোর ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটানো হয়েছে।
নিরাপত্তার পাশাপাশি গোপনীয়তাও অন্যতম একটি উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের অ্যাপগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল ডেটা সংগ্রহ করে। এগুলো হ্যাকারদের হাতে পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সুরক্ষানীতির অংশ হিসেবে ‘মেই’ অ্যাপে ই-মেইল অ্যাড্রেস ছাড়া ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করতে পারে, এমন কোনো তথ্য জিজ্ঞাসা করা হয় না। ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথোপকথন শুধু সাময়িকভাবে সংরক্ষণ করা হয়, ৩০ দিন পর সেগুলো মুছে ফেলা হয়।
বর্তমানে কেউ কেউ আবার মানব থেরাপিস্টের সঙ্গে এআইও ব্যবহার করছেন। গত বছরের শেষ দিকে লন্ডনে বসবাসরত করিন তাঁর সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলাতে তিনি চ্যাটজিপিটির শরণাপন্ন হন।
তবে তিনি চ্যাটজিপিটির কাছে জনপ্রিয় সম্পর্ক-বিশেষজ্ঞ জিলিয়ান টুরেকি বা হোলিস্টিক সাইকোলজিস্ট ড. নিকোল লেপেরার মতো করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বলেন। আবার নতুন করে সম্পর্কে জড়াতে চাইলে একইভাবে বিশেষজ্ঞ স্টাইলে চ্যাটজিপিটির পরামর্শ গ্রহণ করেন। এই পরামর্শ তাঁর কাজেও লাগে বলে দাবি করেন করিন। তবে তিনি বলেন, চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রশ্নগুলো কেবল ডেটিং বা সম্পর্ক নিয়েই সীমাবদ্ধ। জীবনের অন্যান্য জটিল বিষয়ে তিনি থেরাপিস্টের কাছেই পরামর্শের জন্য যান।
সূত্র: বিবিসি