উঠতি বয়সীদের ভালোবাসার অভিধানে যুক্ত হওয়া নতুন শব্দ ‘পাপি–লাভ’ বা ছানা-প্রেম! পাপি বা ছানাপোনা যেমন প্রিয়জনের কাছাকাছি থাকতে চায়, প্রিয়জনের আদর চায়, সব সময় মনোযোগ আশা করে, এই প্রেমও তেমনই। তুলনামূলক সরল এই প্রেমের সম্পর্ককেই ‘আদর করে’ ডাকা হচ্ছে পাপি–লাভ বলে। তরুণদের ভেতর ‘পাপি–লাভ’ই নাকি এখন ট্রেন্ডে। ২০২৩ সালের আগস্টে আমেরিকান সিনেমা ‘পাপি-লাভ’ মুক্তির পর থেকে জনপ্রিয়তা পেয়েছে শব্দ দুটি। আর এই টার্ম দিয়ে বিশেষ ধরনের প্রেমের সম্পর্ককে বোঝাতে জনপ্রিয় করে তুলেছে এই প্রজন্মের কিশোর-তরুণেরা। চলুন, চট করে ধারণা নেওয়া যাক নতুন ধরনের এই ভালোবাসা সম্পর্কে।
পাপি লাভ হলো হরমোনাল, আবেগীয় বা শরীরবৃত্তীয় কারণে তাড়াহুড়ো করে প্রেমে পড়া। জেন-জিদের প্রথম প্রেম বা প্রথম দিককার প্রেমগুলো সাধারণত এ রকম হয়। পাপি-লাভ সাধারণত কিশোর বয়সেই হয়ে থাকে। তবে কেউ কেউ তারুণ্যের শুরুতেও এমন প্রেমে পড়ে থাকেন। কোনো যুক্তি বা বাস্তবতার ধার ধারে না এই প্রেম।
সাধারণত অল্প বয়সে এ ধরনের প্রেম হয়।
এই প্রেম সাধারণত দুই মাস থেকে এক বছরের ভেতর ভেঙে যায়। তবে কারও কারও দুই মাসের আগেই ভেঙে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময়ও স্থায়ী হতে পারে। পাপি প্রেম টিকে যাওয়ার উদাহরণও আছে, তবে তা নিতান্তই ব্যতিক্রম।
এই প্রেমের প্রধান কারণ হলো শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ও প্রভাব।
এই প্রেমের প্রভাবে দুজনে ‘দিবাস্বপ্ন’দেখেনন সারাক্ষণ একসঙ্গে সময় কাটাতে চান, সেটা হতে পারে ফোনে কথা বলা, সারাক্ষণ টেক্সটিং করা বা ভিডিও কলে সময় কাটানো। যেমন ঝড়ের বেগে এই প্রেম আসে, তেমন দপ করেই নিভে যায় এমন প্রেমের সলতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই প্রেমকে সত্যিকারের ভালোবাসার মর্যাদা দেওয়া যায় না।
পাপি-লাভে পড়েই একজন আরেকজনের কাছে সবচেয়ে ‘অবাস্তব’ প্রেমপূর্ণ প্রতিজ্ঞাগুলো করে থাকে।
পাপি-লাভকে ‘চাইল্ডহুড ইনফ্যাচুয়েশন’ও বলা হয়। এই প্রেমের প্রভাবে প্রেমে থাকাকালীন নানা দুর্ঘটনাও ঘটে।
এ ধরনের প্রেমের সম্পর্ক পূর্ণতা পায় না বললেই চলে।
পাপি-লাভে পরস্পরকে বোঝা, দায়িত্ব নেওয়া বা ‘স্পেস দেওয়া’র চেয়ে পরস্পরকে কাছে পাওয়ার চাহিদা গুরুত্ব পায় বেশি।
এটাকে পরিণত প্রেমের স্বীকৃতি দিতে চান না সম্পর্কবিশেষজ্ঞরা।
এই প্রেমে অনেক বেশি পরিমাণ সুখকর হরমোন অর্থাৎ ডোপামিনের নিঃসরণ হয়। তবে তা খুবই ক্ষণস্থায়ী।
এমন কিছু উদাহরণও পাওয়া যাবে, যেখানে কম বয়সের ‘পাপি-লাভ’ সময়ের সঙ্গে পরিণত হয়েছে, পরিণতি পেয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের নিয়ে মা-বাবারা এমনিতেই চিন্তায় থাকেন। এসব চিন্তার মধ্যে একটি বড় চিন্তা হচ্ছে, সন্তান কোনো ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে কি না। তাই তাদের যেকোনো ধরনের আবেগীয় সম্পর্ক বা প্রেমকে মা-বাবারা ভয় পান। তাঁরা সন্তানকে কঠোরভাবে শাসন করেন, মুঠোফোন কেড়ে নেন, বাসার বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন, কখনো সন্তানের বিশেষ বন্ধু বা বান্ধবীকে শাসান, তাদের মা-বাবার কাছে নালিশ করেন। কেউ কেউ সন্তানদের মারধরও করেন; কিন্তু এ ধরনের আচরণগুলো সন্তানের জন্য সুফল বয়ে আনে না।
হঠাৎ যদি জানতে পারেন, আপনার কিশোর বয়সী সন্তান কোনো আবেগীয় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে, তখন অভিভাবক হিসেবে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে এই বয়সে আবেগীয় সম্পর্ক কোনো অপরাধ নয়, অস্বাভাবিকও নয়। সন্তানদের এমন প্রেমের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অস্থির হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন মনোরোগ চিকিৎসক আহমেদ হেলাল। সন্তান এমন প্রেমে পড়লে অভিভাবকের কী করণীয়, সে বিষয়ে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
• খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। এটিকে বয়সের স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে গণ্য করুন।
• সন্তানের সম্পর্কের কথা জেনে কখনো রাগ করবেন না বা উত্তেজিত হবেন না।
সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন। সম্পর্কটি আসলেই প্রেম, নাকি সাময়িক ভালো লাগা বা মোহ, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। সুন্দর, অন্তরঙ্গ পারিবারিক পরিবেশে বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ করুন। সন্তানের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটান। যদি মনে করেন যে তার এই সম্পর্কে পারস্পরিক দায়বদ্ধতা আছে, তখন সম্পর্কটির মূল্য দিন। অথবা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি তাকে জানিয়ে দিন।
তার সম্পর্কের প্রতি অত্যুৎসাহী হয়ে ‘খুব ভালো’ উদার মা-বাবা হওয়ার চেষ্টা না করাই ভালো। মনে রাখতে হবে যে আপনার সন্তানের বয়স খুব বেশি নয়। তাই তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর আগে সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করুন।
সন্তানের বয়স যদি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী না হয়, তবে তাকে উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলুন। অপেক্ষা করতে বলুন। তবে হুট করে সম্পর্ক ভেঙে ফেলার জন্য তাকে চাপ দেবেন না।
সবার আগে পড়ালেখা। সব সময় তাদের পড়ালেখাকে উৎসাহিত করবেন। সম্পর্কটি যেন তাদের পড়ালেখার চেয়ে বড় হয়ে দেখা না দেয়।
সম্পর্কটির পরিণতির ভালো-মন্দ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিন।
বয়ঃসন্ধিকালে সম্পর্কে জড়াক বা না জড়াক, সন্তানের বয়স অনুযায়ী তাকে বিজ্ঞানসম্মত যৌনশিক্ষা (সেক্স এডুকেশন) দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এই শিক্ষার ফলে সন্তান হঠাৎ কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও কোনো ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক সম্পর্কে সে সম্পৃক্ত হবে না।
সূত্র: কেমব্রিজ ডিকশনারি, ব্রিটানিকা ও বেটার হেল্প