এক যুগ পরও দাম্পত্যজীবনে সুখে থাকার পাঁচ সূত্র

মধুর সময়গুলো পেরিয়ে যায় চোখের নিমেষে। জগৎ–সংসারের বাস্তবতার মুখোমুখি হলেই বহু সম্পর্কের রং হয়ে যায় ফিকে। তবে কিছু সম্পর্ক হয় একেবারেই আলাদা। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও কীভাবে কারও কারও দাম্পত্যজীবনে সুখ অটুট থাকে?

কিছু সম্পর্ক হয় একেবারেই আলাদা
ছবি: কবির হোসেন

প্রেমকে আপনার কাছে পৃথিবীর মধুরতম অনুভূতি মনে হতে পারে। আবার ‘জানালা দিয়ে পালিয়ে’ যেতে থাকা প্রেমকে আপনার সংসারে আটকে রাখাটাই হয়ে দাঁড়াতে পারে জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সম্পর্ককে সুন্দর রাখার সাধারণ কিছু নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন। একটু ভিন্ন আঙ্গিকের পাঁচটি বিষয় জেনে নিন, যা খুঁজে পাওয়া যায় সুখী দম্পতিদের মধ্যে।

আবেগ প্রকাশে সমতা

অনেকে ভাবেন, মিল থাকলেই বুঝি সম্পর্ক সুন্দর হবে। তবে কে কোন ধরনের সিনেমা পছন্দ করেন, কে কোন বই ভালোবাসেন, কে খেলাপাগল, কে কোন ধারার ফ্যাশনকে গুরুত্ব দেন, এসব বিষয় আদতে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সংসারে এমন ‘সামান্য’ বিষয় নিয়ে মতের অমিল হতে পারে, যা আগে থেকে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। মতের অমিল হলে দুজন কীভাবে আবেগ প্রকাশ করেন, একে অন্যের আবেগকে কীভাবে গ্রহণ করেন—এসব বিষয়ই আদতে গুরুত্বপূর্ণ।

দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকতে চাইলে যার হাত ধরেছেন, তাঁকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চট করে ভেবে ফেলবেন না

তর্ক এড়ানো নয়

একে অন্যের জন্য ছাড় দেওয়া আবশ্যক। তবে তার মানে এই নয় যে তর্ক হবে না কোনো বিষয় নিয়েই। প্রেম যত গভীরই হোক, দুজনের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নষ্ট হতে দেওয়া উচিত নয়। ভালো লাগা বা খারাপ লাগার কথা মন খুলে বলতে গেলে মতের অমিল হতেই পারে। সেখান থেকে হতে পারে তর্ক। সঙ্গী তর্ক করলে ধরে নেবেন না যে তিনি আপনাকে ভালোবাসেন না।

সম্পর্কের দায়িত্ব গ্রহণ

প্রেম আপনার জীবনের সব দুঃখকষ্ট ভুলিয়ে দেবে না। বরং নিজেকে আগে থেকে বলে রাখুন, জীবনের সব ঝড়ঝাপটার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ককে আগলে রাখাটা দুজনেরই দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াবে। সেই দায়িত্ব পালন করতে পারলে তবেই সম্পর্কে সুখ থাকবে যুগের পর যুগ।

সব সময়ই ধরে নেবেন না যে আপনার না বলা কথা সঙ্গী বুঝে নেবেন। সঙ্গীর প্রত্যাশা পূরণে আপনি যেমন আত্মত্যাগ করবেন, তেমনি নিজের প্রত্যাশার কথাও তাঁকে জানাতে হবে। সব ক্ষেত্রেই এভাবে স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা দায়িত্ব।

কখনোই ভালোবাসার জায়গাটা নষ্ট হতে দেবেন না

চারিত্রিক দৃঢ়তা

দুজনেরই চারিত্রিক স্থিরতা ও দৃঢ়তা থাকা আবশ্যক। প্রলোভন আসতেই পারে সামনে। সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকতে চান বলেই আপনি যাঁর হাত ধরেছেন, তাঁকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চট করে ভেবে ফেলবেন না। ভালো–মন্দ মিলিয়েই মানুষ। আপনি হয়তো ‘ভালো’ দিক দেখেই ভালোবেসেছেন।

কিন্তু যেকোনো ব্যক্তিরই এমন অনেক দিক থাকে, যা তাঁর সঙ্গীর পছন্দ নয়। কিছু ভালো না লাগলেই সেটিকে বড় বিষয় বলে গণ্য করবেন না। সহজভাবে কথা বলুন। আলোচনা করুন। ভালোবাসার মানুষের জন্য কিছু ছাড় দিন।

ব্যক্তিগত জীবনে খানিকটা হলেও বৈচিত্র্য আনুন। সম্পর্কটাকে সতেজ রাখতে নিজের মধ্যে যে চেষ্টা থাকা প্রয়োজন, সে বিষয়ে অধ্যবসায়ী হোন।

কষ্টের স্বীকৃতি

সম্পর্কে কোনো কিছুই ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’ নয়। ধরে নেবেন না ‘এটা তো ওরই করার কথা’। বরং সঙ্গীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তর্কের মুহূর্তগুলোও নিজেদের কাছে কষ্টের মনে হতে পারে অবশ্যই। তবে কষ্ট পেলেই সঙ্গীকে বিরক্তিকর বা ‘খারাপ’ ভেবে নেবেন না।

তর্কের স্বাভাবিক ছন্দকে গ্রহণ করুন। তর্ক থেকে একটা সুন্দর সমাধান বের করুন দুজন মিলে। কখনোই ভালোবাসার জায়গাটা নষ্ট হতে দেবেন না। যত যা-ই হোক, তর্কের শেষটা যেন অপ্রীতিকর না হয়।

সূত্র: টাইম