পুত্রবধূ আর আপনার মধ্যে যতই অমিল থাকুক, মনে রাখবেন, আপনাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে আপনারা দুজনেই একই মানুষকে ভালোবাসেন
পুত্রবধূ আর আপনার মধ্যে যতই অমিল থাকুক, মনে রাখবেন, আপনাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে আপনারা দুজনেই একই মানুষকে ভালোবাসেন

সংসার সুখের হয় শাশুড়ির গুণে, কিন্তু কীভাবে

লিখতে বসার আগে ফেসবুকে একটা পোস্টে চোখ আটকে গেল। যৌথ পরিবারে তিন মাস হয় বিয়ে হওয়া এক বান্ধবী লিখেছে, ‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পুত্রবধূ ও নিজের ছেলের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারেন মা। অথচ অনেকে কেবল উল্টোটাই করেন।’

এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কীভাবে সংসারের বিভিন্ন রকম মানুষ সামলান? উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি সে চেষ্টাই করি না। এ জন্যই বোধ হয় সব ঠিক আছে।’

এখানে উল্লেখ্য, শর্মিলা ঠাকুরের ছেলে বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খান এবং তাঁর পুত্রবধূ আরেক বলিউড তারকা কারিনা কাপুর খান। ওই সাক্ষাৎকারে শর্মিলা আরও বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে উচ্চাশা রাখি না। ওরা সবাই বড় হয়েছে। ওদের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা আছে, নিজেদের ব্যক্তিগত জায়গা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে একটু সংবেদনশীল থাকতে হবে। আমি কেবল নিজের দায়িত্বটুকু ভালোভাবে পালন করি।’

যুক্তরাষ্ট্রের সুজু মিগেল প্যারেন্টিং বিশেষজ্ঞ। তিনি ‘এম্পটি নেস্ট ব্লেসড’ নামে সন্তান পালনবিষয়ক একটি অনলাইন পোর্টালে লেখালেখিও করেন। তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যার মা। তাঁর ছেলেরা বিবাহিত। ‘হাউ টু বি আ গুড মাদার ইন ল’ নামে একটি বই লিখেছেন সুজু। তিনি বলেন, ‘ভালো শাশুড়ি হওয়ার কোনো আইন, নিয়মকানুন আমি পাইনি। তবে আমার শাশুড়িকে দেখে শিখেছি। আর এখন দুই পুত্রবধূর শাশুড়ি হওয়ার পর প্রতিনিয়ত হাতে–কলমে শিখছি। নিজে ভালো শাশুড়ি হওয়ার কোনো বই পাইনি। তাই নিজের অভিজ্ঞতাই লিখে ফেলেছি। অন্যের যদি কিছুটা হলেও কাজে লাগে…।’

সুজু মিগেল আরও বলেন, ‘ভালো শাশুড়ি হওয়ার জন্য একবাক্যে বলতে গেলে নিজের জীবনে, নিজের কাজে মনোযোগী হওয়া, প্রত্যাশা না রাখা, পরিবারের নতুন সদস্যকে সর্বোচ্চ ইতিবাচকতার সঙ্গে গ্রহণ করা, সহানুভূতিশীল হওয়া, ক্ষমা করা আর উপহার দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’

‘হাউ টু বি দ্য বেস্ট মাদার ইন ল ইউ ক্যান বি’ শিরোনামে তিনি যে লেখাটি লিখেছেন, সেখান থেকে ভালো শাশুড়ি হওয়ার কয়েকটি নিয়ম থাকল মিগেলের বিবৃতিতে।

১. যেদিন আপনার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে হলো, মনে রাখবেন, সেদিন থেকে আপনি আর তার জীবনের প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন। দুটি মানুষ নতুন জীবন শুরু করতে চলেছে। এখন তারা একজন আরেকজনের প্রথম অগ্রাধিকার। এত দিন ছেলে বা মেয়ের জীবনে আপনার যে ভূমিকা ছিল, সেখান থেকে আপনি অবসর নিন। এক ধাপ পিছিয়ে আসুন। ওদেরকে শুভকামনা জানান, ওদের মতো করে ছেড়ে দিন। নিজের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভালো শাশুড়ি হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন।

২. ছেলে বা মেয়ের সংসার এখন তাদের প্রথম অগ্রাধিকার। তাদেরকে নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিতে দিন। সময়টাকে উপভোগ করতে দিন। নিজেদের বোঝাপড়ার পূর্ণ সুযোগ দিন। তাদের উপার্জিত অর্থ তারা কী করবে বা কোন খাতে খরচ করবে, সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার। কবে তারা সন্তান নেবে বা আদৌ নেবে কি না, সে সিদ্ধান্ত একান্তই তাদের। এককথায়, অন্যের সংসারে নাক গলাতে যাবেন না। সেটা আপনার ছেলে বা মেয়ে হলেও না! কেননা ‘ব্যক্তিগত স্পেস’কে সম্মান করতেই হবে। নয়তো জটিলতা তৈরি হবেই।

৩. পুত্রবধূ আর আপনার মধ্যে যতই অমিল থাকুক, মনে রাখবেন, আপনাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে আপনারা দুজনেই একই মানুষকে ভালোবাসেন। আমি যেমন আমার ছেলেকে ভালোবাসি, সে-ও তার জীবনসঙ্গীকে ভালোবাসে। পরিবারের গুরুজন হিসেবে, ছেলে বা মেয়ের মা হিসেবে মেয়েজামাই বা পুত্রবধূকে আপন করে নেওয়ার দায়িত্ব শাশুড়ি হিসেবে একান্তই আমার।

৪. আপনি যেটাতে মনোযোগ দেবেন, সেটাই বেড়ে উঠবে। আপনি যদি আপনার পুত্রবধূর ভুলগুলোতে মনোযোগী হন, সেসব নিয়েই কথা বলেন, ভুল বাড়বে। আপনার চোখে কেবল ভুলই ধরা পড়বে। বরং তার ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কথা বলুন। প্রশংসা করুন। দৃশ্যপট ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে জাদুর মতোই।

৫. পুত্রবধূর সঙ্গে ভালো সময় কাটান। নিজেরা একই ধরনের পোশাক কিনতে পারেন। সেটি পরে কারও জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে পারেন বা বাইরে কোথাও খেতে যেতে পারেন।

৬. মনে রাখবেন, আপনি আপনার পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূ, মেয়েজামাই কাউকে যদি ‘প্যারা দেন’, সেটা ‘সুদে–আসলে’ আরও বড় হয়ে আপনার কাছেই ফিরে আসবে। ধরুন, আপনি পুত্রবধূর সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো কথা বললেন আপনার ছেলের কাছে। ফলে আপনি কেবল ছেলে আর বউয়ের মধ্যেই ঝামেলা বাধালেন না, পাশাপাশি আপনার সঙ্গে ছেলে ও পুত্রবধূর সম্পর্কেও তৈরি হলো জটিলতা। তাই কোনো নেতিবাচক মন্তব্য নয়!

৭. সব সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কমবেশি ঝামেলা হয়ই। যখন তাদের কেউ একজন আপনার কাছে এ রকম সময় সাহায্য চাইতে আসে, সব কথা না শুনে আগেই উপদেশ বা পরামর্শ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। নিরপেক্ষভাবে সমাধানের উদ্দেশ্যে কথা বলুন।

৮. ভালো শাশুড়ি যে আপনাকে হতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনার কারণে সন্তানের সংসারে যাতে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হয়, কেবল সেটুকু নিশ্চিত করুন। তাতেই আপনি দিব্যি পাস করে গেলেন!

সূত্র: এম্পটি নেস্ট ব্লেসড