সব শোনার পর সুরভিদি কি বলবে, ‘বাচ্চু তুই! এত শয়তানি তোর মাথায়!’

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে লেখা আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভালোবাসার টক–ঝাল–মিষ্টি গল্প লিখে পাঠিয়েছেন পাঠক। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। তেমনই একটি লেখা পড়ুন এখানে।

তখন ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ি। সুরভিদির প্রেমে পড়ে গেলাম। একেবারে একতরফা প্লেটোনিক লাভ। সুরভিদি ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ত। মফস্‌সল এলাকা, মেয়েরা একটু দেরিতেই স্কুলে ভর্তি হতো। তো আমি সুরভিদির হাসি, কথা বলা, দাঁড়ানোর ভঙ্গি, গালের টোলে আবিষ্ট হয়ে গেলাম।

হেডস্যারের ছেলে হওয়ার সুবাদে বাড়তি খাতির পেতাম। সুযোগ পেলেই সুরভিদির আশপাশে ঘুরঘুর করতাম, যদি সুরভিদির কোনো কাজে লাগি, ‘এই বাচ্চু, যা তো, বাদাম এনে দে তো ভাই’ কিংবা ‘বুট এনে দাও না, লক্ষ্মীটি’।

আমি হাওয়ায় উড়ে যেতাম, হাওয়ায় উড়ে আসতাম। বাড়তি পাওনা তার সবুজ মুঠোয় ভরা চার–পাঁচটি বাদাম, যার স্বাদ ছিল অসাধারণ।

সুরভিদি যদি বলত, ‘এই বাচ্চু, যা তো সুরঞ্জনকে খুন করে আয়’। বিনা বাক্যে খুন করে রক্তাক্ত ছুরি হাতে নিয়ে সুরভিদির সামনে দাঁড়িয়ে বলতাম, সুরভিদি, আমি সুরঞ্জনকে খুন করে এসেছি, আর কী করতে হবে বলো।

হেডস্যারের বাসা স্কুল লাগোয়া হওয়ায় ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে বা ঝড়-বাদলে বাড়ি ফিরতে না পারলে সাময়িক আশ্রয়স্থল ছিল আমাদের বাসা। সে সময় তো আর এ রকম রিকশা, টমটম, অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। থানা হাসপাতাল ছিল বেশ দূরে, আর ওখানে গেলে লাল লাল কিছু ট্যাবলেট ছাড়া আর কিছুই মিলত না।

একদিন পড়ন্ত বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখি, কে জানি আমার খাটে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। লেপ সরিয়েই দেখি সুরভিদি। আমার চারপাশে মনে হয় হাজারটা বোমা ফাটল।

‘বাচ্চু, আমার জ্বর রে...।’

সুরভিদির গ্রিবা, কপোল, ঠোঁট-মুখজুড়ে স্ফটিক স্বচ্ছ জলের কণার মতো ঘাম। আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। শ্বেতবিন্দুর মতো জলকণার সমষ্টি যে একটা নারীকে এত মোহনীয় করে তোলে, এমনটা আমি আর দেখিনি। মোহাবিষ্টের মতো হা করে তাকিয়েই ছিলাম।

তারপর সুরভিদিকে আর দেখিনি। রূপবতী ছিল। মনে হয় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এখন নিশ্চয় দাদি-নানি হয়েছেন। আমাকে দেখলে চিনতেই পারবে না। আর যদি শোনে আমি তার...প্রথমে হতবাক তো হবেনই, এরপর যুগপৎ হেসে কুটি কুটি হবে। আচ্ছা, তখন কি বলবে, ‘বাচ্চু তুই! এত শয়তানি তোর মাথায়!’