কোথাও ঘুরতে গেলেই আজকাল ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায় মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দিতে না পারলে ভ্রমণটাই যেন বৃথা। অনেক সময় মনে হয়, ভ্রমণ বা আড্ডার আসল উদ্দেশ্যই যেন ছবি তোলা! মুহূর্তগুলো উপভোগের চেয়ে ছবি তোলাটাই যেন প্রধান লক্ষ্য।
কিন্তু সুখী দম্পতিরা এখানে আলাদা। তাঁরা অযথা ছবি তোলা এড়িয়ে চলেন। ছবি তুললেও সেগুলো সব সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন না। কেন?
চলুন জেনে নিই সুখী দম্পতিরা কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে কম পোস্ট করেন।
সুখী দম্পতিরা স্বীকৃতির চেয়ে গোপনীয়তাকে বেশি গুরুত্ব দেন। তাঁরা সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো নিজেদের মধ্যেই রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ, তাঁদের মতে সম্পর্ক টিকে থাকে না অন্যের প্রশংসায়, বরং পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধায়। তাঁরা মনে করেন, বিশেষ মুহূর্তগুলো সবার সঙ্গে ভাগ না করে একান্তে উপভোগ করলে তা আরও অন্তরঙ্গ ও অর্থবহ হয়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘লাইক’ বা ‘কমেন্ট’ নয়, সম্পর্কের প্রকৃত ভিত্তি গড়ে ওঠে আন্তরিকতা ও বোঝাপড়ার ওপর।
সুখী দম্পতিরা বিশ্বাস করেন, সামাজিক স্বীকৃতি নয়, সম্পর্ককে মজবুত করে একান্ত মুহূর্ত আর পারস্পরিক বোঝাপড়া। প্রতিটি মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়ার অযথা তাগিদ অনেক সময় সেই মুহূর্তের আসল আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত করে। তাঁরা নিখুঁত ছবি বা পোস্ট দিতে ব্যস্ত না থেকে একসঙ্গে কাটানো সময়টুকু উপভোগ করেন।
সুখী দম্পতিরা খুব ভালো করেই জানেন, অন্তরঙ্গ কথোপকথন আর নিঃস্বার্থ হাসিতে লুকিয়ে থাকে সম্পর্কের আসল সৌন্দর্য। ছবি বা পোস্টে এগুলো বোঝানো যায় না। তাই তাঁরা সবকিছু সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার চেয়ে নিজেদের মধ্যে কাটানো সময়কেই গুরুত্ব দেন বেশি।
মুঠোফোনে সুখী দম্পতিরা আটকে থাকতে চান না, একসঙ্গে কাটানো বর্তমান ও বাস্তব সময়টাই তাঁরা উপভোগ করেন।
এ জন্য তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার চেয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলা, মন খুলে হাসা বা নীরবে হাত ধরাকে প্রাধান্য দেন।
ছোট ছোট বিষয়ও তাঁদের কাছে বিশেষ, যেমন সন্ধ্যায় একসঙ্গে চা খাওয়া, বৃষ্টিতে হাঁটা বা হঠাৎ একে অপরকে জড়িয়ে ধরা। এগুলো হয়তো অন্যের চোখে ধরা পড়ে না, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসার আসল গল্প লুকিয়ে থাকে সেখানেই। তাঁরা বিশ্বাস করেন, ভালোবাসা সবচেয়ে সুন্দর হয় তখনই, যখন সেটি শান্তভাবে উপভোগ করা হয়—শুধু দুজনের জন্য, অন্যের দেখার জন্য নয়।
সুখী দম্পতিরা বিশ্বাস করেন, সত্যিকারের বোঝাপড়া গড়ে ওঠে মুখোমুখি বা সরাসরি কথা বলার মধ্য দিয়ে। ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যাটে যোগাযোগ যত সহজই হোক, সেখানে মুখের ভাব, চোখের চাহনি বা কণ্ঠস্বরের আবেগ ঠিকমতো বোঝা যায় না।
যেমন একদিন হয়তো স্বামী মন খারাপ করে বাসায় এলেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে স্ত্রী পাশে বসে শুধু বললেন, ‘আমি আছি, চিন্তা কোরো না,’ আর তাঁর হাতটা ধরলেন। এ রকম সরাসরি বা চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার মধ্যে যে ভালোবাসা থাকে, ফোনে তা কখনো বোঝানো যায় না।
তাঁরা মনে করেন, সম্পর্ক যত ব্যক্তিগত, ততই গভীর। যাঁরা নিজেদের সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম শেয়ার করেন, তাঁরা সাধারণত ব্যক্তিগত জীবনে বেশি সন্তুষ্ট থাকেন। তাঁরা মনে করেন না যে নিজেদের সুখ অন্যের কাছে প্রমাণ করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাঁদের কাছে স্বীকৃতি পাওয়ার জায়গা নয়। তাঁরা মনে করেন, সম্পর্ক যত ব্যক্তিগত থাকে, ততই তা গভীর হয়। তাই তাঁরা সম্পর্কের ভেতরগত দিকটাই বেশি গুরুত্ব দেন। ভালোবাসা যে কোনো ‘লাইক’ বা ‘শেয়ারের’ দাড়িপাল্লায় মাপা যায় না, এটা তাঁরা বোঝেন।
পোস্ট না করে তাঁরা অন্যের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার ফাঁদ থেকেও দূরে থাকেন। তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চোখের সামনে থাকা মানুষটি, ভার্চ্যুয়াল ফলোয়াররা নয়।
সুখী দম্পতিদের সম্পর্কের ভিত এতটাই শক্ত যে পোস্ট করে সম্পর্কের খুঁটিনাটি দেখানোর প্রয়োজন মনে করেন না তাঁরা। তাঁরা নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে নিরাপদ বোধ করেন, তাই প্রতিটি মুহূর্ত প্রদর্শন করার কোনো তাড়া তাঁদের থাকে না। ভালোবাসা প্রকাশের চেয়ে তাঁরা সেই ভালোবাসা অনুভব করাকেই বেশি গুরুত্ব দেন।
তাঁদের আত্মবিশ্বাস ও সন্তুষ্টি আসে একে অপরের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্ক থেকে, অন্য মানুষের প্রশংসা বা স্বীকৃতি থেকে নয়। তাঁরা জানেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জমকালো ছবির চেয়ে একসঙ্গে কাটানো মানসম্মত, উপভোগ্য সময় তাঁদের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান।
সূত্র: সাবকনসাস সার্ভেন্ট