সহকর্মীদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় না—মিডিয়ায় পা রেখেই শুনতে হয়েছিল অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভানকে। তবে তিনি এসব কানে তোলেননি। তাঁর কাছে মনে হয়েছিল, বন্ধুত্ব পেশা দেখে হয় না। পরে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যাঁদের পেয়েছেন সহশিল্পী হিসেবে, তাঁরাই হয়ে উঠেছেন কাছের বন্ধু। আজ বন্ধু দিবসে সেই বন্ধুত্বের গল্পই শোনাচ্ছেন এই অভিনেতা।

সময়টা ২০১৩ সাল। নির্মাতা আদনান আল রাজীবের একটি বিজ্ঞাপনের কাজে গিয়েছিলাম। সেদিনই প্রথম সিয়াম আহমেদ ও তৌসিফ মাহবুবের সঙ্গে দেখা। কে জানে, হয়তো শেষও হতে পারত! তখনো তো আদতে তেমন পরিচয় ছিল না।
সে যাক, বিজ্ঞাপনের চিত্রনাট্যের গল্পটা ছিল রাতের। শুটিং হয় সন্ধ্যা থেকে সারা রাত। বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়ার গল্প। শুটিং লোকেশন ছিল গাজীপুর। সেখানে আরও বেশ কজন অভিনয়শিল্পী ছিলেন। আমরা একসঙ্গে অভিনয় করি। তখনো বন্ধুত্ব শুরু হয়নি। বলা যায়, সেটা ছিল একটা যোগসূত্র।
এর অনেক দিন পর আবার আরেক শুটিংয়ের মিটিংয়ে নির্মাতার অফিসে তৌসিফের সঙ্গে দেখা হয়। নতুন করে পরিচয় হয় সাফা কবির, সালমান মুক্তাদির ও মিশু সাব্বিরের সঙ্গে। সেদিন আমরা প্রথম একসঙ্গে বের হয়ে ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়াদাওয়া করি। তখন আরেকটু চেনাজানা হয়।
আমার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘ইউনিভার্সিটি’। সেই নাটকে যুক্ত হয় সাফা। দীর্ঘ সময় ধারাবাহিকটির শুটিং হয়। এখানেই পরিচয় মুমতাহিনা টয়ার সঙ্গে।
এরপর বিভিন্ন শুটিং লোকেশনে নিয়মিত দেখা হয়েছে। দল বেঁধে আমরা ‘ঝালমুড়ি’ নামের একটি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছি।
এখানে পেয়েছি তৌসিফ, টয়া, সাফা, শবনম ফারিয়া, অ্যালেন শুভ্র, সালমান মুক্তাদিরসহ অনেককে। দর্শক পছন্দ করেছিলেন বলেই হয়তো এরপর আমাদের ঘিরে একের পর এক কাজ হতে থাকে। ফলে বন্ধুত্ব, বোঝাপড়াটা দৃঢ় হয়।
আমরা একই প্রজন্মের। বয়স কাছাকাছি। তাই অনেক চিন্তাভাবনাই মিলে যেত। আবার সবার গন্তব্য ছিল একই। যে কারণে বন্ধুত্ব জমেছে ভালো।
এভাবে কাজ করতে করতেই একসময় আমরা সবাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাই। প্রত্যেকের নিজস্ব একটা জায়গা তৈরি হয়। ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। অন্যদিকে কমতে থাকে দেখা–সাক্ষাৎ। কিন্তু সুযোগ হলেই আমরা হুটহাট দেখা করার সময় বের করে ফেলতাম। হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের একটা গ্রুপও হয়ে গেল।
ব্যস, এভাবেই চলছে। যেদিন সবাইকে ফ্রি পাওয়া যায়, সেদিনই আমরা একত্র হই। বেশির ভাগ সময় অবশ্য সাফার বাসাতেই আড্ডা জমে। এখনো ও–ই ব্যাচেলর হিসেবে টিকে আছে, সেটা একটা কারণ বটে!
আমরা সবাই একটা ব্যাপার অনুভব করি—ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, মাঝেমধ্যে দেখা হওয়া জরুরি। কারণ, বন্ধুরা এক হলে মন ভালো হয়। আড্ডায় আমাদের খোঁচাখুঁচি চলতেই থাকে। বেশির ভাগ সময় আমরা সাফাকে নিয়ে মজা করি...খুনসুটি আরকি। বন্ধুদের মধ্যে যা হয়।
আমার ক্যারিয়ারে অবশ্যই বন্ধুদের অবদান অনেক। আমার পরিবার বা আমার জীবনসঙ্গী যেভাবে আমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে, ঠিক তেমন। আমার সংগ্রাম তো ওরাই কাছ থেকে দেখেছে। কখন কী করতে হবে, সেসব বলে সহায়তা করেছে। কোনো পরামর্শ দরকার হলে সেখানেও বন্ধুদেরই পাশে পেয়েছি। হয়তো কারও সময় ভালো যাচ্ছে না, মনটা অস্থির, তখন আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে যাই। এমন কখনো হয়নি যে বিপদে কোনো বন্ধুকে পাশে পাইনি। মিডিয়ার বন্ধুদের পাশাপাশি আমার আরও দুই বন্ধু আরাফা ও লিংকনও অনেক সাহায্য করেছে। বন্ধুদের আজীবন ভালোবেসে যেতে চাই।
অনুলিখন: সামির আলম