যেকোনো জায়গায় কিউআর কোড স্ক্যান করা কি নিরাপদ

জীবন সহজ করতে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা কিউআর কোড ব্যবহার করি
ছবি: রয়টার্স

কিউআর কোডের পূর্ণ রূপ কুইক রেসপনস কোড। দ্রুততার সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ বা ডাটা এনকোড করা যায় বলে এই নাম। জীবন সহজ করতে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা কিউআর কোড ব্যবহার করি। পার্সেল ট্র্যাক, কেনাকাটা, অ্যাপ ডাউনলোড, ওয়াই–ফাই সংযোগ—নানা ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই প্রযুক্তি।

কিন্তু যেকোনো জায়গায় কিউআর কোড স্ক্যান করা কি নিরাপদ? সেটা জানার আগে চলুন এই প্রযুক্তি সম্পর্ক একটু জেনে নিই।

কিউআর কোডের পূর্ণ রূপ কুইক রেসপনস কোড

১৯৯০–এর দশকে জাপানে তুঙ্গে ওঠে মোটরের উৎপাদন। চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন উৎপাদকেরা। সে সময় গাড়ির যন্ত্রাংশ ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হতো সাদা-কালো ডোরাকাটা বারকোড। কিন্তু সীমিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় বলে বারকোড একটা একটা করে যন্ত্রাংশ স্ক্যান করতে পারত। ফলে উৎপাদনপ্রক্রিয়া অনেক ধীর হয়ে যায়। তাহলে সমাধান কী?

এগিয়ে আসেন জাপানি প্রকৌশলী মাসাহিরো হারা। টয়োটার উৎপাদনপ্রক্রিয়া আরও উন্নত ও সহজ করার জন্য তিনি তখন প্রযুক্তিবিদ তৈরি করছিলেন। বেশি তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে এবং যেকোনো অবস্থান থেকে যন্ত্রাংশগুলো স্ক্যান করতে পারবে, এমন একটি কোড উদ্ভাবনে উদ্যোগী হলেন তিনি। এভাবেই একসময় গতানুগতিক বারকোডের জায়গা নিল নতুন একটি কোড।

সাধারণ বারকোড যেখানে রৈখিক উপায়ে তথ্য সংরক্ষণ করে, নতুন কোডগুলো সেখানে সাদা-কালো বর্গাকার দ্বিমাত্রিক আয়তাকার বিন্যাস ব্যবহার করে। কোডটির কিছু অংশ যদি নষ্টও হয়ে যায়, তারপরও সেটা কাজ করে। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় কিউআর কোড।

কিউআর কোড স্ক্যান করার আগে উৎসটি নিরাপদ কি না, যাচাই করে নিন

প্রথম কয়েক বছর কিউআর কোডের ব্যবহার অনেকাংশে শিল্পকারখানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু স্মার্টফোন আসার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই ডিজিটাল হতে শুরু করে। অনেকের ফোনেই জায়গা করে নেয় কিউআর কোড রিডার। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাতারাতি এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় কোভিড–১৯ মহামারির সময়। ব্যাটারি কিংবা ওয়্যারলেস সংযোগও লাগে না।

তাই যোগাযোগহীন সময়টাতে টিকা রেকর্ড সংগ্রহ, কেনাকাটা, পেমেন্ট—সবকিছুতেই সহজ মাধ্যম হয়ে ওঠে স্পর্শহীন এই প্রযুক্তি। পণ্যের তথ্য যাচাই, ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগ—বলতে গেলে সবখানেই এখন কিউআর কোড।

সন্দেহজনক বা অপরিচিত কোড এড়িয়ে চলা নিরাপদ

কিন্তু জীবনকে সহজ ও কাজকে দ্রুততর করে দেওয়া এই প্রযুক্ত কতটা নিরাপদ? প্রযুক্তিবিদেরা বলছেন, কিউআর কোডের এই সহজ ব্যবহারযোগ্যতাই এর বড় দুর্বলতা। হ্যাকাররা ভুয়া ওয়েবসাইটের লিংক দিয়ে লগইনের তথ্য চুরি করতে পারে বা জাল ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে পারে।

এমনকি ডিভাইসে ম্যালওয়্যার (ক্ষতিকর সফটওয়্যার) আপলোড করতে পারে। এতে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, লোকেশন ট্র্যাক, অর্থ লেনদেনে প্রতারণার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কোনো কিউআর কোড স্ক্যান করার আগে উৎসটি নিরাপদ কি না, যাচাই করে নিতে হবে। তাই সন্দেহজনক বা অপরিচিত কোড এড়িয়ে চলা নিরাপদ।

সূত্র: বিবিসির টেক নাউ