একদিকে বইয়ের তাক, অন্যদিকে টাকার গাছ, জমে উঠেছে এসএমই মেলা

বইয়ের তাকের মিনিয়েচার
ছবি: সুরাইয়া সরওয়ার

একটি বইয়ের আকারে তৈরি ছোট্ট বইয়ের তাক। তাতে রাখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ূন আহমেদসহ বিভিন্ন লেখকের লেখা বইয়ের মিনিয়েচার। এই মিনিয়েচারগুলো তৈরি করে ‘ক্রাফটিনেশন’ নামের একটি উদ্যোগ। ক্রাফটিনেশনের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মুনজির প্রধান বলেন, ‘আমরা আট দিনের মেলায় যতটা বিক্রি হবে বলে ভেবেছিলাম, তা দুই দিনেই হয়ে গিয়েছে।’

রেজিনের তৈরি গয়না, ফ্রিজ ম্যাগনেটে দেশীয় বিভিন্ন স্মারক, কুশিকাটার চাবির রিং, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের গয়না, জিপসামের পাত্রে নানা ধরনের মোমবাতি,  ধাতু দিয়ে তৈরি ওয়াল হ্যাংগিং, সুপারিপাতার খোলস দিয়ে তৈরি নানা রকম পাত্র, জামদানির ব্যাগ ও জুতার মতো বেশকিছু ব্যতিক্রমী পণ্যের পাশাপাশি অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি টাকার গাছেরও দেখা মিলবে এখানে।

দুপুর পেরোতেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে স্টলগুলোয়

হেমন্তের নরম রোদ গায়ে মেখেই সকাল থেকে মেলায় আসতে শুরু করেন ক্রেতারা। দুপুর পেরোতেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে স্টলগুলোয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা।

যেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চমৎকার সব পণ্য কিনতে ছুটে আসেন নগরের বাসিন্দারা। কেনাকাটার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে মেলায়। ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা জানালেন অন্য সময়ের চেয়ে এবারের মেলায় পণ্যের বৈচিত্র্য বেশি, আর তাই মেলাও হয়ে উঠেছে জমজমাট।

মেলায় দেখা মিলল টাকার গাছের

সাধারণত এসএমই পণ্য মেলায় কারিগর, শিল্পী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দেখা মেলে; তবে এবার তাঁদের পাশাপাশি মেলায় অংশ নিয়েছে বেশকিছু পরিচিত ব্র্যান্ডও। খুঁতের প্রতিষ্ঠাতা ও ডিজাইনার ফারহানা হামিদ বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে এই মেলাটা এত গোছানো হচ্ছে যে বড় ব্র্যান্ডগুলোও এখানে অংশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর একটা সরকারি মেলাতে অংশ নেওয়া আমাদের জন্যও সম্মানের। এই মেলায় অনেক কারিগর এসেছেন, যাঁরা হয়তো আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করেন। ওনারাও এই মেলায় সরাসরি তাঁদের পণ্য বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন।’

এসএমই পণ্য মেলা চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত

শিল্প মন্ত্রণালয়ের এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এসএমই পণ্য মেলা ২০২৫ চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবারের মেলায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, ফার্নিচার, হস্ত ও কারুশিল্প পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও হালকা প্রকৌশল পণ্যের সব মিলিয়ে মোট ৪০০টির বেশি স্টল। মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই নারী।

খাবার আর আড্ডায় জমে যাবে শীতের সন্ধ্যা

তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মেলার জনপ্রিয়তা কম নয়। অনেকে এসে ছবি তুলছেন, নতুন ব্র্যান্ডগুলোর নকশা দেখছেন এবং উদ্যোক্তাদের সৃজনশীলতা দেখে কেনাকাটাও করছেন। সন্ধ্যার হালকা শীতল হাওয়ায় স্টলগুলো হয়ে ওঠে আরও আলোঝলমলে।  শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে মাটির পুতুল বা কাঠের গাড়ির দিকে, আর বড়রা ব্যস্ত নানা পণ্যের দামদর করতে। কেউ আবার নিজের জন্য নতুন শীতের শাল কিনছেন, কেউ বাসার জন্য মাটির কুঁড়েঘর কিনছেন।

দেশীয় শাড়ির পসরা

কেনাকাটা শেষে উদরপূর্তি করতে দেখা যাচ্ছে শীতের পিঠা থেকে জেন–জিদের পছন্দের ওয়াফল। আছে তেহারি, ফুচকা, হাঁসের মাংস, রুটিসহ নানা রকম খাবার।
ছুটির দিনে এক বেলা ঘুরে আসতে পারেন পরিবার নিয়ে।