দারুচিনি খাবারের স্বাদ বাড়ায় বলেই বাঙালির রান্নায় এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে
দারুচিনি খাবারের স্বাদ বাড়ায় বলেই বাঙালির রান্নায় এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে

কীভাবে নকল দারুচিনি চিনবেন এবং জেনে নিন এর স্বাস্থ্যঝুঁকি

দারুচিনি খাবারের স্বাদ বাড়ায় বলেই বাঙালির রান্নায় এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কেবল মাছ–মাংসেই নয়; চা, মিষ্টান্ন, পিঠা পুলিতেও এর মিষ্টি ঘ্রাণ স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। তবে জানেন কি, বাজারে আমরা যে দারুচিনি কিনি, তার সবটাই আসল নয়? অনেক সময় আমরা অজান্তে নকল বা নিম্নমানের দারুচিনি ব্যবহার করি, তাতে থাকে ‘কুমারিন’ নামের এক যৌগ, যা দীর্ঘ মেয়াদে লিভারের ক্ষতির মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই লেখায় আমরা দেখব কীভাবে আসল ও নকল দারুচিনি আলাদা করা যায়।

দারুচিনি কী

দারুচিনি আহরণ করা হয় ‘সিনামোমাম’ নামে এক গাছের ভেতরের বাকল থেকে। সিনামোমাম শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে, যার অর্থ ‘মিষ্টি কাঠ’। গাছের এই বাকল গাছ থেকে কেটে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তারপর তা আপনা–আপনি রোলের মতো আকার ধারণ করে, যাকে আমরা দারুচিনি স্টিক বা কুইল নামে চিনি।

দারুচিনির ঘ্রাণ ও স্বাদ একেবারেই স্বতন্ত্র; কিছুটা মিষ্টি ও ঝাঁজালো। এই অনন্য সুবাসের জন্য দারুচিনি স্বাদে ঝাল-মিষ্টি। এটি মিষ্টি ও ঝাল—দুই ধরনের রান্নাতেই ব্যবহৃত হয়। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান শরীরকে ভেতর থেকে সুরক্ষা দেয় এবং সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।

এভাবেই দারুচিনি আহরণ করা হয় ‘সিনামোমাম’ নামে এক গাছের ভেতরের বাকল থেকে

আসল দারুচিনি

বাজারে মূলত দুই ধরনের দারুচিনি পাওয়া যায়—সিনামোমাম ভেরাম এবং সিনামোমাম ক্যাসিয়া। সিনামোমাম ভেরামটাকেই আসল দারুচিনি বলা হয়। এটা ‘সিলন দারুচিনি’ নামেও পরিচিত। এটি মূলত শ্রীলঙ্কা ও ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় গাছ থেকে আসে।

আসল দারুচিনি পাতলা, কাগজের মতো, যা একাধিক স্তরে গুটিয়ে থাকে এবং সহজে ভাঙা বা গুঁড়া করা যায়

আসল দারুচিনির স্বাদ মিষ্টি ও মৃদু। এতে ইউজেনল ও সিনামালডিহাইডের মতো ফেনলিক ও অ্যারোমাটিক যৌগের পরিমাণ বেশি থাকে। দেশের বাজারে আসল দারুচিনি পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন বলে এর দামও বেশি। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।

নকল দারুচিনি

সিনামোমাম ক্যাসিয়া (অন্য নাম সিনামোমাম অ্যারোমাটিকাম) হচ্ছে নকল বা নিম্নমানের দারুচিনি। এটি মূলত দক্ষিণ চীনে উৎপন্ন হলেও বর্তমানে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হয়। এর স্বাদ কষ কষ ও কড়া।

নকল দারুচিনির একটি ধরন

ক্যাসিয়া দারুচিনিতে কুমারিন নামক যৌগের পরিমাণ অনেক বেশি। নিয়মিত ও দীর্ঘ মেয়াদে খেলে এটি লিভারের ক্ষতি করতে পারে এবং কিছু ওষুধের কার্যকারিতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, তাই সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি।

কীভাবে আসল ও নকল দারুচিনি চিনবেন

১. রং দেখে চিনে নিন
আসল দারুচিনি: হালকা ফিকে বাদামি বা হলদে-বাদামি।

নকল (ক্যাসিয়া) দারুচিনি: গাঢ় লালচে-বাদামি।

২. গঠন ও স্পর্শ করে চিনুন
আসল: পাতলা, কাগজের মতো ছাল, যা একাধিক স্তরে গুটিয়ে থাকে। হাত দিয়ে সহজে ভাঙা বা গুঁড়া করা যায়।

নকল: পুরু, শক্ত ও এক স্তরবিশিষ্ট ছাল। হাত দিয়ে ভাঙতে কষ্ট হয়; সাধারণত ব্লেন্ডারে গুঁড়া না করলে ভাঙে না।

নকল দারুচিনি পুরু, শক্ত ও এক স্তরবিশিষ্ট

৩. গন্ধ শুঁকে চিনুন
আসল: কোমল, মিষ্টি, হালকা লবঙ্গ বা সাইট্রাস ঘ্রাণযুক্ত। অতিরিক্ত ঝাঁজালো নয়।

নকল: ঝাঁজালো, কড়া ঘ্রাণ থাকে।

৪. স্বাদ পরীক্ষা করে
আসল: হালকা, মিষ্টি ও মৃদু স্বাদের হয়।

নকল: কড়া, কষ কষ, তিক্ত ও ঝাঁজালো স্বাদের হয়।

খেয়াল করুন

এই লেখার মূল উদ্দেশ্য সচেতনতা বৃদ্ধি। আমরা জানি, দেশের বাজারে আসল দারুচিনি বিরল, দামও বেশি। তবে নকল দারুচিনিকেই আসল ভেবে আমরা যেন ভুল না করি। বিশেষত নকল দারুচিনি যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে, তা জেনে রাখা ভালো।


সূত্র: স্পাইস হাউস