দারুণ ফ্যাশন সচেতন ছিলেন ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। টুপি, রিস্টব্যান্ড আর কালো পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। ২০০০ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’তে নিজেই লিখেছিলেন তাঁর জীবনযাপনের সেসব কথা। আজ ১৬ আগস্ট এই তারকার জন্মদিনে লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
গান ছাড়াও আমাকে চেনার একমাত্র উপায় হচ্ছে আমার পোশাক। আর পোশাকের যে জিনিসটা প্রথমে সবার চোখে পড়ে, তা হচ্ছে হ্যাট বা টুপি। আমার সংগ্রহে প্রচুর হ্যাট আছে। কনসার্টে সাধারণত আমি ক্যাঙ্গল বা ফেইবিলিসের হ্যাট ব্যবহার করি। আর সাধারণভাবে সব সময় ফিশির হ্যাট পরি।
তবে আমার সংগ্রহে কাউয়ে হ্যাটও আছে, যদিও আমি কখনো তা পরি না। আগে কানে দুল পরতাম। তবে এখন আর পরি না। দুলটা এখন আর আমার কাছে ততটা আরামপ্রদ মনে হয় না। তবে আমার গলায় পরার জন্য অনেক নেকলেস বা চেন আছে।
যেহেতু ছেলেদের জন্য গলায় সোনা পরা উচিত নয়। তাই আমার সব চেনই অক্সিডাইজড মেটালের তৈরি। আর গলায় চেন পরার মূল কারণ, ভালো লাগে।
এসবের সঙ্গে আমি সব সময় পরি টি-শার্ট। এই জিনিসটা বছরের ১২ মাস আমার গায়ে থাকে। টি-শার্টের বেলায় আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ড বাছতাম। এখন আমাদের এখানে এক্সটেসি, টিমল প্রভৃতি দোকান হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকেই টি-শার্ট কিনি।
ভি গলা এবং গোল গলা উভয় ধরনের টি-শার্টই আমার পছন্দ। তবে তা অবশ্যই শরীরের সঙ্গে ফিট থাকতে হবে। তবে শীতকাল হলে টি-শার্টের ওপর ছাপিয়ে দিই মোটা ধরনের কোনো জ্যাকেট।
অনেকে যেমন সৌভাগ্যের প্রতীক ভেবে বাঁ হাতে ঘড়ি না পরে ডান হাতে পরে। আমারও তেমনি সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ডান হাতে বেশ কটি রিস্টব্যান্ড আছে। এগুলো পরলে আমি কাজে একধরনের উদ্যমতা অনুভব করি।
আর আমার ডান পাশ থেকে বাঁ পাশটা সব সময় ভারী মনে হয়। তাই রিস্টব্যান্ডগুলো পরলে মনে হয় দুই পাশেই ব্যালেন্স হলো।
এগুলোর পাশাপাশি আমি ডান হাতে ঘড়িও পরি। ঘড়ির মধ্যে আমার পছন্দসই কোম্পানি হচ্ছে লোগেন ও টাইসার্ট। ঘড়ি এবং রিস্টব্যান্ড ছাড়াও আমার দুই হাতের আঙুলে আছে পাঁচটি আংটি। এর মধ্যে তিনটি আংটি আমার খালা বলেছেন বলে পরছি। বাকি দুটির মধ্যে একটি আমার এনগেজমেন্টের আংটি, অন্যটি আমার শাশুড়ি আমাকে দিয়েছেন।
সব ধরনের জিনসই আমার ভালো লাগে। জিনসের প্যান্টের সঙ্গে ব্যবহার করি মোটা চামড়ার বেল্ট। জুতার ব্যাপারে মোটাসোটা যেকোনো বুটজুতাই আমার পছন্দ। কনসার্টে আমি সাধারণত কালো রঙের পোশাককে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এর একটি কারণ, ১০ বছর বয়স থেকে আমি কালো রঙের পোশাক পরছি এবং আমি নিজে কালো, তাই।
পোশাকের পাশাপাশি যে জিনিসটা আমার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা হচ্ছে গিটার। এটাকে এখন আমার কাছে আলাদা কিছু মনে হয় না, মনে হয় আমার শরীরের একটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। আমার সংগ্রহে বেশ কিছু গিটার আছে। এর মধ্যে দুটি ফেন্ডার স্টাটোকাস্টার।
একটা জন পেট্রোসিয়াম সিরিজের আইভানেজ, ভ্যানহেলেন মডেলের মিউজিকম্যান। জো স্যাটারানি মডেলের আইভানেজ। এসব ইলেকট্রিক গিটার ছাড়াও আমার দুটি অ্যাকুস্টিক গিটার আছে। এর মধ্যে একটা ইয়ামাহা আছে পিকআপ এবং ইকুয়ালাইজারসহ। আর ভারতীয় হোফনার।
আমি আমার মিউজিক-জীবনের প্রথমে বাজাতাম একটা জাপানি ট্রিসকো গিটার। এরপর বাজালাম রোল্যান্ড। তার পরপর আবার ট্রিসকো। এরপর হেন্ড্রো ও গার্কে। আমার সে ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে একটা সাদা রঙের ফেন্ডার গিটার আছে। সেটা আমার কাছে এখনো আছে।
এই গিটার দিয়েই শুরু হয়েছিল এলআরবির অগ্রযাত্রা। এরপর ফেন্ডার ব্ল্যাক, ওয়াশবর্ন। গিটারের সঙ্গে আমি আগে বিভিন্ন ধরনের ডিস্ট্রাকমন ব্যবহার করতাম। যেমন মেটাল জোন, ডিলে প্রভৃতি। এখন ব্যবহার করি ডিজিটেকের প্রসেসর আরপি-সিক্স। যদিও মাঝখানে কর্গের এ ফাইভ ব্যবহার করেছি।
আমার গিটার অ্যাম্পের মধ্যে আছে জেট ভবন সেডি ও কারভিন। তবে আমার স্বপ্নের অ্যাম্প হচ্ছে মার্শাল—যা আমার নেই।