টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে হাঁটা শুরু করেন অলি সাব
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে হাঁটা শুরু করেন অলি সাব

প্রিয় বই হাতে টেকনাফ থেকে হেঁটে তেঁতুলিয়ায় যাচ্ছেন সুনামগঞ্জের অলি

স্বপ্নরাজ?
জি, ফেসবুকে আমাকে সবাই স্বপ্নরাজ নামেই চেনে। তবে ভালো নাম অলি সাব।
সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগে থাকা অলি জানালেন, মা-বাবা চেয়েছিল বড় হয়ে ছেলে নামকরা মাওলানা হবে। এলাকায় এলাকায় গিয়ে ওয়াজ করবে। লোকে তাঁকে ‘অলি সাব’ বলে ডাকবে। এ কারণে নামের সঙ্গে আগেই ‘সাব’ জুড়ে দিয়েছেন।
অলি সাব দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাঁটার মিশনে নেমেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে হাঁটা শুরু করে ১৮ অক্টোবর পৌঁছান ঢাকায়। ২৮ অক্টোবর এসেছিলেন প্রথম আলো কার্যালয়ে। জানালেন, ৪০ দিনের লক্ষ্য নিয়ে তিনি হাঁটতে শুরু করেছেন। ঢাকায় কয়েক দিন বিরতি নিয়েছেন। আবার হাঁটতে শুরু করবেন ১ নভেম্বর।
অলি সাবের বয়স এখন ২৫। বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী। বাবা লুৎফুর রহমান কৃষক, মা রোকেয়া বেগম গৃহিণী। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। ‘বইয়ের পোকা’ বলতে যা বোঝায়, অলি সাব তা-ই। সারাক্ষণ বই নিয়ে আছেন। বাড়িতে পাঠাগারও গড়েছেন।

প্রিয় বই হাতে অলি সাব

এই হাঁটাও প্রিয় একটি বইকে কেন্দ্র করেই। অলি সাব বলেন, ‘আমার পড়া সেরা বই ‘‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী’’। বইটি পড়ে আমি বিখ্যাত সব মানুসের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি। তাঁদের কাজ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বইটি আমার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে। তাই আমি বইটির প্রচারণায় হাঁটছি। পথে পথে সবাইকে বইটি সম্পর্কে বলছি।’
এই হণ্টন অভিযানে অলি সাব কোনো হোটেল থাকেন না। কোনো দিন পরিচিত মানুষের বাসায় রাত যাপন করেন, তেমনি কোনো দিন হয়তো থাকেন মসজিদে।

অলির বইপ্রীতি

২০১৬ সালের কথা। কলম কিনতে এলাকার একটি বইয়ের দোকানে গিয়েছিলেন অলি। সেখানে ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী’ বইটি চোখে পড়ে। সেটি কিনে পড়া শুরু করেন। যতই পড়েন, ততই তাঁর আগ্রহ বাড়ে। বিখ্যাত মানুষের জীবনী তাঁকে টানে। বই কিনতে এরপর একদিন জেলা শহরে যান। সৃজনশীল বই ও নানা পণ্যের দোকান ‘মধ্যবিত্ত’ থেকে বই কেনেন। দোকানটির মালিক মানবেন্দ্র করের সঙ্গে পরিচিত হন। মানবেন্দ্র নিজেও বইপাগল মানুষ। অলির বই পড়ার আগ্রহ দেখে উৎসাহ দেন। এরপর সময় হলেই আসতেন মানবেন্দ্রর কাছে।

২০২২ সালে বাইসাইকেল নিয়েও জেলায় জেলায় ঘুরছেন অলি সাব

একপর্যায়ে শুধু বই পড়ার জন্য মধ্যবিত্ততে কাজ নেন অলি। তিন মাস ছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বই পড়া ছিল তাঁর নেশা। দোকানে তো বটেই, দোকান থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন একটি করে বই নিয়ে যেতেন। একপর্যায়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, প্রথমা প্রকাশনের বিপণন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অলির পরিচয় করিয়ে দেন মানবেন্দ্র কর। ঢাকায় গেলেই এসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বই কেনেন অলি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে তাঁকে বই উপহার দেওয়া হয়েছে। এই দুই প্রতিষ্ঠান তাঁকে বই কেনায় বিশেষ ছাড়ও দিয়ে থাকে। অলি জানান, এ পর্যন্ত পাঁচ শর মতো বই পড়েছেন। বিজ্ঞান, ভ্রমণবিষয়ক বই তাঁর বেশি ভালো লাগে।
২০১৮ সালে নিজের বাড়িতে একটি পাঠাগার গড়ে তোলেন। পাঠাগারের নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নরাজ বুক ক্লাব’। এলাকার অনেকেই তাঁর পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়েন। শুধু এলাকার মানুষকে নয়, দেশের মানুষকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে ২০২২ সালে বাইসাইকেল নিয়েও জেলায় জেলায় ঘুরছেন অলি সাব।