
ইনতিয়াজ মাহমুদের অভিযানটির নাম ‘তিস্তা থেকে টেকনাফ’। নীলফামারীর ডোমার উপজেলা থেকে কায়াক চালিয়ে যমুনা, পদ্মা, মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে যাবেন তিনি।
গত ১৮ অক্টোবর ডোমারের জিরো পয়েন্ট ঘাট থেকে এই কায়াকিং অভিযান শুরু করেন ইনতিয়াজ মাহমুদ। আজ ১৫তম দিনে আছেন সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর দোগাছি চরে। পথে তিনি লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়ার নদীপাড়ের বিভিন্ন এলাকা অতিক্রম করেছেন। কাল পাবনা হয়ে মানিকগঞ্জে পদ্মা নদীতে প্রবেশ করবেন। এভাবেই এগোতে থাকবেন আরও সামনের দিকে।
ইনতিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে অভিযান সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। তবে কয়েক দিন বেশি লাগতে পারে।’
পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনায়ার ইনতিয়াজ মাহমুদ পর্বতপ্রেমী মানুষ। জীবনের বড় একটা সময় পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে কাটিয়েছেন। তবে এ দেশে অত পর্বতই–বা কই? ভারত-নেপাল এমনকি বান্দরবানের পাহাড়ের নাগাল পাওয়াও যখন দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে, তখনই তাঁর মাথায় আসে নদী। ভাবলেন, ‘নদীর দেশ, তো নদীতে যাই না কেন?’
এভাবেই ২০২৩ সালে ইনতিয়াজের মাথায় কায়াকের পোকাটা ঢোকে। অল্প অল্প করে কায়াকের কেরামতি রপ্ত করেন। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোয় ছোট ছোট কয়েকটা ট্রিপ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে অষ্টগ্রাম, কর্ণফুলী বেয়ে কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রাম, বুড়িগঙ্গায় সদরঘাট থেকে চাঁদপুর। আর গত জুনে পদ্মা নদীতে কায়াক চালিয়ে পৌঁছান রাজশাহী থেকে চাঁদপুর।
সেই রোমাঞ্চের পরই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কায়াক চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তাঁর এই কায়াকিং অভিযান।
ইনতিয়াজ বলেন, ‘নদীতে পানি অনেকটাই কমে এসেছে এখন। কোথাও কোথাও চরও পড়ে গেছে। তবে কায়াক চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। আমি দারুণ উপভোগ করছি।’
কায়াক নিয়ে সকালেই নদীতে নামে ইনতিয়াজ। দুপুরে বিরতি দিয়ে আবার চালাতে শুরু করেন। এর মধ্যেই ঠিক করে নেন সামনে কোন লোকালয়ে রাত কাটাবেন। কখনো কারও বাড়ি, তো কখনো মসজিদ-মাদ্রাসা, পাড়ার ক্লাবঘর, ড্রেজার, বাল্কহেড, বাঁধের কনস্ট্রাকশন সাইটেও তাঁবু পেতে রাত কাটাচ্ছেন তিনি।
ইনতিয়াজ বলেন, ‘এই সবকিছু ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত যেটা মনে দাগ কেটে থাকছে নদীপাড়ের মানুষ আর তাঁদের নিঃস্বার্থ আতিথেয়তা, এখানে-ওখানে পাওয়া অকৃত্রিম ভালোবাসা, নদীপাড়ের কঁচি–কাঁচাদের উচ্ছ্বাস’।
ইনতিয়াজ মাহমুদের এই ‘তিস্তা থেকে টেকনাফ’ অভিযানে সহযোগী হিসেবে আছে প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’।