সুন্দরবনের পাশে লিটনের ‘বাদাবন’

সুন্দরবনঘেঁষা গ্রামটার নাম দক্ষিণ চিলা। গ্রামের মানুষ সুন্দরবনকে বলে বাদাবন। লিটন জমাদ্দারও তাঁর পরিবেশবান্ধব কটেজের নাম রেখেছেন ‘বাদাবন’। উদ্যোগের শুরুতে অনেকের বাধা পেয়েছেন। আর এখন পাচ্ছেন বাহবা। লিখেছেন শেখ আল-এহসান

পুকুরপাড়ে বাদাবনের একটি কটেজ
ছবি: সংগৃহীত

মোংলায় ট্যুর গাইডের একটা প্রশিক্ষণ চলছিল। কী ভেবে যেন তাতে নাম লেখালেন লিটন জমাদ্দার। সময়টা ২০১০। মোংলা সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র তখন লিটন। অতিথিদের সঙ্গে কথা বলা, সংকটের সময় উপায় খুঁজে বের করা, পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী ঘুরে বেড়ানো—এমন অনেক কিছুই শেখানো হলো। মোংলায় থেকে বিভিন্ন নৌযানে সুন্দরবন ভ্রমণে যান পর্যটকেরা। প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁদেরই গাইড হিসেবে কাজ শুরু করলেন। এইচএসসি পাসের পর মোংলা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হলেন। গাইডের কাজও চলতে থাকল। 

কাজ করার সময় দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকই স্থানীয় কোনো গ্রামে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলতেন। দু-একজন তাঁদের বাড়িতেই থাকার আবদার করতেন। লিটন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি সাদামাটা। পর্যটক রাখার মতো গোছানো না। তাই বাড়িতে রাখা সম্ভব হতো না।’

মানুষের আগ্রহ তাঁকে কিছু একটা করতে উৎসাহিত করে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএসএআইডির ইকো কটেজ গড়ে তোলার প্রকল্প চলছিল। লিটনকেও প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি তো আগে থেকেই ভাবছিলেন। প্রস্তাব পেয়ে লুফে নেন।

পর্যটকদের সঙ্গে লিটন জমাদ্দার

কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি। কটেজ হলে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসবেন, গ্রামের শান্তি নষ্ট হবে—এসব অজুহাতে আপত্তি তুললেন গ্রামের মানুষ। এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও অমত। তাঁদের কোনোমতে বোঝানো গেলেও বেঁকে থাকলেন প্রতিবেশীরা।

আপত্তির মধ্যেই ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করল লিটনের বাদাবন ইকো কটেজ। শুরুতে দুই ঘরের কটেজে ৮-১০ জন থাকতে পারতেন। দিনে দিনে পর্যটক বাড়তে থাকেন। লিটনও কটেজের সংখ্যা বাড়ান। এরই মধ্যে শুরু হলো করোনা। পর্যটকের খরা যায় অনেক দিন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর নতুন জীবন পেয়েছে বাদাবন। সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই এখন পর্যটক থাকছেন। বাদাবনে এখন ৩৫ থেকে ৪০ জন পর্যটক থাকতে পারেন। লিটন বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল, ভালো কিছু করতে পারলে পর্যটক আসবেন, যা করেছি সম্পূর্ণ নিজের বুদ্ধি দিয়েই করেছি। একসময় যাঁরা কটুকথা বলতেন, তাঁরাই এখন উপকারভোগী।’

লিটনের বাদাবনে পর্যটক এলে গ্রামের মানুষেরও যে আয় হয়। মাছ, মুরগিসহ নানা কিছুর প্রয়োজন হয়, গ্রামের মানুষই সেগুলো সরবরাহ করেন। নৌকায় পর্যটকদের সুন্দরবনে ঘুরে দেখানোর কাজও তাঁরাই করেন। তাই লিটনের কাজে এখন সবাই সহযোগিতা করেন। লিটন বলেন, ‘শুধু সহযোগিতা নয়, অনেকে কটেজ সম্প্রসারণের প্রস্তাবও দেন।’

বাদাবন ইকো কটেজটি বাগেরহাট জেলার মোংলার দক্ষিণ চিলায়

জেনে নিন

বাদাবন ইকো কটেজটি বাগেরহাট জেলার মোংলার দক্ষিণ চিলায়। ঢাকা থেকে মোংলার বাস আছে। বাস থেকে নেমে মোংলা নদী পার হতে হবে। তারপর ১০ কিলোমিটার পিচঢালাই পথ। বাদাবনের দুই দিন এক রাতের প্যাকেজ জনপ্রতি ৩ হাজার ৭০০ টাকা। প্যাকেজের মধ্যেই থাকা-খাওয়া, সুন্দরবনে বেড়ানো, স্থানীয় মানুষের জীবনযাপন উপভোগের সুবিধা। যোগাযোগ: ০১৭৩৬ ৩৩১৫১৫