আমাদের গন্তব্য কম্বোডিয়ার আঙ্করভাট, তাই রাজধানী নমপেন ছাড়তে হলো ভরসন্ধ্যায়। নমপেন থেকে সিয়েম রিপের দূরত্ব প্রায় ৩১৮ কিলোমিটার। প্লেন, বাস, মিনিবাস ও গাড়িতে করে যাওয়া যায়। স্লিপার বাসে আমাদের লেগেছে ছয় ঘণ্টা। ভাড়া জনপ্রতি ১০–১৮ ডলারের মধ্যে। রাতের ভ্রমণে আশপাশের দৃশ্যগুলো সে অর্থে দেখতে পাইনি।
আফসোসের বিষয় হলো, নমপেন পৌঁছেই যদি সিয়েম রিপের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়তাম, তাহলে দিনের আলোয় হয়তো অনেক কিছু চোখে পড়ত। তবে এটিও ঠিক, নমপেনের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা হতো না।
সিয়েম রিপে যাওয়ার পুরোটা সময় নমপেনে দেখে আসা রয়্যাল প্যালেস, গোল্ডেন টেম্পলের পাশাপাশি কিলিং ফিল্ডটাও চোখে ভাসছিল। হলোকাস্ট হোক কিংবা যুদ্ধ, এর ভয়াবহতা আমাকে ভীষণ বিষণ্ন করে। কিলিং ফিল্ড দেখে মনে হচ্ছিল, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এমনকি ফিলিস্তিনের ওপরে চলমান এই নির্মম গণহত্যার স্মৃতি যদি এভাবে সংরক্ষণ করা হতো!
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় কম্বোডিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সিয়েম রিপে এসে পৌঁছালাম। আলো-আঁধারিতে শহরটিকে জাদুতে মোড়া রূপকথার প্রাচীন কোনো নগরী মনে হচ্ছিল। বাস থেকে নেমে আমরা যখন সিয়েম রিপ সেন্টার হোটেলে এলাম, তখন রাত প্রায় তিনটা। নির্মল বাতাসে বয়ে যাচ্ছিল আমাদের হোটেলের বারান্দায়।
আমরা যে সময় গেছি, সে সময় কম্বোডিয়ায় গ্রীষ্মকাল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরোতে হলো। হাতে একদম সময় নেই। এখানকার হোটেল, হোম-স্টে এবং রেস্টহাউসগুলো বেশ সাজানো–গোছানো, ঝকঝকে। সেন্টার হোটেল থেকে আমাদের অভীষ্টের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার।
বলে রাখা ভালো, পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের কথা শিশুদেরও জানা। অষ্টমটির খোঁজ মিলেছে দীর্ঘদিন ছাড়া, বেশ রয়েসয়ে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে আঙ্করভাটকে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রোমান শহর পম্পেইকে হারিয়ে অভিনব স্থাপত্যশৈলী ও বিস্ময়কর সৌন্দর্যে পর্যটকদের মুগ্ধ করে চলেছে এই প্রাচীন মন্দির।
আঙ্করভাটে প্রবেশের জন্য শহর থেকে এন্ট্রি টিকিট করিয়ে নিতে হয়। এক দিনের জন্য জনপ্রতি ৩৭ ডলার। আপনি যদি তিন দিন যেতে চান, এর জন্য গুনতে হবে ১১১ ডলার। সিয়েম রিপ থেকে টুকটুকে করে আঙ্করভাটে যেতে মিনিট বিশেক লাগে। এ পর্যায়ে আপনি চাইলে গাইডের সহায়তা নিয়ে পারেন। প্রতি ঘণ্টায় ওরা ২০ ডলারের মতো নেয়। দরদাম করলে কিছুটা কমাতে পারে।
আমাদের টিমে স্থানীয় একজন থাকায় গাইডের প্রয়োজন হয়নি। ৫টা ২০ নাগাদ আমরা পৌঁছলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে দীর্ঘ একটা পুল পেরিয়ে দাঁড়ালাম মন্দিরের সামনে। অনেক লোক সেখানে। মন্দিরটা তখনো খুব অস্পষ্ট দেখাচ্ছিল। ভোরের আলো ফুটতেই মনে হলো, সূর্যটা যেন মন্দিরের গা ঘেঁষে আকাশে উঠল। মূল তোরণ থেকে আঙ্করভাটের ল্যান্ডস্কেপ কিংবা মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন এই দৃশ্য কতটা মনোগ্রাহী!
এবার মন্দিরের ভেতরে যাওয়ার পালা। তিন ধাপের মন্দির। জলের সুরক্ষা পরিখাসহ আঙ্করভাট প্রায় ২০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের প্রথম ধাপে উঠলাম। এই ধাপের চারদিকে লম্বা বারান্দা আর নকশা করা দেয়াল। হাজার হাজার মিটার প্রশস্ত চিত্রাবলির মাধ্যমে হিন্দু পৌরাণিক কিংবদন্তি ও সমসাময়িক জীবনের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রথমটি দেখে মনে হলো মহাভারতের যুদ্ধ। একপাশে ভীস্ম তীরের আঘাতে শয্যাশায়ী, অন্যদিকে রথে অর্জুন আর তাঁর সারথি কৃষ্ণ। চারপাশে যুদ্ধরত অনেক সৈন্য আর ঘোড়া।
রামায়ণ, সমুদ্রমন্থনের পাশাপাশি রাজা সূর্য বর্মণের জীবনী নিয়েও দুটি নকশাকাটা দেয়াল চোখে পড়ল। বারান্দার ভেতর থেকে আরেকটা লম্বা সিঁড়ি উঠে গেছে দ্বিতীয় ধাপে। আসল সিঁড়িগুলো এতটা ক্ষয়ে গেছে যে নতুন কাঠের সিঁড়ি বানানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপটি আকারে কিছুটা ছোট, এর চারপাশে চারটি স্তূপ। স্তূপগুলোর মধ্যে আবার টানা বারান্দা। প্রতিটি স্তূপের গায়ে সূক্ষ্ম কারুকার্য, যেদিকে তাকাই, মনে হয়, অপ্সরারা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। সময়ের পরিক্রমায় দেয়ালে খোদিত চিত্র ধ্বংস হলেও শুরুর দিকে মন্দিরের গায়ে ১ হাজার ৮৬০ জন অপ্সরার চিত্র ছিল।
এখান থেকে শেষ ধাপে ওঠার সিঁড়ি ভীষণ খাঁড়া আর অনেকটা উঁচু। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় “মানুষের মৃত্যু হ’লে” কবিতাটি বারবার মনে পড়ছিল। জীবনানন্দ দাশ বোধ হয় তাঁর কবিতায় এমন সিঁড়ির কথাই বলেছিলেন—
‘একদিন বুদ্ধকে সে চেয়েছিলো ব’লে ভেবেছিলো।
একদিন ধূসর পাতায় যেই জ্ঞান থাকে—তাকে।
একদিন নগরীর ঘুরোনো সিঁড়ির পথ বেয়ে
বিজ্ঞানে প্রবীণ হ’য়ে—তবু—কেন অম্বাপালীকে
চেয়েছিলো প্রণয়ে নিবিড় হ’য়ে উঠে!
চেয়েছিলো—
পেয়েছিলো শ্রীমতীকে কম্প্র প্রাসাদে:
সেই সিঁড়ি ঘুরে প্রায় নীলিমার গায়ে গিয়ে লাগে;
সিঁড়ি উদ্ভাসিত ক’রে রোদ;
সিঁড়ি ধ’রে ওপরে ওঠার পথে আরেক রকম
বাতাস ও আলোকের আসা-যাওয়া স্থির ক’রে কি অসাধারণ...’
(মানুষের মৃত্যু হ’লে/জীবনানন্দ দাশ)
ওপরে উঠে দেখলাম, এই ধাপের চার কোণেও রয়েছে চারটি স্তূপ, মাঝখানে একটি গর্ভগৃহ। দেয়ালের গায়ে বরাবরের মতোই নিখুঁত কারুকার্য। গর্ভগৃহে এককালে বিষ্ণুমূর্তি রাখা ছিল, বুদ্ধের প্রতিকৃতির আড়ালে আজও তার দেখা মেলে। এদিক-ওদিক কিছুক্ষণ ঘুরে নিচে নামতে নামতে মনে হলো, একসময় যে পথ দিয়ে রাজা দ্বিতীয় সূর্য বর্মণ ও প্রাচীন খেমার রাজ্যের লোকজন হেঁটেছেন, সেই পথ ধরে আমিও হাঁটছি। এই অনুভূতি প্রকাশের মতো কোনো শব্দ হয়তো আমার অভিধানে নেই। ইত্যবসরে রাজা দ্বিতীয় সূর্য বর্মণকে নিয়ে দু-চার ছত্র না লিখলেই নয়।
সূর্য বর্মণের (শাসনকাল: ১১১৩-১১৫০ খ্রিষ্টাব্দ) শাসনামলে ২৮ বছর ধরে আঙ্করভাটের নির্মাণকাজ চলতে থাকে। জনশ্রুতি আছে, দিবাকর পণ্ডিত (১০৪০-১১২০) নামের একজন ব্রাহ্মণের অনুরোধে মন্দিরটি নির্মিত হয়। শিলালিপিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সূর্য বর্মণের বাবা ছিলেন ক্ষিতিন্দ্রাদিত্য আর মা নরেন্দ্র লক্ষ্মী। তিনি বিবাহিত ছিলেন, তবে স্ত্রীর নাম জানা যায়নি। তরুণ বয়সে সূর্য বর্মণ সিংহাসন আরোহণের জন্য সুকৌশলে এগোন, যদিও তা বৈধ ছিল।
আঙ্করভাটের মোটিফগুলো হিন্দুধর্ম থেকেই উদ্ভূত। পাঁচটি কেন্দ্রীয় রত্ন (টাওয়ার) হিন্দু দেবদেবীর বাসস্থান সুমেরু পর্বতের শিখরকে নির্দেশ করে। এই মন্দিরে স্থাপত্যবিদ্যার দুটি অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। একটা টেম্পল মাউন্টেন বা পাহাড়ি মন্দিরের ধাঁচে, অন্যটি গ্যালারির ধাঁচে। মনে প্রশ্ন জাগে, মন্দিরটির ভেতরে-বাইরে এত সুরক্ষা পরিখা কেন রাখা হয়েছিল? কম্বোডিয়া দুই ঋতুর দেশ। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা গবেষণা করে দেখেছেন, গ্রীষ্মকালীন জলসংকট দূর করার পাশাপাশি বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ আটকাতে এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। স্থাপত্য কৌশলে কতটা দক্ষ হলে কোনো জনপদে এমন চিন্তার উন্মেষ ঘটে, তা ভেবে দেখার মতো বিষয়। এ ছাড়া পূর্ববর্তী রাজাদের শৈব প্রথা ভেঙে মন্দিরটি বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। শিবের পরিবর্তে বিষ্ণু সূর্য বর্মণের আরাধ্য দেবতা হওয়ায় আঙ্করভাটের অভিমুখ পশ্চিম দিকে, যা বিষ্ণুর সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে অন্যান্য খম স্থাপত্য পূর্বমুখী।
১১৪৫-১১৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সূর্য বর্মণ মারা যান। সম্ভবত চম্পা রাজ্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সময়ই তাঁর মৃত্যু ঘটে। সূর্য বর্মণের পর তাঁর মামাতো ভাই দ্বিতীয় ধরণীন্দ্র বর্মণ সিংহাসনে বসেন। এরপর থেকেই খম সাম্রাজ্য দুর্বল হতে শুরু করে, শাসনব্যবস্থাও হয়ে যায় যাচ্ছেতাই।
এখন কথা হলো, রাজা দ্বিতীয় সূর্য বর্মণ কী আঙ্করভাট নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছিলেন? আর যদি করেও থাকেন, তাহলে বিষ্ণুমন্দির কীভাবে বৌদ্ধমন্দিরে পরিণত হলো? রাজা দ্বিতীয় সূর্য বর্মণের মৃত্যুর পর মন্দিরের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। যদিও দেয়ালের কিছু কারুকাজ ছাড়া প্রায় সবটুকুই তিনি গুছিয়ে এনেছিলেন।
দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে বেশ কিছু মিথ প্রচলিত থাকলেও যুক্তিযুক্ত কথা হলো, ইতিহাসে ধর্মের রদবদল হামেশাই ঘটে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন উপাদানও বড় ভূমিকা রাখে। যেমনটা পাল সাম্রাজ্যের পতন এবং সেন বংশের উত্থানের সময় হয়েছিল; কিংবা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বখতিয়ার খিলজির মাধ্যমে মুসলিম সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়েছিল। এদিকে ১১৭৭ সালে আঙ্কর শহরটি খামেরদের চিরাচরিত শত্রু চম্পা রাজ্যের (বর্তমান দক্ষিণ ভিয়েতনামের উপকূলে অবস্থিত একটি অংশ) সৈন্যদের হাতে পরাজিত ও লুণ্ঠিত হয়। ১১৭৮ সালে রাজা সপ্তম জয় বর্মণ (১১২০-১২১৮ খ্রিষ্টাব্দ) খেমার সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে বহিরাক্রমণ পরাহতের পাশাপাশি রাজ্যটি পুনর্গঠন করেন।
তিনি আঙ্করভাট থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে রাজধানী স্থানান্তরের পাশাপাশি একটি নতুন মন্দির স্থাপন করেন। ফলে আঙ্করভাটে জনসমাগম কমে যায়। সপ্তম জয় বর্মণ ছিলেন রাজা দ্বিতীয় ধরণীন্দ্র বর্মণ ও রানি জয়রাজা দেবীর পুত্র। রানির মৃত্যুর পর ধরণীন্দ্র বর্মণ ইন্দ্র দেবীকে বিয়ে করেন। ইন্দ্র দেবী ছিলেন জয়রাজা দেবীর আপন বোন। দুই বোনই বৌদ্ধধর্ম ও দর্শন চর্চা করতেন। দেখাদেখি ধরণীন্দ্র বর্মণ ও তার পুত্র জয় বর্মণ বৌদ্ধধর্মে অনুরাগী হয়ে ওঠেন। একটি পর্যায়ে আঙ্করভাট বৌদ্ধ উপাসনালয়ে রূপান্তরিত হয়। ভাস্কর্যগুলোও প্রতিস্থাপিত হয়। শত লুণ্ঠন, রূপান্তর, প্রতিস্থাপন সত্ত্বেও এই মন্দিরের দেয়ালের দিকে তাকালে হিন্দু ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির মেলবন্ধন চোখে পড়ে। আঙ্কর প্রত্ন-উদ্যানে আঙ্করভাট ছাড়াও অনেক মন্দির রয়েছে। প্রতিটা মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী আর কারুকাজ নিয়ে লিখতে গেলে সহস্র পঙ্ক্তি লেখা যাবে।
শেষ দিন আমরা যখন আঙ্করভাটের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলাম, তখন সূর্য ডুবি ডুবি করছে। শেষ বিকেলের সবটুকু আলো নিয়ে আঙ্করভাটের বারান্দাগুলো লুকোচুরি খেলছিল। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখছিলাম। হঠাৎ আমাদের দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে জীবনানন্দ যেন ফিসফিস করে বলে উঠলেন—
‘একদিন সৃষ্টি পরিধি ঘিরে কেমন আশ্চর্য এক আভা দেখা গিয়েছিলো;
মাদালীন দেখেছিলো—আরো কেউ—কেউ;
অম্বাপালী, সুজাতা ও সংঘমিত্রা পৃথিবীর লৌকিক সূর্যের
আড়ালে আর—এক আলো দেখেছিলো!’
(এইখানে সূর্যের/জীবনানন্দ দাশ)
কম্বোডিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচীন উপদ্বীপের দেশ। ১ লাখ ৮১ হাজার ৩৫ বর্গকিলোমিটারের এই দেশের উত্তরে লাওস, উত্তর-পশ্চিমে থাইল্যান্ড, পূর্বে ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে থাইল্যান্ড উপসাগর।
দুই ঋতুর দেশ কম্বোডিয়ায় বছরের অর্ধেক সময়জুড়ে থাকে গ্রীষ্মকাল, বাকি ছয় মাস বর্ষা। সবচেয়ে বড় শহর রাজধানী নমপেন। একদিকে নির্জন নিসর্গ, অন্যদিকে মানবসৃষ্ট স্থাপনা—দুদিক থেকেই সমৃদ্ধ দেশটি। খেমার রাজ্যের স্থাপত্যশিল্প, মনদালকিরির গহিন অরণ্য, প্রবহমান মেকং নদী, কোহ রং সানলোয়েমের বিস্তৃত নীল জলরাশি, কার্ডামম পর্বতমালা আর আঙ্করভাটের নির্জনতা অনুভব করার জন্য কম্বোডিয়া হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণ গন্তব্য।
দেশটিতে যাওয়াও বেশ সহজ। ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা নেই বললেই চলে। যথাযথ তথ্য দিয়ে আবেদন করলে তিন কার্যদিবসের মধ্যেই ভিসা পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের ফ্লাইট পাবেন। এ ছাড়া ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়েও সাশ্রয়ী খরচে দেশটির প্রধান প্রধান পর্যটন স্থান দেখে আসতে পারবেন। কেউ যদি আরেকটু গুছিয়ে পরিকল্পনা করতে চান, তাহলে থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুর হয়ে কম্বোডিয়ায় আসতে পারেন। এতে খরচ সামান্য বাড়লেও আপনার ঝুলিতে যোগ হবে তিনটি দেশের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞান।
যাঁরা আমার মতো খুব কম সময় হাতে নিয়ে আসবেন, তাঁরা নমপেনে পৌঁছেই চটজলদি পরিকল্পনা তৈরি করে নেবেন। রাজধানী নমপেনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়্যাল প্যালেস, গোল্ডেন টেম্পল, কিলিং ফিল্ড, রিভার ক্রুজ, সিল্ক আইল্যান্ড, ন্যাশনাল মিউজিয়াম ও নাইট মার্কেট অন্যতম। দর্শনীয় স্থানগুলো বেশ কাছাকাছিও। হাতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় থাকলেই দেখে শেষ করা যায়। তবে যানবাহন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় আপনাকে দিতেই হবে। সহজলভ্য পরিবহন ‘টুকটুক’ ভাড়া করতে পারবেন অনায়াসে। সঙ্গে খুচরা ডলার অবশ্যই রাখবেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টুকটুক–চালক খুচরা দিতে পারেন না।