Thank you for trying Sticky AMP!!

‘ইতিবাচক’ ‘নেতিবাচক’ দুই ধরনের প্রতিক্রিয়াই আমাকে উৎসাহিত করে

আট বছর ধরে আমি নিয়মিত ‘অধুনা’র ‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে আইনি পরামর্শ দিচ্ছি। আমার আগে বেশ কয়েকজন প্রথিতযশা বিজ্ঞ আইনজীবী এ কলামটি লিখতেন, আমি সেটার একজন নিয়মিত পাঠক ছিলাম। এখনো অনেক জায়গায় নিয়মিত আমার লেখা ছাপা হয়। কিন্তু ‘অধুনা’র এ কলামটি প্রকাশ হলে সকাল থেকেই তার পাঠক প্রতিক্রিয়া টের পাই। তাই প্রথম আলো পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে সব সময় অনেক ভাগ্যবান মনে করি!

ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

আইনি সমস্যার সরাসরি সমাধান দেওয়ার মাধ্যমে পাঠকের কাছে পৌঁছানোর যে আত্মতৃপ্তি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার লেখা এ কলামটি পড়ে দেশ-বিদেশে বসবাসরত বহু পাঠক আমার সঙ্গে নিয়মিত ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেন।

পাঠকদের প্রতিক্রিয়ার ‘ইতিবাচক’ ও ‘নেতিবাচক’ দুটি দিকই আমাকে উৎসাহিত করে। পাঠকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত ই–মেইল, চিঠি ও ফোন পাই; সেগুলোয় কোনো লেখা নিয়ে যেমন প্রতিক্রিয়া থাকে, তেমনি থাকে উপকার পাওয়ার স্বীকারোক্তি। ফোন করেও অনেকে আমার কাছে আইনি সমাধান চান। কেউ কেউ লম্বা ই–মেইল করে জানান, কীভাবে তাঁরা উপকৃত হয়েছেন আমার লেখা পড়ে।

Also Read: স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়েছে, কীভাবে আইনি প্রতিকার পাব

দীর্ঘ আট বছরে অভিজ্ঞতা জমেছে অনেক, লিখে শেষ করা যাবে না। এই তো কিছুদিন আগে এক নারী আমাকে ফোন করেন, যিনি ‘অধুনা’র এই আইনি পরামর্শ কলামের নিয়মিত পাঠক। জানালেন, তিনি একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। একসময় ছেলেটি তাঁর কাছে টাকা দাবি করে, না দিলে তাঁর ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে তিনি জানতে পারেন ছেলেটি দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করার উদ্দেশ্যে সে মেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করে। ফোনে তাঁর কথা শুনেই বুঝতে পারছিলাম, মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েছেন। একপর্যায়ে তাঁর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। তিনি কাউকে বিষয়টি জানাতে পারছিলেন না। বলতেও ভরসা করতে পারছিলেন না। সমাধানের জন্য তাই আমাকে ফোন করেছিলেন। আমার পরামর্শে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সাহায্য নেন। পরে তাঁর পরিবারের কাছেও বিষয়টি বিশদভাবে জানান। সবার সহায়তায় তিনি সমস্যাটি থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। প্রতিনিয়তই পাঠকদের কাছ থেকে এ ধরনের নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই।

এসব অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে আমার পেশাগত জীবনকে সমৃদ্ধ করে। আমার লেখা পড়ে, আমার পরামর্শ মেনে কেউ উপকৃত হয়েছেন, এটা ভাবলে আইনজীবী হিসেবে নিজেকে মনে হয় সার্থক। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিকের আইনি পরামর্শ কলামের লেখক হওয়ায় দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। এটি একটি কঠিন দায়িত্ব। অনেক সময় এমন কিছু প্রশ্ন আসে, স্পর্শকাতর হওয়ায় যেটার পরামর্শ ছাপা যায় না। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করি। কখনো হয়তো কারও সমস্যায় যে পরামর্শ দিয়েছি, তার পাল্টা প্রশ্নও আসে আরেক পক্ষ থেকে। সব মিলিয়ে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া দেখলে প্রথম আলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বোঝা যায়।

পাঠকের পাশাপাশি একজন আইনজীবী হিসেবে প্রথম আলোর সঙ্গে এই পথচলা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। প্রথম আলোর নিষ্ঠা ও সাহস আমাকে ভালো ও আলোর সঙ্গে থাকার পথ দেখায়। আমার কাছে মনে হয়েছে প্রথম আলোর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের সবার কাছে এটি একটি বৃহৎ পরিবার। এই পরিবারে একে অন্যের পাশে সব সময় আছেন। আমি মনে করি, এখন এটা শুধু আমার পেশাগত নয়, ব্যক্তিগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন!

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট