কাদম্বিনী বসু বিয়ের পর পরিচিতি পান ডা. কাদম্বিনী গাঙ্গুলি হিসেবে
কাদম্বিনী বসু বিয়ের পর পরিচিতি পান ডা. কাদম্বিনী গাঙ্গুলি হিসেবে

বরিশালের এই মেয়ে যেভাবে ভারতবর্ষের প্রথম নারী চিকিৎসক হয়েছিলেন

বরিশালের মেয়ে কাদম্বিনী বসু। যাঁর কারণে প্রথম ১৮৭৭ সালে নারীদের জন্য কলকাতায় খুলতে হয়েছিল কলেজ। যে কলেজকে বলা হয় পুরো এশিয়ার মধ্যে প্রথম মহিলা কলেজ। সেখানেই ক্ষান্ত হননি তিনি; একের পর এক বন্ধ দুয়ার খুলে হয়ে ওঠেন গোটা ভারতের প্রথম নারী চিকিৎসক। রীতিমতো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু করেছিলেন প্র্যাকটিস, যিনি প্রাইভেটে রোগী দেখতে যেতেন টাট্টু ঘোড়ার গাড়িতে করে। এখানে রইল অবিভক্ত ভারতের প্রথম নারী চিকিৎসক কাদম্বিনীর লড়াইয়ের গল্প। আজ পড়ুন প্রথম পর্ব

৩১ মে ১৯৭৯। দৈনিক ইত্তেফাকে একটি লেখায় সরকারকে রীতিমতো ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ জানালেন সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা নামের এক নারী। তিনি লিখলেন, ‘যদি আমি পুরুষদের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করিতে পারি, তবে শুধু মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ার জন্য আমাকে যেন আমার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয়।’

এফ–২৭ বিমানের ককপিটে বসে আছেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা

রোকসানার এই চ্যালেঞ্জের পেছনে ছিল একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চার শব্দের একটি বাক্য, ‘শুধু পুরুষ প্রার্থীদের জন্য’। যে বাক্য আটকে দিয়েছিল তাঁর আকাশে ওড়ার স্বপ্ন।
রোকসানার এই দাবির পক্ষে সেই সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল গোটা দেশ।

সরকার পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে ‘শুধু পুরুষ প্রার্থীদের জন্য’ কথাটি তুলে নেয়। ওই বছরই পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন রোকসানা, ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ বিমানে। রোকসানার এই চিঠির আগ পর্যন্ত পাইলট হিসেবে নারীদের আকাশে ওড়ার অনুমতি ছিল না।

রোকসানার এই লড়াইয়ের ঠিক ১০০ বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে তোলপাড় তুলেছিলেন আরেক বাঙালি নারী, কাদম্বিনী বসু। যাঁর দরুন সেই সময় নারীদের জন্য কলকাতায় খুলতে হয়েছিল কলেজ।

যে কলেজ পুরো এশিয়ার মধ্যে প্রথম মহিলা কলেজ বলে জানা যায়। সেখানেই ক্ষান্ত হননি, একের পর এক বন্ধ দুয়ার খুলে হয়ে ওঠেন গোটা ভারতের প্রথম নারী চিকিৎসক। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন কাদম্বিনী বসু।
এখানে রইল অবিভক্ত ভারতের প্রথম নারী চিকিৎসক কাদম্বিনীর লড়াইয়ের গল্প।

বরিশালের মেয়ে

ডাকনাম বিনি, পুরো নাম কাদম্বিনী বসু। বরিশালের গৌরনদীর চাঁদশী গ্রামে কাদম্বিনীর পৈতৃক নিবাস। ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী বাবা ব্রজকিশোর বসু ছিলেন বিহারের ভগলপুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ১৮৬১ সালে কাদম্বিনীর জন্ম। চাঁদশী নাকি ভগলপুরে, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে কাদম্বিনীর শৈশব যে ভগলপুরে কেটেছে, এটা নিশ্চিত।

আর সেখানেই পড়াশোনার হাতেখড়ি। কাদম্বিনীর বাবা ব্রজকিশোর বসুর হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের প্রথম মহিলা সমিতি। নারীমুক্তি নিয়ে যাঁর লড়াই, তাঁর কন্যা যে ছোটবেলা থেকেই সেই দলে ভিড়বেন, এটা তো জানা কথা।

কলকাতার বিধান সরণীর সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ

হলোও তা–ই, বাবার উৎসাহেই কাদম্বিনীর পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখা দিল। আর তাই মাত্র ১৩ বছর বয়সে মেয়েকে কলকাতায় নিয়ে এলেন বাবা। হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ে ভর্তির কিছুদিন পর সেটা বন্ধ হয়ে গেলে বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় নামের আরেকটি বোর্ডিং চালু হলে মেয়েকে সেখানে ভর্তি করেন ব্রজকিশোর।

আর এখানে পরিবারের বাইরে একা টিকে থাকার যে চ্যালেঞ্জ কাদম্বিনী নিয়েছিলেন, সেখান থেকেই তাঁর চরিত্রে দেখা দিল এক দৃঢ়তা। কলকাতায় দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীকে শিক্ষক হিসেবে পেলেন কাদম্বিনী। পরে এই দ্বারকানাথই তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন পাকাপাকি। কাদম্বিনী বসু হয়ে যান কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি।

পড়তে শুরু করার দুই বছরের মধ্যেই কাদম্বিনীদের এ স্কুলটিও নানা মানুষের চাপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। আর এ সময় স্কুলটিকে বেথুন স্কুলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।

রইল বাকি এক

বেথুন স্কুল কাদম্বিনীর কল্যাণে কলেজে রুপান্তরিত হয়

মেয়েদের একটি ব্যাচকে এনট্রান্স পরীক্ষায় বসানোর লক্ষ্যে পড়াশোনা করাতে থাকে বেথুন স্কুল। সেই ব্যাচেরই ছাত্রী ছিলেন কাদম্বিনী। কিন্তু সেই সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না থাকায় নারীদের এনট্রান্স পরীক্ষায় বসার কোনো সুযোগ ছিল না।

শিক্ষকদের সঙ্গে কাদম্বিনী বসুও আওয়াজ ওঠালেন, চাইলেন পরীক্ষায় বসার অনুমতি। অবশেষে ১৮৭৭ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের এক সভায় সেই অনুমোদন দিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সমাজের একাংশ থেকে নারীদের এই এনট্রান্স পরীক্ষার অনুমোদন নিয়ে কটাক্ষ শুরু হলো। তবে সেই সময়ে সংখ্যায় নগণ্য হলেও ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন দ্বারকানাথের মতো আধুনিক কিছু মানুষ। ছাত্রীদের উৎসাহ দিতে লাগলেন তাঁরা।

অন্যদিকে রক্ষণশীল সমাজপতিদের পক্ষ নিয়ে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ নামক একটি পত্রিকা সেই সময় লিখেছিল, ‘আমরা স্ত্রীশিক্ষার বিরোধী নহি। কিন্তু তাহাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি লইয়া যে কি ফল হইবে, বলিতে পারি না। বাঙালী মেয়েরা কি বিএল পরীক্ষা দিয়া আদালতে ওকালতি করিবেন?’

পত্রিকার কর্তাব্যক্তিরা অলীক স্বপ্ন হিসেবে যে ওকালতির উদাহরণ টানলেন, তার চেয়ে ঢের ‘ভয়ংকর কাণ্ড’ যে পরের ১০ বছরে ঘটতে যাচ্ছে, সেটা হয়তো সমাজের ১০ ভাগ লোকও বুঝতে পারেননি।

চন্দ্রমুখী বসু পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে পড়লেও কাদম্বিনী বেছে নিলেন গণিত। এটা এমন এক সময়, যখন খোদ ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়েও সবে নারীরা যেতে শুরু করেছেন, তবে পড়াশোনা শুরু করলেও তাঁরা সেই সময় স্নাতক ডিগ্রি পেতেন না।

যা–ই হোক, সমাজের বাধায় না থেমে অনুমতি মেলার পর জোর কদমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলেন ছাত্রীরা। শেষ পর্যন্ত দুজন ছাত্রী প্রবেশিকা পরীক্ষায় (এনট্রান্স) বসার জন্য তৈরি হলেন। কাদম্বিনী ছাড়া অন্য যে ছাত্রী তৈরি হয়েছিলেন, তিনি সরলা দাস, ঢাকার বিক্রমপুরের বিখ্যাত আইনজীবী ও ব্রাহ্মসমাজের নেতা দুর্গামোহন দাসের মেয়ে।

এর মধ্যে আবার ডা. প্রসন্নকুমার রায়ের সঙ্গে সরলার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর পারিবারিক জটিলতায় আর পরীক্ষা দিতে পারলেন না সরলা। তাই শত শত ছাত্রের মধ্যে একমাত্র ছাত্রী হিসেবে এনট্রান্স পরীক্ষায় বসলেন কাদম্বিনী বসু। আর প্রথমবারেই রেকর্ডের খাতায় নাম ওঠালেন। মাত্র এক নম্বরের জন্য প্রথম শ্রেণি না পেলেও দ্বিতীয় শ্রেণি নিয়ে ১৮৭৮ সালে প্রথম বাঙালি নারী হিসেবে প্রবেশিকা পাস করলেন।

তাঁর এই সাফল্যে খোদ লর্ড লিটন প্রশংসা করলেন। পুরস্কার আর সনদ তুলে দিলেন লিটনের স্ত্রী।

নতুন চ্যালেঞ্জ

এনট্রান্স তো হলো। এরপর? সেই সময় সংবাদ প্রভাকর লিখল, ‘শ্রীমতী কাদম্বিনী বসু বর্তমান বর্ষের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হইয়া বঙ্গীয় রমণীকুলের মুখোজ্জ্বল করিয়াছেন…আমরা জিজ্ঞাসা করি যে শ্রীমতী কাদম্বিনী এক্ষণে কোন বিদ্যালয়ে পড়িবেন? যুবকদিগের সহিত কোন কলেজে পাঠ করা সম্পূর্ণ অসম্ভব এবং অন্য বিদ্যালয়ই–বা কোথায়?’

এনট্রান্সের পর কাদম্বিনী এফএ (ফার্স্ট আর্টস) পড়তে চাইলেন। কিন্তু তার জন্য তো কলেজে যেতে হবে। নারীদের জন্য কোনো কলেজই তখনো তৈরি হয়নি। নাই বলে দমে যাওয়ার পাত্রী তো কাদম্বিনী নন। শেষমেশ কাদম্বিনীর এনট্রান্সের সাফল্যের কারণেই স্কুলের একাংশ কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরুর অনুমোদন পেল। তৈরি হলো বেথুন কলেজ।

আমরা স্ত্রীশিক্ষার বিরোধী নহি। কিন্তু তাহাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি লইয়া যে কি ফল হইবে, বলিতে পারি না। বাঙালী মেয়েরা কি বিএল পরীক্ষা দিয়া আদালতে ওকালতি করিবেন?
আঠারো শতকের শেষভাগে রক্ষণশীল সমাজপতিদের পক্ষ নিয়ে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’

একমাত্র ছাত্রীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করল এশিয়ার প্রথম মহিলা কলেজ। সেই কলেজ ভবনেরই একটি ঘরে থাকতেন কাদম্বিনী। আর মনের মধ্যে পুষে রাখা গোপন এক স্বপ্নকে সত্যি করতে পড়াশোনা করতেন।

কাদম্বিনীকে পড়ানোর জন্য কটক কলেজের অধ্যাপক শশীভূষণ দত্তকে নিয়োগ দেওয়া হলো। তারপর সুপার হয়ে এলেন ইউরোপীয় শিক্ষক এফ এ লিপ্স কোম। ১৮৮০ সালে এফএ পরীক্ষায় বসে আবারও সফল হলেন কাদম্বিনী।

ওই সময় দেরাদুনের অন্য একটি কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে এফএ পাস করেন চন্দ্রমুখী বসু। তিনি প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে এনট্রান্স পাস করলেও কাদম্বিনীর সঙ্গে বেথুন কলেজে পড়তে পারেননি; কারণ, ওই সময় বেথুন কলেজে শুধু হিন্দুধর্মাবলম্বীরা পড়তে পারতেন, আর চন্দ্রমুখী ছিলেন খ্রিষ্টান।

এ ঘটনায় নতুন করে ভাবতে বসল বেথুন স্কুল পরিচালনা কমিটি। এরপর বেথুন স্কুল ও কলেজে হিন্দু ছাত্রীর বাইরে অন্য ধর্মের নারীদেরও পড়ার সুযোগ তৈরি হলো।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে প্রথম নারী গ্র্যাজুয়েট

একই বছর দুই নারী এফএ পরীক্ষায় পাস করে চারদিকে শোরগোল ফেলে দিলেন। এফএ পাসের পর কাদম্বিনী ও চন্দ্রমুখী—দুজনে বিএ পড়তে চাইলেন। ১৮৮১ সালে সেই ব্যবস্থাও হলো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেথুন কলেজে তাঁরা যখন বিএ পড়া শুরু করলেন, সেই সময়ে সারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কোনো নারী গ্র্যাজুয়েট নেই।

চন্দ্রমুখী বসু পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে পড়লেও কাদম্বিনী বেছে নিলেন গণিত।
পাঠক, এটা এমন এক সময়, যখন খোদ ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়েও সবে নারীরা যেতে শুরু করেছেন, তবে পড়াশোনা শুরু করলেও তাঁরা সেই সময় স্নাতক ডিগ্রি পেতেন না। (কেমব্রিজ ১৯৪৮ সালে নারীদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি দিতে শুরু করে। তবে কেমব্রিজের আগে ১৯২০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ করে দেয়।)

আর তাই দুই বাঙালি মেয়ে কাদম্বিনী ও চন্দ্রমুখীর এই বিএ পড়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। ১৮৮৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিএ পাস করে ইতিহাস গড়লেন এই দুই নারী। এবার শুধু ভারতবর্ষ নয়, পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম নারী গ্র্যাজুয়েট। সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে বাঙালি দুই নারীর এই যাত্রা যেন অনেকের চোখ খুলে দিল।

কাদম্বিনীদের এই সাফল্যে সেই সময়ের পত্রিকা বামাবোধিনী লিখছে, ‘ভারতে ইতিহাসের সর্বপ্রথম মহানন্দকর এই ঘটনাটি স্বর্ণাক্ষরে খোদিত হউক—গত ১০ মার্চ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিদান মহাসভায় কুমারী কাদম্বিনী বসু ও কুমারী চন্দ্রমুখী বসু বি.এ উপাধি দ্বারা ভূষিত হইয়াছেন।’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ঘিরে সেবার শোরগোল পড়ে গেল। প্রথমবার দুই নারীর সমাবর্তনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে এমন ভিড় হয়েছিল যে কিছুতেই সামলাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শুধু ভারতবর্ষ নয়, পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম দুই নারী গ্র্যাজুয়েটের একজন কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

ক্যাম্পাস থেকে সেই ভিড় এসে ট্রামলাইন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। তবে সেই ভিড়ের সবটাই কিন্তু এই নারীদের সাফল্য উদ্‌যাপনের জন্য নয়। কেউ কেউ এই দুই নারীকে ধিক্কার জানাতেও এসেছিলেন। দেশে-বিদেশে খবর হয়েছিল এই সমাবর্তন।

বিএ ডিগ্রি লাভের পর বেথুনেই এমএ শুরু করলেন চন্দ্রমুখী (পরে তিনি শিক্ষকতায় যুক্ত হন)। তবে কাদম্বিনী সেই পথ মাড়ালেন না। তিনি যেন অন্য ধাতুতে গড়া। বিএ পড়ার সময়ই কলকাতা মেডিকেল কলেজে পড়ার আবেদন করলেন। কোনো নারী যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতো বিষয়ে পড়তে চাইবেন, সেটা কেউ ভাবতেই পারেননি।

বিএ, এমএ মানা যায়, তাই বলে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে পড়াশোনা? শরীর নিয়ে কাটাছেঁড়া! এ কি নারীর কম্ম? চিঠিতে অবশ্য সেসব কিছু না লিখে জানানো হলো স্নাতক পাস ছাড়া ডাক্তারি পড়তে দেওয়া হবে না।

কিন্তু ছোটবেলা থেকে মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পুষে বড় হয়েছেন, একটা চিঠিতে কি সেটা চাপা পড়ে যাবে?

সূত্র: মালা দত্তের বই কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়: প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক; বিবিসি, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং কালি ও কলম।

শেষ পর্ব পড়ুন এখানে