ব্রেইন ডেড অবস্থায় এক মায়ের যখন শ্বাসপ্রশ্বাস বা হৃৎস্পন্দনটুকুও চলে না, তখনো তাঁর গর্ভে বেড়ে উঠছে এক শিশু
ব্রেইন ডেড অবস্থায় এক মায়ের যখন শ্বাসপ্রশ্বাস বা হৃৎস্পন্দনটুকুও চলে না, তখনো তাঁর গর্ভে বেড়ে উঠছে এক শিশু

যেভাবে জন্ম নিল জর্জিয়ার সেই ‘ব্রেইন ডেড’ নারীর গর্ভের সন্তান

নিজের জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সন্তানের জন্য লড়াই করে যান একজন মা। তবে ‘ব্রেইন ডেড’ এক মায়ের গর্ভে সন্তানের বেড়ে ওঠার ঘটনা বিরল। ব্রেইন ডেড অবস্থায় এক মায়ের যখন শ্বাসপ্রশ্বাস বা হৃৎস্পন্দনটুকুও চলে না, তখনো তাঁর গর্ভে বেড়ে উঠছে এক শিশু! সন্দেহাতীতভাবে বিস্ময়কর এমনই এক ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। নাম তাঁর অ্যাড্রিয়ানা স্মিথ। ওষুধ দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু পরদিন তাঁর ঘুম ভাঙে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে।

হাসপাতালে নেওয়ার পর ধরা পড়ে, মস্তিষ্কে রক্তজমাট বেঁধেছে অ্যাড্রিয়ানার। তখন আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি তাঁকে। ব্রেইন ডেড ঘোষণা করা হয় অল্প সময়ের মধ্যেই।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন অ্যাড্রিয়ানা স্মিথ

আশার আলো নিভে যাওয়ার পরও

জীবনের আর যখন কোনো আশা নেই, তখন লাইফ সাপোর্টে না রাখাটাই নিয়ম। কিন্তু অ্যাড্রিয়ানার সন্তান তখনো বেঁচে আছে তাঁর গর্ভে। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী, গর্ভের সন্তানের হৃৎস্পন্দন শুরু হয়ে যাওয়ার পর ইচ্ছাকৃতভাবে কারও জীবন থামিয়ে দেওয়া বেআইনি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইন রক্ষায় অবিচল। তাই অ্যাড্রিয়ানার পরিবারের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয়, সন্তান জন্মানো পর্যন্ত অ্যাড্রিয়ানাকে লাইফ সাপোর্টেই রাখা হবে। মে মাসে অ্যাড্রিয়ানার মা তাঁর মেয়ের ব্যাপারে এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।

আদতে নিজের মেয়ের অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য তাঁর নানা রকম দুশ্চিন্তাকে কিন্তু উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে আইন আবেগের ঊর্ধ্বে। মেয়েকে হারানোর পরও লাইফ সাপোর্টের বিষয়ে পরিবার কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, মূলত তা নিয়েই ছিল অ্যাড্রিয়ানার মায়ের অভিযোগ।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার এমোরি ইউনিভার্সিটি হসপিটালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন অ্যাড্রিয়ানা

প্রযুক্তির কল্যাণে জীবনের স্পন্দন

লাইফ সাপোর্টে একজন ব্যক্তিকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়। শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখা হয় যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। চলতে থাকে হৃৎপিণ্ড। দেহেও হয় রক্তসঞ্চালন। ব্রেইন ডেড হলেও অ্যাড্রিয়ানার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এভাবেই চালু রাখা হয়েছিল। এভাবেই কাজ করছিল তাঁর জরায়ুও। প্রযুক্তির কল্যাণেই তাঁর দেহ থেকে বেঁচে থাকার রসদ পাচ্ছিল তাঁর গর্ভের সন্তান।

অবশেষে পৃথিবীর আলো

প্রথম সন্তানের সঙ্গে অ্যাড্রিয়ানা

ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এভাবেই চলছিল সব। জুন মাসে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে জন্ম হয় অ্যাড্রিয়ানার সন্তানের। দুই পাউন্ডেরও কম ওজনের এই ছোট্ট ছেলেটিকে জন্মের পরও রাখতে হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।

জীবিত একজন মায়ের গর্ভে থাকার সুযোগ হলে হয়তো তার ওজনটা আরেকটু বাড়ত। অবশ্য ব্রেইন ডেড মায়ের গর্ভে এত দিন টিকে থেকে শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর আলোতে যে এসেছে সে, এটাই তো অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার। তার জন্মের কয়েক দিন পর ৩১ বছর বয়সী অ্যাড্রিয়ানার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। হয়েছে শেষকৃত্য।

অ্যাড্রিয়ানার ছেলেটির নাম রাখা হয়েছে চান্স। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়ার এমন বিস্ময়কর সুযোগ পাওয়া চান্সের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

সূত্র: বিবিসি