কখনো কি মনে হয়, ক্যারিয়ারের লক্ষ্যটা বারবার সরে যাচ্ছে? যেসব দক্ষতা দিয়ে প্রথম চাকরি পেয়েছিলেন, সেসব কি পরের পদোন্নতির জন্য যথেষ্ট? এই অস্বস্তি শুধু আপনার একার নয়। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির কারণে কাজের ধরন বদলাচ্ছে, আর সেই সঙ্গে বদলাচ্ছে প্রয়োজনীয় দক্ষতাও। বিশেষ করে উৎপাদনশিল্প ও সরবরাহব্যবস্থায় (ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাপ্লাই চেইন) এই পরিবর্তন সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো। এসব খাত আলাদা আলাদা নয়, আদতে একটি জটিল ব্যবস্থার মতো কাজ করে। একটি জায়গায় দক্ষতার ঘাটতি হলে তার প্রভাব পড়ে পুরো ব্যবস্থায়। উদ্ভাবন থেমে যেতে পারে, পণ্য পৌঁছাতে দেরি হয়, এমনকি গ্রাহকের অসন্তোষও তৈরি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতির কারণে এই খাতে প্রায় ২১ লাখ পদ শূন্যই থেকে যেতে পারে। এই চিত্র যতটা উদ্বেগজনক, ততটাই সম্ভাবনাময়। কারণ, এর মানে হলো, দক্ষ মানুষদের জন্য সুযোগ বাড়ছে। তাহলে ২০২৬ সাল ও তার পরের সময়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে কোন দক্ষতাগুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি?

বর্তমান চাকরির বাজারকে কয়েকটি বড় পরিবর্তন নতুন করে গড়ে দিচ্ছে—
দ্রুত অটোমেশন: একঘেয়ে ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ ক্রমেই যন্ত্রের হাতে চলে যাচ্ছে। মানুষের ভূমিকা যাচ্ছে পরিকল্পনা, তদারকি আর জটিল সমস্যা সমাধানের দিকে।
চাকরির চরিত্র বদলাচ্ছে: ২০২৬ সালে যে চাকরিটি করবেন, সেটি আজ হয়তো অস্তিত্বেই নেই। তাই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আর আজীবন শেখার মানসিকতা এখন আর ঐচ্ছিক নয়, বাধ্যতামূলক।
দক্ষ জনবলের সংকট: প্রযুক্তি এগোলেও এমন মানুষের অভাব আছে, যাঁরা প্রযুক্তি বুঝে সেটাকে বাস্তবে কাজে লাগাতে পারেন।
সফট স্কিলের গুরুত্ব: কারিগরি দক্ষতা দরজা খুলে দেয়, কিন্তু যোগাযোগ দক্ষতা, সমালোচনামূলক চিন্তা আর ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সই আপনাকে আলাদা জায়গা করে দেয়।
এই বাস্তবতায় শুধু নিয়মমাফিক কাজ করলেই চলবে না। দরকার এমন দক্ষতা, যা একদিকে টেকসই, অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে বদলাতে পারে।
১. ডিজিটাল দক্ষতা ও প্রযুক্তি বোঝার ক্ষমতা
ডিজিটাল দক্ষতা মানে শুধু কম্পিউটার চালানো নয়। এর মানে হলো বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে স্বচ্ছন্দ থাকা—ডেটা বোঝা, বিশ্লেষণ করা, নতুন টুল ব্যবহার করা। উৎপাদনশিল্পে এটি হতে পারে ট্যাবলেট দিয়ে যন্ত্র পরিচালনা করা, বা কারখানার সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্য বোঝা।
কীভাবে গড়ে তুলবেন
অনলাইন কোর্স করুন (ডেটা অ্যানালিটিকস, আইওটি ইত্যাদি)।
প্রতিষ্ঠানে নতুন প্রযুক্তি চালু হলে স্বেচ্ছায় যুক্ত হোন।
২. সমালোচনামূলক চিন্তা ও জটিল সমস্যা সমাধান
রোবট যখন নিয়মিত কাজ সামলাবে, তখন মানুষের কাছে থাকবে জটিল সিদ্ধান্তের দায়িত্ব। সমস্যা নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করে কার্যকর সমাধান বের করার ক্ষমতা এমন একটি দক্ষতা, যা সহজে অটোমেট করা যায় না।
কীভাবে গড়ে তুলবেন
কাজের পেছনের ‘কেন’-টা জানতে চেষ্টা করুন।
কঠিন সমস্যাকে এড়িয়ে না গিয়ে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখুন।
৩. মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ও ধারাবাহিক শেখা
দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার সাফল্যের সবচেয়ে বড় পূর্বাভাস হলো, আপনি কত দ্রুত শিখতে ও বদলাতে পারেন। আজকের দক্ষতা কয়েক বছরের মধ্যেই পুরোনো হয়ে যেতে পারে।
কীভাবে গড়ে তুলবেন
কৌতূহলী থাকুন, নিয়মিত ইন্ডাস্ট্রির খবর রাখুন।
নতুন সার্টিফিকেশন নেওয়ার চেষ্টা করুন।
৪. যোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্পর্কের দক্ষতা
আপনি যত বড় প্রযুক্তিবিদই হোন না কেন, নিজের ভাবনা স্পষ্ট করে অন্যকে বোঝাতে না পারলে প্রভাব সীমিত থাকবে। ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে গড়ে তুলবেন
মন দিয়ে শোনার অভ্যাস করুন।
নিজের যোগাযোগ দক্ষতা নিয়ে ফিডব্যাক নিন।
৫. নেতৃত্ব ও প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা
নেতৃত্ব মানেই পদ বা টাইটেল নয়। উদ্যোগ নেওয়া, সহকর্মীদের অনুপ্রাণিত করা, নতুনদের পথ দেখানো—এসবই নেতৃত্বের অংশ।
কীভাবে গড়ে তুলবেন
সমস্যা দেখলে দায়িত্ব নিন।
জুনিয়রদের মেন্টর করুন।
ভবিষ্যতের কর্মজগৎ ভয় ধরানোর মতো মনে হলেও, প্রস্তুত থাকলে এটি সুযোগে ভরা। এখন সময় কোনো একটি ‘স্বপ্নের চাকরি’র পেছনে না ছুটে, নিজের জন্য একটি ‘স্বপ্নের দক্ষতার তালিকা’ গড়ে তোলার।
এসব দক্ষতা শুধু আলোচিত শব্দ নয়; এসবই আধুনিক অর্থনীতিতে টিকে থাকার ভিত্তি। সময় ও পরিশ্রম লাগবে ঠিকই, কিন্তু এর বিনিময়ে আপনি পাবেন এমন এক ক্যারিয়ার, যেখানে নতুন সুযোগ ধরার সাহস আর সক্ষমতা দুটোই থাকবে।
সূত্র: ম্যানেজমেন্ট অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইউটিলাইজেশন