এ কে এম মিরাজ উদ্দিন

শহীদ বুদ্ধিজীবী, ক্রীড়াবিদ , মানিকগঞ্জ

পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ ছিলেন মানিকগঞ্জের এ কে এম মিরাজ উদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে তিনি খেলার মাঠ থেকে অস্ত্র হাতে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়েন। বীরত্বের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। একপর্যায়ে রাজাকাররা তাঁকে আটক করার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার সেনারা তাঁকে কারাগার থেকে তুলে এনে হত্যা করে।

শহীদ এ কে এম মিরাজ উদ্দিনের জন্ম ১৯৪৮ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর জেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাটিকান্দি গ্রামে। তাঁর বাবা শরীফ উদ্দিন আহমেদ, মা হাজেরা খাতুন। ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক ও জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ বিভাগে ভর্তি হন। তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকার সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

শহীদ মিরাজ সম্পর্কে প্রথম আলোতে তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছেন মানিকগঞ্জের খাবারশপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের নিয়ে তাঁর মাঠপর্যায়ে গবেষণার তথ্য নিয়ে স্মৃতি ও শ্রুতিতে মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ নামের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

মিরাজ উদ্দিনের ভাতিজা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলজীবন থেকেই মিরাজ উদ্দিন ক্রীড়াঙ্গনে কৃতিত্ব রেখেছেন। পোলভোল্ট, হার্ডলস এবং লং জাম্পে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেরা ক্রীড়াবিদ ছিলেন। ১৯৬৫ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত প্রথম পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পোলভোল্টে রেকর্ড করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে একমাত্র স্বর্ণপদক লাভ করেন তিনি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে মানিকগঞ্জের সম্মুখযুদ্ধে শহীদ মিরাজের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একাত্তরের ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জে আঞ্চলিক ‘লুডু বাহিনী’র কমান্ডার প্রকৌশলী তোবারক হোসেন ওরফে লুডুর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক গোলাইডাঙ্গার যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মিরাজ সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ৮১ জন সদস্য নিহত হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে তিনি অংশ নেন।

মানিকগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার তোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গড়পাড়া ও ঘিওরের জাবরায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তরুণ-যুবকদের উদ্বুদ্ধকরণ সভা শেষে ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাঁরা ফিরছিলেন। গোপনে খবর পেয়ে ঘিওরের বানিয়াজুরী এলাকায় রাজাকাররা তাঁদের ঘেরাও করে। অন্যরা পালিয়ে যেতে পারলেও রাজাকারের দল মিরাজকে আটক করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়। ঢাকার সেনানিবাসে নিয়ে তাঁকে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়। পরে তাঁকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ৮ ডিসেম্বর সকালে আলবদর বাহিনীর কমান্ডার মেজর মোস্তাক কারাগার থেকে মিরাজকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর এ কে এম মিরাজ উদ্দিন ও অপর শহীদ ক্রীড়াবিদ মুক্তিযোদ্ধা তপন চৌধুরীর নামে মানিকগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয় ‘শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়াম’।

গ্রন্থনা: আব্দুল মোমিন, মানিকগঞ্জ