
‘হেই, একা কেন? একা কেন?’ মাইক্রো বাসভর্তি ছেলেগুলো চিৎকার করতে করতে পাশ দিয়ে চলে গেল। ঝালমুড়ি খেতে খেতে একাই হলে ফিরছিল মিতালি, কথাটা শুনে মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে গেল, মনে মনে বলল, ‘তাতে তোদের কী?’ আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে। পুরো ক্যাম্পাসে প্রায় সবাইকে জোড়ায় জোড়ায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে, শুধু মিতালির মতো কেউ কেউ একা। এসব আদিখ্যেতা তার ভালো লাগে না। অথচ হলে মেয়েদের মধ্যে হুলস্থুল পড়ে গেছে, কে কী পরবে, কোথায় কোথায় যাবে, এমনকি কার বয়ফ্রেন্ড কাকে কী দেবে, সে এক এলাহি কাণ্ড। ভাবতে ভাবতে হলে ফিরল সে। এমন না যে কাউকে সে ভালোবাসে না, তার মনে কে বসত করে তা তো সে জানে। লাজুক ছেলেটা আজও তাকে বলতে পারল না। আজও সকালে মিসড কল দিয়েছে। সকাল-বিকেল মিসড কল আর মিতালি যখন ফোন দেবে তখন কেটে দেওয়া, এ ছাড়া আর কিছুই পারে না ছেলেটা, দেবতাদের মতো মন্দিরে বসে ভক্তের অপেক্ষা করতে পারে। দুপুরে কোনোরকমে খেয়ে এসে রুমে বসে এটাই ভাবছিল সে, এভাবে আর কত দিন? আজ বিকেলও ঘুমিয়ে কাটাতে হবে, একা একা রুমে ঘাপটি মেরে, অসহ্য। ‘২০৯ মি...তা...লি, ২০৯ মি...তা...লি?’, ‘আরে! এ সময় আবার কে ডাকে?’ ‘হ্যাঁ, কে... ন?’ নিচে দাঁড়ানো মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে উত্তর দিল মিতালি। ‘আপু, আপনার গেস্ট এসেছে।’ হালকা একটা ধাক্কা খেল সে। মনে মনে আওড়াল, ‘আমার গেস্ট? এখন?’ চটপট প্রিয় লাল-সাদা কামিজটা গায়ে চড়িয়ে চুলটা ঠিক করে একরকম দৌড়ে হলের গেস্টরুমের দিকে ছুটল। হঠাৎ করে মনটা আনন্দে ভরে উঠেছে। বুকের ভেতর ড্রাম বাজছে, ও নয় তো! হয়তো সারপ্রাইজ দিতে এসেছে! আজ রাস্তাটা খুব দীর্ঘ মনে হচ্ছে। অবশেষে গেস্টকে দেখতে পেল মিতালি, ভ্রু কুঁচকে সে মিতালিকে বলল, ‘মিতালি বর্মণ? আপনার একটা পার্সেল আছে।’ সব আনন্দ মুহূর্তেই বাক্সবন্দী হয়ে গেল। না, সে আসেনি। কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে ভারি মন নিয়ে ফিরতে হলো রুমে। পার্সেলের ভেতরে পাওয়া গেল একটা প্রেমের উপন্যাস, ভেতরে লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো, লেখা, ‘ভালোবাসি তোমাকে, তোমার মাসুদ’। মিতালি কেঁদে ফেলল, ‘বোকা ছেলে, নিজে এসে দিতে পারলে না? এর পরের বার ঠিকই তোমাকে নিয়ে ঘুরব, সবার সামনে, হাত ধরে, কোনো বাধাই মানব না।’
শামসুন নাহার
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ,
দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ঢাকা