শরণার্থী নামটি কীভাবে পেয়েছিল ফিলিস্তিনরা। সে দেশের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশের জীবন ও কবিতার সূত্রে এ প্রশ্নের তত্ত্ব–তালাশ।
‘তার মুখমণ্ডল শেকলে বেঁধেছিল ওরা
দুই হাতে বাঁধা ছিল মৃত্যুর পাথর।
তুমি খুনি, এই বলে ওরা কেড়ে নিল
তার রুটি, জামা আর ব্যানার।
মৃত্যুর কূপের ভেতর ছুড়ে দেওয়া হলো তাকে।
ওরা বলল, তুমি আসলে চোর,
আর তাকে নিক্ষিপ্ত করা হলো
সমস্ত বন্দরের বাইরে।
তরুণী প্রেমিকাকেও নিয়ে গেল ওরা।
অবশেষে ওরা বলল
তুমি একজন শরণার্থী।’
(মাহমুদ দারবিশ)
২০০৮ সালে মৃত্যুর মাত্র তিন মাস আগে ফিলিস্তিনের একটি সাহিত্য সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সে দেশের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশকে। শয্যাশায়ী থাকায় তিনি সেখানে যেতে পারেননি সশরীর। তবে সম্মেলনে আসা নানা দেশের সাহিত্যিক ও লেখক-পাঠকের উদ্দেশে এক দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলেন তিনি। সেই চিঠি থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি এখানে।
‘এই শোকাচ্ছন্ন ভূমিতে আপনাদের স্বাগতম। এই সেই ভূখণ্ড, সাহিত্যে যার উপলব্ধি তার সত্যিকারের বাস্তবতার চেয়েও সুন্দর। এখন আমরা নাকবার (আরবি শব্দটির অর্থ বিপর্যয়; ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখলের পর গণ দেশত্যাগের ঘটনা) ষাট বছরে পদার্পণ করছি। আমাদের ভূখণ্ডে এখন যারা আছে, তারা আমাদের কবরের ওপর নাচছে। তারা আমাদের ভোজ্য মনে করে। নাকবা তাই অতীতের বিষয় নয়, স্মৃতিও নয়। এটি ফিলিস্তিনিদের ক্রমাগত ভূমি থেকে উপড়ে ফেলার একটি প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়া প্রতিটি ফিলিস্তিনিকে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ভীত তোলে। তাই নাকবা থামেনি। দখলদারি অব্যাহত থাকায় নাকবাও অব্যাহত আছে। আর অব্যাহত দখলদারি আসলে একটি জাতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক যুদ্ধেরই অংশ। ইসরায়েলের এই স্থায়ী যুদ্ধ তাই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ নয়, এই যুদ্ধ আসলে আমাদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে জারি এক যুদ্ধ। তাই ইসরায়েল যেভাবে বিশ্বকে দেখাতে চায়, এই সংঘাতকে সে রকম দুটি জাতির অস্তিত্বের লড়াই বলার উপায় নেই।’
সেই চিঠির এক জাগায় তিনি আরও লিখেছেন,
‘ইতিহাসের এই কঠিন সময়ে ফিলিস্তিনি লেখকেরা বেঁচে আছেন। তবু তাঁরা স্বতন্ত্র কেউ নন। দেশের বাদবাকি মানুষের চেয়েও পৃথক নন তাঁরা। তবু একটা বিষয় আছে, তা হলো, লেখকেরা এই জীবনের এবং এই ভূখণ্ডে টুকরো টুকরো অংশকে শব্দের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে চান। আর এসব শব্দকে তাঁরা সমগ্রতা দিতে চান। আমি আগেও বলেছি ফিলিস্তিনি হওয়ার বেদনার কথা। একজন ফিলিস্তিনির পক্ষে লেখক বা কবি হওয়া আসলে কঠিন। একদিকে আপনাকে বাস্তবতার প্রতি সৎ থাকতে হবে, আর অন্যদিকে সাহিত্যিক পেশার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন।’
একজন ফিলিস্তিনি হয়ে জন্মানোর বেদনা নিয়েই আজীবন লিখে গেছেন মাহমুদ দারবিশ। ইন্তিফাদায় অংশ নেওয়া পাথর হাতে লড়ে যাওয়া একজন ফিলিস্তিনির মতোই তাঁর জীবন। তবু ইহুদি বিদ্বেষী ছিলেন না তিনি। সম্ভবত এ কারণে বিশ্বের সব দেশের পাঠকের কাছে সমান সমাদৃত হয়েছেন তিনি। একটা কবিতায় তিনি লিখেছিলেন,
‘এই যে আমরা হেঁটে যাই বোমার ভেতর দিয়ে
এতে কী তুমি মৃত্যুতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছ?
আমার তো এখনো জীবনের অভিলাষ আছে,
আর আছে অনিঃশেষ বাসনা
মৃতদের চেন কি তুমি?
আমি তাদের চিনেছি আর
তা কেবল ভালোবাসার মধ্য দিয়ে।’
১৩ মার্চ ১৯৪১ সালে বর্তমান ইসরায়েলের পূর্ব একরের বিরওয়া নামের গ্রামে এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম দারবিশের। মা-বাবা দুজনই মাঠে কাজ করতেন বলে দাদার কাছেই সারা দিন কাটত তাঁর। আনন্দ উচ্ছল এই শৈশব দীর্ঘস্থায়ী হলো না। তাঁর যখন মাত্র ছয় বছর বয়স, তখন থেকেই শুরু শরণার্থী জীবনের। প্রথম নাকবার সময় ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের গ্রামটি আক্রমণ করলে পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে যান লেবাননে। এক বছর পর অধিকৃত মাতৃভূমিতে ফিরে এসে দেখেন বাপ-দাদার ভিটেসহ প্রিয় গ্রামখানি উচ্ছেদ করে বসতি গড়েছে ইহুদিরা। তাই তাদের জায়গা হলো না সেখানে। গ্যালিলি শহরের দাইর আল আসাদ নামের জায়গায় থাকতে শুরু করলেন তাঁরা। বাড়িতে কোনো বই ছিল না তাঁদের। রাস্তা দিয়ে যাওয়া কোনো এক ইসরায়েলি সৈনিকের গাওয়া গানই তাঁকে প্রথম কবিতার অভিজ্ঞতা দিয়েছিল। গ্রামের এক বড় ভাই তাঁর ভাবগতিক দেখে অনুরোধ করেছিল সে যেন কবিতা লেখে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সামরিক আইনের অধীনে বসবাস করেছে ইসরায়েলি আরবরা। প্রতিটি পদক্ষেপেই ছিল কঠোর নিয়ন্ত্রণ। ছিল না রাজনীতি করার অধিকার। শৈশব থেকে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর পরিবার এবং স্বদেশের আর সব ফিলিস্তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে।
দারবিশের লেখাপড়া শুরু হয়েছিল একটি ইসরায়েলি স্কুলে। হিব্রু ভাষায় পাঠদান হতো সেখানে। শিক্ষকেরাও ছিলেন ইহুদি। ইসরায়েলের জাতীয় দিবস উপলক্ষে কবিতাও লিখেছিলেন তিনি। কবিতাটি শৈশবেই হারিয়ে ফেলেছিলেন তবে পরবর্তীকালে তাঁর স্মৃতিকথা থেকে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানা যায়। এক আরব বালক অন্য এক ইহুদি বালকের কাছে আর্তি জানাচ্ছে কবিতাটিতে। আরব বালকটি বলছে, ‘তুমি যেমন ইচ্ছে খেলতে পারো রোদের মধ্যে, তোমার আছে উৎসব আনন্দ, আমার তা নেই। আমরা কি পারি না একসঙ্গে খেলতে?’ এ রকম বিষয়বস্তু নিয়ে কবিতা লেখার অপরাধে সামরিক সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে হুমকিও এসেছিল। এমন কবিতা ফের লিখলে তাঁকে স্কুল থেকে চলে যেতে হবে আর তাঁর বাবাকেও চাকরিচ্যুত করা হবে বলে শাসিয়ে দিল সামরিক কর্তৃপক্ষ। অবশ্য বেশ কিছু ইহুদির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল।
স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে অন্তত একজনকে তিনি খুব পছন্দ করতেন। রক্ষণশীল আরব পরিবারের মেয়েদের চেয়ে ইহুদি মেয়েদের সঙ্গে অনেক সহজভাবে মিশতে পারতেন। জীবনের প্রথম প্রেমও ছিল একটি ইহুদি মেয়ের সঙ্গে। স্কুলে, হিব্রু অনুবাদে পড়েছিলেন ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা ও পাবলো নেরুদার কবিতা। এ ছাড়া হিব্রু সাহিত্যের প্রতি অনুরাগও তাঁর বাড়তে থাকে এ সময়। ক্লাসিক্যাল হিব্রু কবি তোরা থেকে শুরু করে আধুনিক কবি ইহুদি আমাচিসহ অনেকেই তাঁকে ভীষণ রকম আলোড়িত করেন। আরব কবিদের মধ্যে ইরাকি কবি আবদাল ওহাব আল বায়াতি ও বদর সাকির আল সায়াব তাঁকে প্রভাবিত করেন। বৈরুতের আল শির সাহিত্য পত্রিকাকে কেন্দ্র করে তরুণ কবিদের যে সাহিত্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা-ও স্পর্শ করেছিল তাঁকে। এ ছাড়া সিরিয়ার কবি আদোনিস (আলি আহমদ সাইদ আসবার) ও নিজার কাব্বানিও তাঁর ভালো লেগেছিল।
দারবিশের প্রথম কবিতার বিষয়বস্তু ছিল ইসরায়েলি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ জলপাই গাছের পাতা প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। এরপর ফিলিস্তিনি প্রেমিক ১৯৬৬-তে এবং রাতের শেষ প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল থেকে। সে সময় দারবিশ ইসরায়েলি কমিউনিস্ট পার্টি রাকাহ-এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং পার্টির পত্রিকার আরব সংস্করণ সম্পাদনার দায়িত্ব পান। আল ইত্তিহাদ নামের পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ঘন ঘন গ্রেপ্তার ও গৃহবন্দী হতে থাকেন তিনি। দারবিশের প্রথম দিককার কবিতাগুলো ছিল ক্ল্যাসিক্যাল ঘরানার। কিন্তু ৬০ দশকের মাঝামাঝি বদলে যেতে থাকেন তিনি। আরও সরাসরি হয়ে ওঠে তাঁর কবিতা। সহজ, দৃঢ় আর বারুদের মতো বিস্ফোরক কবিতাগুলো এ সময় ফিলিস্তিনিদের কান্নারই অনুবাদ। তবে ছোট কবিতাগুলো বহু স্তরের অর্থ ধারণ করে। রাগ, ক্ষোভ, অবিচার ও বঞ্চনার অনুভূতি একসঙ্গে জড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁর কবিতায়। ‘আইডেনটিটি কার্ড’ বা ‘পরিচয়পত্র’ কবিতাটিতে একজন আরব নিজের পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে,
‘প্রথম পৃষ্ঠার শুরুতে লেখ
আমি মানুষকে ঘৃণা করি না।
কখনো কারও কাছ থেকে কিছু চুরি করিনি।
তবু
যদি আমি ক্ষুধার্ত হই তবে,
খেতে শুরু করব হানাদারের মাংস
সাবধান, সাবধান আমার ক্ষুধা থেকে
আর আমার রাগ থেকে।’
অগ্নিগর্ভ এই কবিতাটিতে বিদ্রোহ থাকলেও কোথাও একটা বিশ্বমানবিক সুরও ধ্বনিত হয়। ফিলিস্তিন নামের প্রিজমের মধ্য দিয়ে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন বাইরের দুনিয়ার আবেগ-অনুভূতির রংগুলো। সত্যিকারের ফিলিস্তিনি হতে হলে আন্তর্জাতিক হতে হবে নিজেকে, এই সত্যটা অনুধাবন করেছিলেন তিনি। হাজার বছরের ফিলিস্তিন সভ্যতার ভেতরে বহুদিন ধরে সঞ্চিত হয়েছে নানান জাতির গায়ের ঘাম। এদের কণ্ঠস্বর আধুনিক ফিলিস্তিন জাতির সঙ্গে এক হয়ে মিলেমিশে গেছে। হাজার বছর ধরে হিব্রু, গ্রিক, রোমান, তুর্কি ও ব্রিটিশরা নিজেদের চিহ্ন রেখে গেছে এই ভূখণ্ডে। এই সব কিছু নিয়েই ফিলিস্তিন। তাকে অস্বীকার করে নয়। আর এসব কিছু থেকেই চেনা যায় একজন ফিলিস্তিনিকে। দারবিশ এই বৈচিত্র্যকেই ধরতে চেয়েছিলেন নিজের কবিতায়।
ইসরায়েলি সৈন্যদের নিজের মতোই পরিস্থিতির শিকার ভাবতেন দারবিশ, দমনমূলক সামরিক শাসন তাঁর কাছে ছিল অবাস্তব। এই অবাস্তব জগৎ ছেড়ে ১৯৭১ সালে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। এরপর কিছুদিন কায়রোতে কাটিয়ে বৈরুতে থিতু হন। জড়িত হন প্যালেস্টাইন রিসার্চ সেন্টারের সঙ্গে। লেবাননের গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে বৈরুতে কাটিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে বৈরুত ত্যাগ করে তিউনিস যান এবং তিউনিস থেকে শেষে প্যারিসে। এ সময়কালকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উত্থানের সময় বললেও ভুল হবে না। প্যারিসে থাকাকালে প্রভাবশালী আরবি সাহিত্য পত্রিকা আল কারমেল-এর সম্পাদক হন তিনি। ১৯৮২ সালে বৈরুতে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের স্মৃতি নিয়ে রচনা করেন ‘বিস্মরণের স্মৃতি’। এটি ছিল একটি দীর্ঘ গদ্য কবিতা। যাতে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ আর উপহাসের ছলে সহিংসতা, উন্মাদনা আর দুঃখময় নির্বাসিত জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো আপস করেননি। জীবনের শেষ বছরগুলো তিনি রামাল্লা আর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে কাটিয়েছিলেন।
দারবিশ লিখতেন আরবিতে, অনর্গল বলতেন আরবি, ইংরেজি, ফরাসি আর হিব্রু ভাষা। হিব্রু ভাষায় আধুনিক কবিতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। হিব্রুতে পড়েছেন আর্তুর র্যাঁবো ও অ্যালেন গিনসবার্গের কবিতা। মাতৃভূমি ফিলিস্তিন এবং তার স্বাধীনতাকামী জনগণ দারবিশের কবিতার প্রধান অনুষঙ্গ হলেও আগেই বলা হয়েছে, ইহুদি বিদ্বেষ তাঁর ছিল না। বলেছিলেন, ‘আমি আমার শত্রুদের মানবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাব। যিনি আমাকে প্রথম হিব্রু পাঠদান করেছিলেন, তিনি ছিলেন ইহুদি। আমার প্রথম প্রেম ছিল একটি ইহুদি মেয়ের সঙ্গে। যে বিচারক আমাকে প্রথম জেলে পাঠিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন এক ইহুদি নারী। তাই আমি ইহুদিদের ফেরেশতা অথবা শয়তান কোনোটাই মনে করতাম না। তাঁদের কেবল মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করতাম আমি।’
২০০০ সালের মার্চ মাসে ইসরায়েলি শিক্ষামন্ত্রী ইউসি সারিদ দারবিশের কিছু কবিতা ইসরায়েলের স্কুলগুলোর পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক এর তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, ইসরায়েল এখনো প্রস্তুত নয়। এহুদ বারাকের কথাই হয়তো ঠিক, ইসরায়েল এখনো প্রস্তুত নয়। প্রস্তুত নয় আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের হাহাকার শুনতে। দারবিশ বলেছিলেন, কেবল স্বাধীন হওয়ার সামান্যতম আশাও এই জাতিকে ফিরিয়ে আনতে পারে। সেই আশাবাদের কথা শোনাতে রাজি নয় ইসরায়েল। কারণ, তার পেছনে আছে কর্তৃত্বপরায়ণ এক আগ্রাসী জাত্যভিমান। ইসরায়েলে শান্তিবাদী মানুষের অভাব নেই। ২০০৭ সালেও হাইফাতে অনুষ্ঠিত দারবিশের কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে এমন দুই হাজার শান্তিবাদী মানুষ সমবেত হয়েছিলেন, যাঁরা মনে করেন, শান্তির সুবাতাস সেখানে বইবেই। হয়তো পৃথিবী অপেক্ষা করেছিল দারবিশের জন্য। যাঁর কথা, গান আর শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরছে ফিলিস্তিনের রাস্তায় রাস্তায়।
‘আমি হাঁটছিলাম, যেন আমি অন্য কেউ
আমার ক্ষতস্থানে ফুটেছিল একটা সাদা গোলাপ
আর আমার দুই বাহু বুকের মধ্যে পৃথিবীটাকে চেপে উড়ছিল
আমি হাঁটছিলাম না, উড়ছিলাম
অন্য কেউতে পরিণত হয়েছিলাম আমি
রূপান্তরিত
না ছিল সময় না স্থান
কিন্তু আমি ভাবলাম
একা তারপর
একজন সৈনিক চিৎকার ছুড়ে দিল
আবারও তুমি? তোমাকে কি আমি হত্যা করিনি?
আমি বললাম, তুমি আমাকে হত্যা করেছ…
কিন্তু আমি ভুলে গেছি
তোমারই মতো
ভুলে গেছি এই কথা
যে একদিন আমারও মৃত্যু হবে।
‘জেরুজালেম’: মাহমুদ দারবিশ)
(দারবিশের কবিতা ও চিঠির অংশের অনুবাদ লেখককৃত)