উত্তেজনা, আতঙ্ক, আত্মরক্ষা বা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ঘোড়া যেমন সামনের দুই পা মাটি থেকে তুলে পেছনের দুই পায়ের ওপর দাঁড়ায়, ঠিক তেমনি একটি দৃশ্য গ্যালারিতে চোখে পড়ল। কাছে গিয়ে দেখি বৈদ্যুতিক তার, পরিত্যক্ত শাড়ি, কাচের পুঁতি দিয়ে তৈরি দৃশ্যশিল্পটি দেয়ালে ঝোলানো। ‘পরিচয়’ শিরোনামের বিশ্বজিৎ গোস্বামীর এই শিল্পকর্মটির উপকরণের মধ্যে রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর দখল ও দূষণের ইঙ্গিত।

আবার নিকট ঐতিহ্যে নদীপারের মানুষের জীবন কেমন ছিল তা দেখা যাবে কামাল উদ্দিনের পুরান ঢাকার রাস্তায় গরুর গাড়ির স্মৃতিজাগানিয়া দৃশ্যকল্পে। প্রাণ ও প্রকৃতির বৈপরীত্য ও বৈভবের মধ্যেই বয়ে চলে জীবন—কিছুটা ক্লোজআপ করে সেই দৃশ্যই হয়তো দেখিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল বশির তাঁর ক্যানভাসে। চিত্রে দেয়ালের ফাটলে বাসা বেঁধে থাকা চড়ুই যেন ঢাকার ঘনবসতির ফাঁকে টিকে থাকা প্রাণের প্রতীক। কিন্তু এই শহর পেরোলেই তো প্রকৃতির বৈভব আমাদের হাতছানি দেয়।
‘বাড়ি ফেরার পথে’ শিরোনামের ইম্প্রেশনিস্ট ধারায় চিত্রিত সহিদ কাজীর এমন একটি কাজে ফুটন্ত কাশফুল বাংলার ঋতুবৈচিত্র্যকে যেন স্তুতি জানায়। কিংবা নাঈম জামানের ‘শৈশব স্মৃতি’ ল্যান্ডস্কেপে মনন ও আবেগের মেলবন্ধনে বস্তু জগতের বাইরে হৃদয় জগতের বৃহৎ দরজা খুলে দেওয়া যায়। যেমনটা মনজুর রশিদ ফুল, ফুলের বৃন্ত, কলি আলতো রঙের আভাসে ক্যানভাসে বিছিয়ে রেখেছেন স্বপ্নলোকের আনন্দে। এই আনন্দের দোলা লেগেছে ফ্লোরে সাজানো ‘হাতির শুঁড়ে অর্কিড’ ভাস্কর্যে।
সাম্প্রতিক সময় বিশ্লেষিত হয়েছে আল আখির সরকারের ‘শমশির’ শিরোনামের কাজটিতে। রত্নেশ্বর সূত্রধরের পিক্সেলে বিন্যাসিত মুখাবয়বের চোখের দৃষ্টিতে যেন অনুচ্চারিত ইতিহাস। সৌরভ চৌধুরীর কাজে স্বপ্ন ও ঐতিহ্য পাশাপাশি চলতে থাকে, যেখানে শিল্পী নিজেকে নির্মাণ করেন রূপকথার এক নিঃশব্দ ধারাভাষ্যে। বাস্তবধর্মী, বিমূর্ত, আধা-বিমূর্ত ও প্রতীকধর্মী শিল্পের মিশেলে প্রদর্শনীটি ব্যক্তি ও সমাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরে। একই শৈলীর কাজ হলেও খুব একটা একঘেয়ে লাগে না অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, এম এম মাইনুদ্দিন, প্রদ্যুৎ কুমার দাসের চিত্রকর্মগুলো। সহজেই অনুমেয়, এগুলোর পেছনে দীর্ঘ অনুশীলন ও মৌলিক ভাবনার সাধনা রয়েছে।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে ৮ জুলাই শুরু হওয়া ‘এস্থিট’ শিরোনামের দলীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনীটি ১৬ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত চলবে।