জ্বলজ্বলে জোনাকি

.

অন্ধকারে কখনো ঘরের ভেতরে হঠাৎ ছোট্ট সোনালি আলো জ্বলতে-নিভতে দেখে চমকে উঠেছ? শহুরেদের কাছে এই অভিজ্ঞতা নতুন হলেও, গ্রামের ছেলেপুলেরা কিন্তু ঠিকই বুঝে নেবে—এ হলো জোনাকির কাজ!
জ্বলজ্বলে আলোই যেন জোনাকি পোকার ভাষা। অন্য জোনাকিদের সঙ্গে এই আলোর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে ওরা। জোনাকি পোকাদের বলা হয় ফায়ারফ্লাই। তবে ‘ফ্লাই’ বা মাছির সঙ্গে ওদের কোনো মিল নেই। জেনে অবাক হবে, পৃথিবীতে ফায়ারফ্লাই আছে প্রায় দুই হাজার রকমের। এদের কারও আলো হয় হলুদ-সোনালি রঙের, কারও আবার হয় কমলা রঙের, এমনকি কারও কারও আলো হয় সবুজ রঙের। আর এদের বেশির ভাগেরই রয়েছে পাখা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাংশের জোনাকিদের কোনো আলো নেই।
জোনাকি পোকাদের আলোর আসল রহস্যটা কি জানো? জোনাকি পোকার পেটের নিচের একটি অংশে থাকে বিশেষ ধরনের কিছু কোষ। জোনাকি যখন অক্সিজেন গ্রহণ করে, তখন ওই সব কোষের মধ্যে ‘লুসিফেরিন’ নামের এক বিশেষ পদার্থের সঙ্গে অক্সিজেনের মিশ্রণ হয়। এভাবেই উৎপন্ন হয় আলো। কখনো কখনো দেখা যায়, অনেকগুলো জোনাকি একই ছন্দে জ্বলছে আর নিভছে। এমনটা দেখে তোমাদের মনে হতে পারে জোনাকিরা বুঝি আলোর খেলায় মেতেছে! কীভাবে জোনাকিরা আলো জ্বলা আর নেভা নিয়ন্ত্রণ করে, তা অবশ্য বিজ্ঞানীদের কাছে আজও অজানা।
তোমরা হয়তো জানো, একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব কিছুক্ষণ জ্বালিয়ে রাখলে সেটি গরম হয়ে যায়, কারণ সেখানে আলোর সঙ্গে তাপও উৎপন্ন হয়। মজার ব্যাপার হলো, জোনাকি পোকাদের আলোর সঙ্গে তেমন তাপ উৎপন্ন হয় না। লুসিফেরিন আর অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় যতটা শক্তি উৎপন্ন হয়, তার পুরোটাই আলো হিসেবে বেরিয়ে আসে। তাই আলো তৈরি হলেও জোনাকি পোকাদের শরীর গরম হয়ে যায় না। তোমরা জেনে অবাক হবে, জোনাকিদের আলোকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর আলো।
একটা জোনাকি পোকার আকার কেমন হয় জানো? সাধারণত একটা পেপার ক্লিপ বা জেমস ক্লিপের তুলনায়ও বেশ ছোট হয়ে থাকে ওরা। তবে একটা জোনাকি পোকার দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। একটু গরম আর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া পছন্দ করে জোনাকিরা। ফুলের নির্যাস আর পরাগরেণু ওদের খাবার। কেউ কেউ আবার নরম কোনো পোকাও খেয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো পূর্ণবয়স্ক জোনাকি নাকি কিছুই খায় না!
প্রাকৃতিক পরিবেশে জোনাকিরা গড়ে প্রায় দুই মাস বেঁচে থাকে। তবে ওদের কিছু শত্রুও আছে বটে। মাকড়সা, ব্যাঙ আর কোনো কোনো পাখি খেয়ে নিতে পারে জোনাকিদের। ফসলের মাঠে মানুষের ছিটানো কীটনাশকের কারণেও মারা যেতে পারে জোনাকিরা।
একটা মজার তথ্য দিয়ে রাখি, জাপানে প্রতিবছর জোনাকিদের প্রতি বিশেষ অনুভূতি প্রকাশ করে এক উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশ নেয় সেই উৎসবে। তবে প্রাকৃতিকভাবে হওয়া শত শত জোনাকির মেলা তোমরা দেখতে পাবে বাংলাদেশেই। বাংলাদেশের আনাচকানাচে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরতলিতে, সন্ধ্যা বা রাতের বেলা ঘরের বাইরে একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে এই আলোর মেলা।
সূত্র: ন্যাশনালজিওগ্রাফিক ডট কম