প্রিয় ৫

এখনো যখন ছবিটির প্রতিটি ফ্রেম দেখি, বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে

চঞ্চল চৌধুরী মনে করেন, অদ্ভুত এক জীবনযাপনের ছবি পথের পাঁচালী। ছবি: খালেদ সরকার
চঞ্চল চৌধুরী মনে করেন, অদ্ভুত এক জীবনযাপনের ছবি পথের পাঁচালী। ছবি: খালেদ সরকার
চঞ্চল চৌধুরী। অভিনেতা। দেবী চলচ্চিত্রে মিসির আলি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সম্প্রতি পেয়েছেন মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৮। এবার প্রিয় পাঁচ বিভাগে হাজির হয়েছেন তিনি

১. প্রিয় বই

সবার আগে ‘পথের পাঁচালী’

প্রিয় বই অনেকগুলো। কোনটা রেখে কোনটার নাম বলব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পগুলো আমার বেশি পছন্দের। তবে একটা বইকে যদি বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে বিভূতিভূষণ বন্ধ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর নামটা আগে বলব। এটার বড় কারণ, আমি আসলে যে জীবনটা খুঁজি, যে জীবনটা আমি কল্পনায় দেখি, যে জীবনটা আমি যাপন করতে চাই, সেটাই লেখক তুলে এনেছেন সুনিপুণভাবে। যতবারই পড়েছি, ততবারই মুগ্ধ হয়েছি। আসলে একটা সময় আমার প্রচুর পড়াশোনা ছিল। কিন্তু এখন পড়ার সময় খুব কম পাই। এ জন্য অবশ্য আমি নিজেই দায়ী। আরও একটা বইয়ের নাম বলতে পারি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতাও আমার খুব পছন্দের একটা বই।

২. প্রিয় শিল্পকর্ম

জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষ সিরিজ

আমার কাছে অনেক শিল্পকর্মই ভালো লাগে। তবে বেশি ভালো লেগেছে জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষ নিয়ে করা ড্রয়িং সিরিজটা। চারুকলার আমরা বলি লাইন ড্রয়িং। জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের আঁকা ড্রইংগুলো আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। ড্রয়িং দিয়ে একটা ঘটনা, একটা অবস্থা এত সুনিপুণভাবে তুলে আনা যায়, এটা জয়নুল আবেদিনের ড্রয়িং না দেখলে ধারণা হতো না। শুধু তা–ই নয়, মানুষের মনের মধ্যে নাড়া দিয়েছে এই ছবি।

৩. প্রিয় মঞ্চনাটক

জয় ‘জয়জয়ন্তী’

আমার পছন্দের নাটক মামুনুর রশীদের জয়জয়ন্তী। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত সুন্দর নাটক আর দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের একটা ধারণা আছে। অনেক নাটক–চলচ্চিত্রে আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধের অনেক কিছুই দেখেছি। কিন্তু একটা গানের দল যে কতটা সংকটে পড়তে পারে, সেটা দেখা গেছে এই নাটকে। সম্মুখযুদ্ধ ছাড়াও ভেতরে ভেতরে কত সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা অনেকেরই অজানা। সেই নিরিখে বলব, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ রকম নাটক কম হয়েছে।

৪. প্রিয় নায়িকা

বড়মাপের অভিনেত্রী নাজমা আনোয়ার

আমি আসলে তথাকথিত নায়ক-নায়িকার ধারণার বাইরের মানুষ। আমি অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে ভাবতে ভালোবাসি। আমার প্রিয় অভিনেত্রীদের অনেকেই এখন প্রয়াত। এখন বলতে পারি, আমার খুব পছন্দের অভিনেত্রী নাজমা আনোয়ার। তিনি অসাধারণ একজন অভিনেত্রী। তাঁর সব কটি কাজই দেখেছি। মঞ্চেও তিনি কাজ করেছেন। আমার ক্যারিয়ারের শুরুর সময়ে তাঁর সঙ্গে আমার একটা নাটকে অভিনয় করার সুযোগ হয়েছিল। খুব ছোট একটা চরিত্র। কিন্তু কাজ করে বুঝেছি, কতটা বড় মাপের অভিনেত্রী তিনি।

৫. প্রিয় চলচ্চিত্র

আবারও ‘পথের পাঁচালী’

প্রিয় বইয়ের মতো আমার প্রিয় চলচ্চিত্রও পথের পাঁচালী। সত্যজিৎ রায়ের এটা একটা অসাধারণ নির্মাণ। ছবির সেই অপু-দুর্গা—এদের যেন আমি চিনি। তাদের পুরো জীবন যেন দেখানো হয়েছে এ সিনেমায়। এখনো যখন ছবিটির প্রতিটি ফ্রেম দেখি, বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে। মনে হয়, এটা একটা অদ্ভুত জীবনযাপনের ছবি। এখনো ছবিটা দেখলে বুকের ভেতরে একই রকমভাবে মোচড় দেয়।


অনুলিখন: হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক