
শহীদ কাদরী পঞ্চাশের দশকে আবির্ভূতদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একজন কবি। দেশ ও কবিতা থেকে বিচ্ছিন্ন কবি হিসেবে আমৃত্যু বিবেচিত হয়েছেন। যদিও মাঝেমধ্যে তিনি লিখতেন, মৃত্যুর আগে নতুন কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছিল। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয় ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০২, নিউইয়র্কে। প্রথম আলোর তৎকালীন ‘সাহিত্য সাময়িকী’র ৭ মার্চ ২০০৩ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশের ২২ বছর পর, শহীদ কাদরীর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলোর অনলাইন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শামস আল মমীন
প্রায় ২৪ বছর কবিতাহীন কেমন আছেন?
শহীদ কাদরী: ২৪ বছর ধরে কবিতা লিখছি না, এটা সত্যি কথা। কিন্তু কবিতাহীন আমি নই। কিটসের একটা কথা আপনার মনে আছে নিশ্চয়, পোয়েট্রি অব দ্য আর্থ ইজ নেভার ডেড। অর্থাৎ পৃথিবীতে কখনোই কবিতার দিন শেষ হবে না। জীবনকাব্য দ্বারা এখনো আমি পরিবৃত। কবিতা আমি এখনো পড়ি।
সপ্তাহের একটা দিন আপনি কীভাবে কাটান?
শহীদ কাদরী: আমি সাইট কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করি। দিনের একটা অংশ ঘুমাই আর বাকি সময় বইটই পড়ি।
কখন বুঝতে পেরেছিলেন আপনি কবিতা লিখতে পারবেন?
শহীদ কাদরী: কবিতা লিখতে পারব—এ রকম বিশ্বাস কখনোই ছিল না। সব সময় দোদুল্যমান ছিলাম। অল্প বয়সে আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীনের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের। শামসুর রাহমানকে প্রায়ই ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করতাম, আমার কি হবে? ‘হ্যাঁ হবে, তবে আপনার মধ্যে দুটো বিরোধী শক্তি কাজ করছে। আপনি খুব ভালো লিখতে পারেন অথবা আপনি নষ্টও হয়ে যেতে পারেন।’
তাহলে বলা যায়, শুরুতেই আপনি শামসুর রাহমান দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন?
শহীদ কাদরী: সত্যি কথা বলতে কি, লেখা আমি প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। ১৯৫৬ সালে আমার প্রথম কবিতা ছাপা হয়। আমি তখন স্কুলে পড়ি। বুদ্ধদেব বসু আমার কবিতা ছেপেছেন, আমি মনে করলাম, আমার হয়ে গেছে; আর লেখার দরকার নেই। তারপর দু বছর আর আমি কবিতা লিখিনি। এর একটা কারণ হলো তখন খালেদ চৌধুরী, সুকুমার মজুমদার ওঁদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়; এঁরা ছিলেন দার্শনিক। এঁরা তখন হেগেল, প্লেটো, কান্ট পড়ছেন। আমাদের মধ্যে একটা কথা উঠল, কবিরা কবিতায় অনুপ্রেরণা বা আবেগে অনেক কথা বলেন, যার কোনো অর্থ হয় না। এবং প্লেটো যে কারণে তাঁর রিপাবলিক থেকে কবিতাকে নির্বাসন দিয়েছেন। জীবনের অর্থ সত্যের উদ্ঘাটন এবং তা একমাত্র দর্শনেই সম্ভব। আমি তখন তুমুল বেগে দর্শন পড়া শুরু করলাম। কবিতাকে ছেলেমানুষির মতো মনে হওয়া শুরু করল। একদিন আমরা বসে আছি চুচিং চাওতে—ঢাকার প্রথম চায়নিজ রেস্টুরেন্ট। হঠাৎ সৈয়দ শামসুল হক এসে বলল, ‘আমার প্রথম কবিতার বই বেরিয়েছে “একদা একরাত্রি”, আপনাকে বইটা দিতে চাই। আপনি কাল “চিত্রালী” অফিসে আসেন।’ পরদিন ‘চিত্রালী’ অফিসে গেলাম। হক আমাকে বইটা দিয়ে বলল, ‘যদি পারেন একটা রিভিউ লিখে দেন।’ আমি বললাম, তাহলে বইটা আমি বাসায় নিয়ে যাই। হক বলল, ‘না শহীদ ভাই, আপনি একবার গেলে আপনাকে আর পাওয়া যাবে না। এখানে বসেই লিখে দেন।’
আমরা যতটুকু জানি, আপনি কারও বইয়ের রিভিউ লেখেন না।
শহীদ কাদরী: ওই বইটার রিভিউ লিখেছিলাম। আসলে কোনো কারণ নেই, আলসেমির জন্যই লেখা হয়নি। জোর করলেই আমি লিখতাম। কেউ জোর করেনি, তাই লেখাও হয়নি। হক জোর করল, তাই লিখলাম। সৈয়দ হক পরে একদিন বলল, ‘বইটার একটা প্রকাশনা উৎসবের মতো করেছিলাম এক রেস্টুরেন্টে। ওখানে শামসুর রাহমানের সঙ্গে দেখা হলো, বইটা তাঁকে দিতেই তিনি বললেন, “আহ আজকে শহীদ কোথায়, ও-ছেলেটা লিখতে পারত। ও নিজেকে নষ্ট করল খামোখাই।”’ এ কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগল। বাড়িতে এসে ওই দিন সন্ধ্যায় আমি ‘বৃষ্টি, বৃষ্টি’ কবিতাটা লিখে ফেললাম।
কবিতাটা কি একটানে লিখেছিলেন?
শহীদ কাদরী: একটানা। আধঘণ্টার মধ্যে লিখে শেষ করেছি। আমি তখন বুঝতেও পারিনি এটা একটা ভালো কবিতা হয়েছে। পরে আল মাহমুদ কবিতাটা আমার কাছ থেকে নিয়ে সমকালে ছাপে। অনেকেই কবিতাটার প্রশংসা করল। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ আমাকে বললেন, ‘এত অল্প বয়সে “বৃষ্টি, বৃষ্টি”র মতো কবিতা লিখেছ, এটা একটা বিস্ময়কর ঘটনা।’
আমরা আশি-নব্বইয়ের দশকের কবিতা লেখার পরিবেশ সম্পর্কে মোটামুটি জানি। আপনাদের সময় কবিদের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক ছিল? কিংবা কবিদের আড্ডাগুলোর পরিবেশ কেমন ছিল?
শহীদ কাদরী: তখন ঢাকা ছোট্ট শহর ছিল এবং আড্ডাগুলো ছিল মূলত পত্রিকাকেন্দ্রিক। সমকাল অফিসে আড্ডা হতো। ‘সওগাত’ অফিসে আড্ডা হতো। এসব জায়গায় প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের দেখা হতো। আল মাহমুদের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ‘সওগাত’ অফিসেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আল মাহমুদ যেদিন প্রথম ‘সওগাত’ অফিসে আসে, সেদিনই ‘সওগাত’–এ আমার প্রথম লেখা ছাপা হয়। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘সওগাত’ পত্রিকার কবিতার অংশ সম্পাদনা করতেন। ওই দিন সন্ধ্যায়ই আল মাহমুদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হলো। তার হাতে ছিল মার্ক্সবাদ।
এটা কি ’৫৬ সালের কথা?
শহীদ কাদরী: সঠিক মনে নেই, তবে ’৫৫-৫৬ সাল হবে।
আমরা জানি বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকার তখন দোর্দণ্ডপ্রতাপ। কবিতা ছাপার পর আপনাদের মনে কি জাগরণ সৃষ্টি হয় যে হ্যাঁ, আমাদের হবে?
শহীদ কাদরী: প্রচণ্ডভাবে, প্রচণ্ডভাবে। আসলে আমাদের মধ্যে যিনি জাগরণ সৃষ্টি করেন তিনি হলেন শামসুর রাহমান। আমার বড় ভাই ‘কবিতা’ পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। আমার মনে আছে, এক দুপুরে পিয়ন এসে ‘কবিতা’ পত্রিকা দিয়ে গেল বাসায়। তখন আমি এক বন্ধু, বাচ্চুসহ ভাত খাচ্ছিলাম। বাচ্চু ছিল ফিল্ম ডিরেক্টর। ও ছবি বানিয়েছিল ‘আগুন নিয়ে খেলা’। দেখেছেন ছবিটা?
হ্যাঁ, দেখেছি।
শহীদ কাদরী: পত্রিকা খুলে দেখি শেষ পৃষ্ঠায় ‘রুপালি স্নান’—শামসুর রাহমান। পড়লাম। পড়ে খুব ভালো লাগল। আমি তখন স্কুলে পড়ি। আমার বড় ভাই পড়ছিলেন ইংরেজিতে অনার্স। তাঁকে বললাম, দেখেন তো কবিতাটা কেমন লাগে? পড়ে তিনি বললেন, ‘ইটস আ পিস অব ম্যাজিক্যাল রাইটিং।’ এত নামের ভিড়ে শামসুর রাহমানের নামটা খুব জ্বলজ্বল করে দাঁড়িয়ে আছে। এর তিন মাস পর আবার ‘কবিতা’ পত্রিকা এল। প্রথম কবিতাটিই শামসুর রাহমানের। তার শয্যার পাশে, তারপর ছিল সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী—এঁদের কবিতা। ব্যাপারটা সাংঘাতিকভাবে আমাকে স্ট্রাইক করল। তখন আমাদের মধ্যে একটা ধারণা হলো, হয়তো আমাদের পক্ষেও সম্ভব। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, শামসুর রাহমানের প্রধান অবদান হলো তিনি আমাদের সাহসের সীমা সম্প্রসারিত করেছেন।
এখানে একটা কথা না বলে পারছি না, শামসুর রাহমানের কোনো কবিতার বই বেরোবার আগেই তিনি কবি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন।
শহীদ কাদরী: এটা সত্যি কথা।
এর কারণ কী?
শহীদ কাদরী: এর দুটো কারণ আছে। প্রথমটা তাঁর কবিতার নিজস্ব গুণ, যা সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, সময়টা ছিল পঞ্চাশের দশক, যা বাংলা কবিতার জন্য খুব সুসময় ছিল না। কারণ, ত্রিশের পাঁচজন কবির পর কলকাতায় যে কবিতার চর্চা হচ্ছিল, তা ছিল রাজনীতিভিত্তিক। এবং তখনকার বিখ্যাত কবি ছিলেন সুকান্ত, সুভাষ মুখোপাধ্যায়। এঁদের কবিতা যদিও উজ্জ্বল, কিন্তু একপেশে। এঁদের প্রভাবে কবিতা হয়ে উঠেছিল স্লোগানমুখী। জীবনে যেমন রুটির প্রয়োজন আছে, তেমনি গোলাপেরও প্রয়োজন আছে। তখন মার্ক্সবাদী আন্দোলনের এমন ঢেউ এসেছিল যে আমরা শুধু রুটির কথাই বলছিলাম, গোলাপের কথা নয়। কবিতার আবহাওয়া বদলে গিয়েছিল। অনেকে এ ধরনের কথা বলছিল যে কবিতায় অন্য কথাও বলা উচিত। শামসুর রাহমান তখন লিখলেন ‘শুধু দু টুকরো শুকনো রুটির নিরিবিলি ভোজ...দেখি ছায়া নিয়ে শরীরে ছড়ায়’—
এখনো আপনার মুখস্থ আছে।
শহীদ কাদরী: এই কবিতাটা একটু নতুন সুর, নতুন এক ডিমেনশন দিয়েছে বাংলা কবিতাকে।
এই সময় এমন কোনো কবি ছিলেন না, যাঁকে কেউ ফলো করতে পারে? তখন কবি ছিলেন আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন; কিন্তু আমি ঠিক জানি না, এঁরা কেউ প্রতিনিধিত্বশীল কবি ছিলেন কি না।
শহীদ কাদরী: এঁরা ছিলেন যুগসন্ধিক্ষণের কবি। আধুনিক এবং অনাধুনিকের মধ্যবর্তী পর্যায়ের কবি। আধুনিক কবিতার যে বিভিন্ন মাত্রা, এটা তাঁরা পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারেননি, যেটা শামসুর রাহমান পেরেছিলেন।
ধরা যাক, আপনাদের কারও কবিতা যদি ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে ‘কবিতা’ পত্রিকায় ছাপা না হতো, তাহলে আপনাদের কবিতা লেখায় কোনো ভাটা পড়ত বলে মনে হয়?
শহীদ কাদরী: ভাটা পড়তে পারত। কারণ, তখন আমাদের সামনে এমন দৃষ্টান্ত ছিল না, যার রুচি, কাব্যবোধ এবং বিচারের ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারি। ত্রিশের কবিদের যে কাব্যকীর্তি আর পাণ্ডিত্যের গভীরতা আমরা অনুভব করেছিলাম, তাতে আমরা এঁদের প্রতি আস্থা রাখতে পেরেছিলাম।
ত্রিশের পাঁচ কবির মধ্যে কাকে, আপনার মতে, সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হয়?
শহীদ কাদরী: শক্তিশালী কোন অর্থে?
সম্পূর্ণ কাব্যভাষা কার বেশি আয়ত্তে ছিল?
শহীদ কাদরী: এটা ঠিক আমি বলতে পারব না। তবে আমাকে আকর্ষণ করে বেশি জীবনানন্দ ও বিষ্ণু দে।
আমার জানামতে শামসুর রাহমানের পছন্দ সুধীন্দ্রনাথ।
শহীদ কাদরী: সুধীন্দ্রনাথ আমারও পছন্দ। তাঁর প্রভাব কিছু আমার ওপরে পড়েছে, কিছু শামসুর রাহমানের ওপরেও পড়েছে। কিন্তু তাঁর মূল কাব্যকীর্তি, কিছু শব্দ ব্যবহারের ওপর তাঁর নির্ভরশীলতা অনেক সময় তাঁর কবিতাকে অনড়, অচল করে দেয়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলেছেন। সুধীন দত্ত যেহেতু বাড়িতে বাংলা বলতেন না, সে কারণে প্রতিদিনের কথকতা তিনি ঠিকভাবে আয়ত্ত করতে পারেননি। তাঁর কাব্যভাষা বইনির্ভর।
শহীদ কাদরী: এটা পুরোপুরি সত্য নয়। পশ্চিমবঙ্গের চলতি মুখের বুলি তিনি জানতেন না, এটা ভুল। হাইনের কবিতার অনুবাদে চমৎকারভাবে তিনি চলতি মুখের ভাষা ব্যবহার করেছেন। আসলে সুধীন দত্ত বাংলা কবিতা ও প্রবন্ধেও একটা জিনিস চেষ্টা করেছিলেন, তা হলো জটিলতাকে নষ্ট না করে জটিল অবস্থায়ই তাকে ব্যক্ত করা। এবং এটা করতে গিয়ে তাঁকে অনেক নতুন শব্দ তৈরি করতে হয়েছে। এর জন্য মাঝেমধ্যে তা আড়ষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর অর্জনটা হচ্ছে বাংলায় যেসব কথা বলা সম্ভব ছিল না, সে ধরনের কথা তিনি বলতে পেরেছেন।
আমাদের কবিতায় শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ ও শহীদ কাদরী—এই তিনটি নাম ত্রিরত্নের মতো প্রায় একসঙ্গে উচ্চারিত হতো। এবং কবি হিসেবে আপনি যখন প্রতিষ্ঠিত, ঠিক সেই সময় দেশ ছাড়লেন কেন?
শহীদ কাদরী: আমি জার্মানিতে গিয়েছিলাম মাস তিনেকের জন্য। তা–ও পারিবারিক এবং অন্যদের প্রেশারে। ওখানে গিয়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটল যে মনটা আমার খুব খারাপ হয়ে গেল। আমি জার্মানিতে আটকা পড়ে গেলাম। ফিরতে চাচ্ছি, কিন্তু পারছি না। তখন লন্ডনে কলকাতার আমার এক বাল্যবন্ধু একটা ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ওকে সব খুলে বলতেই ও আমাকে একটা চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাঠিয়ে দিল। আমি লন্ডনে এসে হুসেন নামের এক বন্ধুর বাসায় উঠলাম। সৈয়দ শামসুল হক তখন বিবিসিতে কাজ করত। সাত দিন ঘুমটুম দিয়ে বিবিসিতে গেলাম। শামসুল হক বিবিসিতে একটা কাজ জুটিয়ে দিল। তখন আমি কিছুটা উদাস ছিলাম।
তারপর দেশে চলে গেলেন বিরাশির দিকে।
শহীদ কাদরী: হ্যাঁ, আমি আমার যৌবনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। ক্যারিয়ার দরকার, টাকাপয়সা জমানো দরকার, ভবিষ্যৎ আছে—এগুলো কখনো ভাবিনি। আমি অনেক রকম স্কোপ পেয়েছি, কিন্তু কোনোটাই কাজে লাগাইনি।
দেশে যখন ফিরে গেলেন তখন পুরোনো বন্ধুবান্ধব এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার কী পরিবর্তন দেখলেন?
শহীদ কাদরী: দেশে যখন ফিরে গেলাম তখন শামসুর রাহমান দৈনিক বাংলার এডিটর। তাঁর অফিসে গেলাম। দেখি তিনি বহু লোক দ্বারা পরিবৃত। তিনি বললেন, ‘বঙ্গভবনে মিটিংয়ে যেতে হবে। বসুন, চা খান। আমার গাড়ি আছে, আপনাকে পৌঁছে দেবে।’ তাঁর গাড়ি আমাকে বাসায় পৌঁছে দিল। ফজল শাহাবুদ্দীনের অনেক পরিকল্পনা। রাজনৈতিকভাবে তিনি একটা দলের সঙ্গে জড়িত। সেখানে আমার যোগ দেওয়া সম্ভব হলো না। আল মাহমুদ তার রাজনৈতিক লোকজন নিয়ে ব্যস্ত। আমি দেখলাম, ওখানে বাস করতে হলে একটা দলের সঙ্গে ভিড়তে হবে। ওঁদের ব্যস্ততা আর নির্লিপ্ততা দেখে মনে হলো আমার আর জায়গা নেই দেশে।
তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন আমেরিকা চলে আসার?
শহীদ কাদরী: আমেরিকা আসার সিদ্ধান্ত নিইনি, ব্যাপারটা ছিল একেবারেই আকস্মিক। ভাইকে বললাম, আমার আরও এক মাসের ভিসা আছে লন্ডনের। ভাই বলল, ‘মন খারাপ করে বসে থাকিস সারাক্ষণ। ভালোই তো ছিলি ওখানে। তুই বরং চলে যা।’ এভাবেই আবার চলে এলাম।
আমেরিকা আসার কি কোনো প্ল্যান ছিল?
শহীদ কাদরী: না, কোনো প্ল্যান ছিল না। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলো লন্ডনে। সে ছিল আমেরিকান। তখন খুব একলা, নিঃসঙ্গ ছিলাম। বিয়ে করে ফেললাম তাকে। প্রথম বিয়ে যেমন না ভেবে করেছি, দ্বিতীয় বিয়েও তেমনি না ভেবে করেছি। তাকে আমি বলেছিলাম, দুই দেশে আমার বাড়ি থাকবে একটা। অর্থাৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকব। আমেরিকায় তখন আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পরিকল্পনা ছিল আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাব। তখন সে তার অসুস্থ মাকে দেখতে চাইল। এভাবেই আমেরিকা চলে এলাম।
তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন যে আমেরিকা থেকে যাবেন?
শহীদ কাদরী: হ্যাঁ। সিদ্ধান্ত নিলাম এখানেই থেকে যাব। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করব, বাংলা বই পড়ব না, বাঙালিদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখব না। নতুন একটা জগতের জন্ম দেব।
হঠাৎ এই প্রতিজ্ঞা করলেন কেন—বাংলা বই পড়বেন না, বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না?। বুঝলাম, আপনার কয়েকজন পুরোনো বন্ধু আপনাকে কষ্ট দিয়েছে।
শহীদ কাদরী: মনের মধ্যে একধরনের হতাশা তৈরি হলো। দূর! আমার দ্বারা আর কিছু হবে না। আমার মনে আছে, লাইব্রেরিতে বসে একদিন বই পড়ছিলাম। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত এনসাইক্লোপিডিয়া অব ওয়ার্ল্ড লিটারেচার দেখে মনের মধ্যে ইচ্ছা জাগল, দেখি তো বাংলা সাহিত্যের কিছু আছে কি না। বাংলা লিটারেচারের ওপর একটা প্রবন্ধ আছে। সেখানে আমার বন্ধুদের মধ্যে শামসুর রাহমানের নাম আছে। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম।
শুধু শামসুর রাহমানের নাম?
শহীদ কাদরী: শুধু শামসুর রাহমানের নাম। আমি খুব ইমপ্রেসড হলাম এবং নিজের জন্য দুঃখও হলো যে আমি হয়তো লিখতে পারতাম, এটা আমি কী করলাম! এখন মনে হয় খুব দেরি হয়ে গেছে, ফেরার উপায় নেই।
এটা সত্য যে প্রবাসে এসে ঘাঁটি ঠিক হতে একটু সময় লেগে যায়। কিন্তু আবার পুরোনো জগতে সবাই ফিরেও আসে। সবাই একটা ব্রেক নিয়ে আবার ফিরে আসে—সে বন্ধুর প্ররোচনায় হোক অথবা মনের তাগিদেই হোক। আপনাকে কোনো কিছুই স্পর্শ করল না?
শহীদ কাদরী: পরিবেশেরও অভাব ছিল। আমার স্ত্রীও এ ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড ছিল না। কেউ কেউ আমার স্ত্রীকে বলত, ‘তুমি কি জানো তোমার স্বামী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কবি?’ সে বলত, ‘হ্যাঁ, বাংলাদেশ থেকে যারা আসে ওরা সবাই একেকজন বিখ্যাত ব্যক্তি।’ আমার পরিবেশ আমার পক্ষে ছিল না কখনোই। এটাও হয়তো কারণ হতে পারে। জানি না, চেষ্টা করে দেখতে পারি আবার।
মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপনি যান, সেখানে দেখেন লোকে কবিতা পড়ছে, নতুন-পুরোনো কবির সঙ্গে দেখা হচ্ছে। নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বোস্টনে গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করেছেন; এঁদের দেখেটেখেও মাথায় কখনো আসে না হেঁয়ালি করে হলেও কিছু লিখি?
শহীদ কাদরী: অনেক সময় একটু উজ্জীবিত হই, তবে সেটা খুব ক্ষীণায়ু।
খুব কম হলেও মাঝেমধ্যে দু-একটা নতুন কবিতা লিখেছেন আপনি। ’৮৬ সালে, আমার সম্পাদনায় নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘দিগন্ত’ পত্রিকার জন্য ‘তৃতীয় রাইখের উত্থানের আগে’ শিরোনামে একটা ছোট কবিতা দিয়েছিলেন। এই কবিতাগুলো কি আগের লেখা, নাকি আমেরিকায় বসে লিখেছিলেন?
শহীদ কাদরী: এখানে বসে কিছু কবিতা যে লিখিনি, তা নয়। সব মিলিয়ে একটা বইয়ের মতো হবে হয়তো। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে আছে।
এগুলো গুছিয়ে-গাছিয়ে একটা বই তো করা যেতে পারে।
শহীদ কাদরী: হ্যাঁ, গুছিয়ে বসব। প্ল্যান আছে আমার।
আপনি যে মানে একসময় কবিতা লিখেছেন, সেই মানে আর কবিতা লিখতে পারবেন না—এই ভয় কি আপনার কবিতা না লেখার পেছনে কাজ করছে?
শহীদ কাদরী: হ্যাঁ, কাজ করছে। আমাকে যদি কেউ বলত আজেবাজে যা ইচ্ছা লেখো, তাহলে হয়তো আমি সাহস পেতাম।
এটাও তো হতে পারে, যেমন শামসুর রাহমান একটা থিমের ওপর বেশ কিছু কবিতা লেখেন, সেখান থেকে দু-একটা হয়তো ভালো কবিতা হয়...
শহীদ কাদরী: এই সম্ভাবনা সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবহিত। কিছুটা আলসেমি তো কাজ করে। মাঝেমধ্যে নিজেকে বলি, দূর, আর কষ্ট করে লাভ কী, বাদ দাও ওসব। কিন্তু আমি এ–ও জানি, কষ্ট করলে হয়তো হতো। ম্যাথু আর্নল্ডের একটা কথা আছে, সূর্যের নিচে বসে পাথর ভাঙার চেয়ে কষ্টকর লেখা।
শুধু বাস্তবতা দিয়ে কবিতা হয় না, একটু ফ্যান্টাসিও থাকে। ধরা যাক, আপনি দেশেই ছিলেন এবং আরও দশটা কবিতার বই বেরিয়েছে আপনার। তাহলে আজকে আপনার অবস্থান কোথায় হতো?
শহীদ কাদরী: পৃথিবীতে যাঁরা প্রধান প্রধান কবি, তাঁদের কবিতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত সাত-আটটা প্রথম শ্রেণির কবিতা লিখেছেন, যেগুলো টিকবে। যেমন জীবনানন্দ, সুধীন দত্তের সাত-আটটা প্রথম শ্রেণির কবিতা আছে, কিটসের আছে কয়েকটা গুড। সেদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় আমি পাঁচ-ছয়টা ভালো কবিতা লিখেছি।
রাজনীতিকে কবিতায় ঢুকতে দেব না—মনে মনে এ রকম প্রতিজ্ঞা করেই শামসুর রাহমান প্রথম দিকে কবিতা লেখেন। কিন্তু পরে তিনি প্রচুর রাজনীতিনির্ভর কবিতা লিখেছেন এবং খ্যাতিও পেয়েছেন।
শহীদ কাদরী: এই সমস্যায় আমরাও ভুগেছি। এই সময়ে আমরা প্রত্যেকেই বুদ্ধদেবীয় নন্দনতত্ত্বে অর্থাৎ শিল্পের জন্য শিল্প—এই আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলাম। তখন আমরা মনে করেছিলাম, রাজনীতি স্পর্শ করলে কবিতার পবিত্রতা নষ্ট হয়। এ রকম একটা ধারণা দীর্ঘদিন আমাদের মধ্যে ছিল। ক্রমেই আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছি।
আপনি নিশ্চয়ই পড়েছেন, বুদ্ধদেব বসু এক প্রবন্ধে, প্রবন্ধটি কোনো গ্রন্থে প্রকাশ করেননি—কিছু শব্দকে আধুনিক কবিতা থেকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। পরে রবীন্দ্রনাথের ওপর কবিতা লিখতে গিয়ে তিনি ওই সব শব্দ আবার নিজেই ব্যবহার করেছেন এবং পরে স্বীকার করেন, কোনো শব্দ একেবারে বাতিল হয়তো সম্ভব নয়...
শহীদ কাদরী: হ্যাঁ, আমি পড়েছি এই প্রবন্ধ এবং আমরাও একসময় এই পদ্ধতি অনুসরণ করেছি, সেটা হচ্ছে যে শুদ্ধ ক্রিয়াপদ ব্যবহার করব না। প্রমথ চৌধুরী শুরু করলেন চলতি ক্রিয়াপদ। একবার চলতি ক্রিয়াপদ ব্যবহার করলে আর শুদ্ধ ক্রিয়াপদের মিশ্রণ ঘটাব না। কিন্তু দেখা গেল সম্পূর্ণভাবে বাদ দিলে ধ্বনিগতভাবে কিছু ত্রুটি থেকে যায়। একটা কথা আছে, শব্দের নিজস্ব কোনো গুণ নেই। শব্দ কীভাবে ব্যবহৃত হলো তার ওপর তার গুণ পরিবর্তিত হয়। কিছু শব্দ বাদ দিলেই যে লেখা রিচ হবে, এমন কোনো কথা নেই। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব এখানেই যে নতুন করে আবার শুদ্ধ ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে দেখালেন, এর কাব্যিক সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি।
আল মাহমুদ এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘রফিক আজাদের সমগ্র থেকে একটা পঙ্ক্তিও খুঁজে পেলাম না, যাকে কবিতা বলা যায়।’ ব্যাপারটা আমার কাছে বেশি বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। আপনার মতামত কী?
শহীদ কাদরী: আমার কাছেও তা–ই মনে হয়। এটা তার চিরকালের ব্যাপার। তার পক্ষে অন্যকে স্বীকৃতি দেওয়া খুব কঠিন কাজ। একধরনের লেখক দেখেছি, যাদের কাছে অন্য লেখকের কোনো অস্তিত্বই নেই। আল মাহমুদ তাদের মধ্যে একজন।
রফিক আজাদের কিছু ভালো কবিতা আছে, এটা তো অস্বীকার করা যায় না।
শহীদ কাদরী: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। ষাট এবং উত্তর-ষাটের কবিদের মধ্যে রফিক আজাদ একজন তাৎপর্যপূর্ণ কবি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে কবিদের মধ্যে একটা জিনিস প্রচলিত আছে, কাউকে স্বীকৃতি দিলে আমার যেন ঘাটতি পড়ে যাবে।
বাংলা কবিতা জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ায়, এ জন্য আধুনিক কবিতার ধারাটা এখন আর ফ্লারিশ করছে না—এ রকম একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়।
শহীদ কাদরী: মধ্যবিত্ত নগরবাসীই আধুনিক কবিতা লিখছেন। আবহমান বাংলার কৃষিভিত্তিক যে জীবন, তার সঙ্গে এঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। মানুষের মনের মৌলিক যে আবেগ, যেমন প্রেম, মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা, জন্ম, বিরহ—এসব বিষয় এঁদের কবিতায় আছে। আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, এঁদের কবিতা জীবনবিমুখ। কারণ, ওঁদের কবিতায় লাঙলের কথা হয়তো নেই, চাষবাস কিংবা কুটিরের কথা নেই; কিন্তু জীবনের গভীরতর কথাগুলো তাঁদের কবিতায় আছে।
শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ এবং আপনার শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো বাংলা সাহিত্যে সাড়া জাগিয়েছে; কিন্তু সেগুলোর ইংরেজি অনুবাদ হওয়ার পর ইংরেজি ভাষার পাঠকদের সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা কি অনুবাদের দুর্বলতা নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
শহীদ কাদরী: আমার মনে হয় অনুবাদের দুর্বলতা। যিনি অনুবাদ করছেন তাঁর কাব্যিক ক্ষমতা সেই ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর তুল্য হতে হবে এবং সে জন্যই বুদ্ধদেব বলেছিলেন, শেক্সপিয়ারের সনেট অনুবাদ করার জন্য বাংলা ভাষায় একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি সুধীন দত্ত। প্রথম শ্রেণির একজন কবির লেখা যদি তৃতীয় শ্রেণির একজন গদ্য লেখক অনুবাদ করেন, তার পরিণাম তো শোচনীয় হবেই।
আপনার কাছ থেকেই জানলাম, বহু বছর পর আপনি আপনার বড় ভাইকে ফোন করেছেন, দেশে ফেরার জন্য মনের দিক থেকে কোনো তাগিদ অনুভব করছেন?
শহীদ কাদরী: হ্যাঁ, দেশে যাওয়ার জন্য আমি এখন রীতিমতো ব্যস্ত হয়ে উঠেছি।
গতকাল আপনি শামসুর রাহমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। কী ধরনের কথাবার্তা হলো আপনাদের মধ্যে?
শহীদ কাদরী: তাঁর কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম। কীভাবে তাঁর দিন কাটে, কী করছেন না করছেন...। তাঁর কথাবার্তা শুনে মনে হলো, তিনি কিছুটা সুখ-দুঃখের অতীতে চলে গেছেন। সময় তাঁকে স্পর্শ করেছে।
শামসুর রাহমানের সঙ্গে কথা বলে দেশে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কি আরও বেড়ে গেছে?
শহীদ কাদরী: কিছুটা। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার সময় হয়ে গেছে। সময় আর বেশি নেই। খুব দ্রুত দেশে চলে যাওয়া দরকার।
দেশে গিয়ে আবারও কবিতা লিখবেন—এ রকম কোনো ইচ্ছা আছে আপনার?
শহীদ কাদরী: কবিতা লিখব না, এ রকম কোনো প্রতিজ্ঞা করিনি। কবিতা লিখব, এ রকম প্রতিজ্ঞাও করিনি। যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে, তাহলে লিখব।
বুদ্ধদেব বসু তাঁর সমকালীন কবিদের কবিতা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা লিখেছেন। আমাদের দেশে কাউকে এ রকম চোখে পড়ে না। আপনার সমকালীন কবিদের কবিতা নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা আছে কি?
শহীদ কাদরী: সমকালীন কবিদের নিয়ে লিখতে অনেক অসুবিধা আছে। সমকালীন কবিরা সাধারণত বন্ধুবান্ধব হয়। সব সময় বন্ধুবান্ধবদের কবিতা নিয়ে উচ্চ ধারণা ব্যক্ত করা সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বন্ধু-বিচ্ছেদের আশঙ্কাই বেশি। কে কত ভালো লিখল না লিখল, এই মূল্যায়নের চেয়ে জীবনে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সুসম্পর্ক অনেক বেশি মূল্যবান। তবে আমার ইচ্ছা আছে শামসুর রাহমানের কবিতার ওপর একটা প্রবন্ধ লেখার।
কবি আবুল হোসেন আপনাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছেন এবং আপনি তা পড়েছেন। এ সম্বন্ধে কি আপনার কিছু বলার আছে?
শহীদ কাদরী: ওটাকে কবিতা হিসেবে গ্রাহ্য করা যায় না। তথ্যেও অনেক ভুল আছে।
বাংলা ভাষার কবিতা-প্রেমিক কিংবা পাঠকদের আপনি কি এমন কিছু জানাতে চান, যা আমি এই সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করিনি অথচ আপনার ইচ্ছা হচ্ছে বলতে?
শহীদ কাদরী: এমন কোনো বিশেষ বক্তব্য নেই। তবে এটুকু বলব, কবিতা পাঠে চিত্তশুদ্ধি ঘটে এবং এখনো আমি কবিতা পড়ি। আমি বলব, কবিতা পড়াটাকে একটা বিশেষজ্ঞের ব্যাপার না করে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করতে।
অন্য আলো–য় লিখতে পারেন আপনিও। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধসহ আপনার সৃজনশীল ও মননশীল যেকোনো লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়।ই–মেইল: info@onnoalo.comঅন্য আলোপ্রথম আলো ভবন (৭ম তলা)১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫