
লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১০ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী পেরুর লেখক মারিও বার্গাস য়োসা। তিনি ১৯৯০ সালের পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। গত ১৩ এপ্রিল ৮৯ বছর বয়সে পেরুর রাজধানী লিমায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। প্যারিস রিভিউকে দেওয়া তাঁর এই সাক্ষাৎকারে নিজের সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত করে তা অনুবাদ করেছেন জিয়া হাশান
আপনি একজন সুপরিচিত লেখক এবং আপনার পাঠকেরা আপনার লেখা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন। এখন বলেন আজকাল আপনি কী পড়ছেন?
য়োসা: পড়াশোনার ব্যাপারে গত কয়েক বছরে অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটেছে। আমি লক্ষ করেছি যে সমসাময়িক লেখকদের লেখা এখন কম পড়া হচ্ছে। আর আগেকার লেখকদের লেখা পাঠের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যের চেয়ে ঊনবিংশ শতাব্দীর লেখা আমার অনেক বেশি পড়া হচ্ছে। আর আজকাল তো আমি গল্প-উপন্যাসের তুলনায় প্রবন্ধ আর ইতিহাসের বইপত্রের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছি। এটা কেন হচ্ছে, তা আমি আসলে খুব একটা ভেবে দেখিনি। তবে আজকাল আমি যা পড়ি তার সঙ্গে পেশাগত কারণ থাকে।
আমার আজকালকার লেখালেখির সঙ্গে উনিশ শতক জড়িত। যেমন ভিক্টর হুগোর ‘লে মিজারেবলস’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখছি। যখন সমাজ-সংস্কারক ও নারীবাদী শব্দগুলো চালু হয়নি, সেই ফরাসি আমলেই পেরুর সমাজ–সংস্কারক এবং ‘নারীবাদী’ ফ্লোরা ট্রিস্টানের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি উপন্যাস লেখার কাজ চলছে। কিন্তু আমি এটাও মনে করি যে যখন আপনার বয়স পনেরো কিংবা আঠারো, তখন মনে হয় সামনে গোটা জীবনের সময় পড়ে আছে। আর যখন আপনি পঞ্চাশে পৌঁছে যান, তখন হঠাৎ সচেতন হয়ে যেতে হয় যে আপনার জীবন শেষ হয়ে আসছে। আপনাকে বাছাই করে চলতে হবে। সম্ভবত এ কারণেই আমার সমসাময়িকদের লেখা ততটা পড়া হয় না।
কিন্তু আপনি আপনার সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে যাঁদের লেখা পড়েন, তাঁদের মধ্যে কাদের লেখা আপনার বিশেষভাবে ভালো লেগেছে?
য়োসা: তরুণ বয়সে আমি সার্ত্রের এক উত্সাহী পাঠক ছিলাম। তখন আমেরিকান ঔপন্যাসিকদের লেখাও পড়েছি, বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের প্রজন্মের লেখক—ফকনার, হেমিংওয়ে, ফিটজেরাল্ড, ডস পাসোসের লেখা। এঁদের মধ্যে আবার ফকনারের লেখা বেশি পড়া হয়েছে। যেসব লেখকের লেখা আমি তরুণ বয়সে পড়েছি, তাঁদের মধ্যে এখনো আমার কাছে যাঁদের লেখা গভীর অর্থ বহন করে, তাঁদের কয়েকজনের মধ্যে একজন হচ্ছেন ফকনার। তাঁর লেখা আবার পড়ার সময় কখনোই আমি হতাশ হইনি, যেমনটা মাঝে মাঝে হয়েছি ধরা যাক হেমিংওয়ের লেখা পড়ার সময়।
আমি এখন আর সার্ত্রের লেখা আবার পড়তে চাই না। ইতিমধ্যে আমি যেসব লেখা পড়েছি সেগুলোর সঙ্গে তাঁর লেখার তুলনা করলে তাঁর কথাসাহিত্য এখন সেকেলে মনে হয় এবং সেসব লেখা মূল্য হারিয়ে ফেলেছে। আর তাঁর প্রবন্ধগুলোর ব্যাপারে বলা যায় যে সেগুলোর বেশির ভাগকেই আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। তবে ব্যতিক্রমও আছে, যেমন তাঁর ‘সেন্ট জেনে: অভিনেতা নাকি শহীদ’ নামের বইটি। এটি এখনো আমার ভালো লাগে। তাঁর প্রবন্ধগুলোয় রয়েছে পরস্পরবিরোধী কথা, দ্ব্যর্থতা, ভুলত্রুটি আর এলোমেলো চিন্তা। এমনটা ফকনারের লেখায় কখনো পাইনি।
ফকনার হলেন আমার প্রথম ঔপন্যাসিক, যাঁর লেখা আমি হাতে কলম ও কাগজ নিয়ে পড়েছি। মানে পড়ার সময় নোট নিয়েছি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হাইলাইট করেছি এবং গল্পের কৌশল ও ভাবনা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। কারণ, তাঁর লেখার কৌশলগুলো আমাকে অভিভূত করেছিল। তিনি ছিলেন প্রথম ঔপন্যাসিক, যাঁর লেখা আমি সচেতনভাবে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করেছি। আর যে বিষয়গুলো সাজানোর চেষ্টা করেছি, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সময়ের বিন্যাস, সময় ও স্থানের মেলবন্ধন, বর্ণনার ভাঙন, আর সেই দক্ষতা যেটির মাধ্যমে তিনি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গল্প বলেন। তাঁর এ দক্ষতা তাঁর গল্পে একধরনের দ্ব্যর্থতা আনে এবং তাঁকে বাড়তি গভীরতা প্রদান করে। তাঁর লেখা পড়ার পর আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে উনিশ শতকের ঔপন্যাসিকদের পড়তে শুরু করি। যেমন ফ্লোবের, বালজাক, দস্তয়েভস্কি, তলস্তয়, স্টেনডাল, হথর্ন, ডিকেন্স, মেলভিল। তবে আজও আমি উনিশ শতকের লেখকদের লেখা গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়ি।
আর, অদ্ভুত হলেও সত্য যে আমি লাতিন আমেরিকান সাহিত্য আবিষ্কার করি এবং উৎসাহের সঙ্গে পড়তে শুরু করি ইউরোপে বসবাস শুরু করার পর। আমাকে লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয়ে লাতিন আমেরিকান সাহিত্য পড়াতে হয়েছিল। এ পড়ানো ছিল আমার জন্য অত্যন্ত সুসমৃদ্ধ একটি অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা থেকেই লাতিন আমেরিকান সাহিত্য পুরো এলাকার সাহিত্য হিসেবে আমার কাছে ফুটে ওঠে।
এর পর থেকে আমি পড়তে শুরু করি আগে থেকেই চেনা বোর্হেসের বইপত্র। তা ছাড়া পড়ি কারপেনটিয়ার, কোর্তাসার, গুইমারায়েস রোজা, লেজামা লিমাসহ তাঁদের পুরো প্রজন্মের লেখা। তবে তখনো, গার্সিয়া মার্কেসের কোনো লেখা পড়া হয়নি। তাঁকে আরও পরে আবিষ্কার করি এবং এমনকি তাঁর ওপর ‘গার্সিয়া মার্কেস: এক সংকল্পবদ্ধ ব্যক্তির ইতিহাস’ নামে একটা বইও লিখেছি। আমি উনিশ শতকের লাতিন আমেরিকান সাহিত্যও পড়েছি। কারণ, সে সাহিত্য আমাকে ক্লাসে পড়াতে হয়েছিল। তবে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের একজনের নাম যদি আমাকে বাছাই করতে বলা হয়, আমি বলতে বাধ্য হব বোর্হেসের নাম। কারণ, তিনি যে জগৎটি সৃষ্টি করেন তা আমার কাছে সম্পূর্ণ মৌলিক মনে হয়েছে। তাঁর অসাধারণ মৌলিকতার পাশাপাশি তিনি অতুলনীয় কল্পনাশক্তির অধিকারী এবং নিজস্ব সংস্কৃতির ধারক-বাহক।
কয়েক বছর আগে প্রকাশিত আপনার একটা প্রবন্ধে আপনি লিখেছিলেন যে সাহিত্য একটি আবেগ এবং সে আবেগ এমন একচেটিয়া যে সবকিছু ত্যাগ করতে বলে; কিন্তু নিজে কোনো কিছু ত্যাগ করে না। বলেছিলেন ‘প্রধান কাজ বাঁচা নয়, লেখা’। এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে পর্তুগিজ কবি ফেরনান্দো পেসোয়ার মন্তব্য ‘নৌকা চলানো দরকার, বাঁচা দরকার নয়।’ পুরো বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
য়োসা: আপনি বলতে পারেন, লেখা দরকার, বাঁচা দরকার নয়...। এ প্রসঙ্গে আমার নিজের সম্পর্কে কিছু কথা আপনাকে বলাই হয়তো ভালো হবে। এতে মানুষ আমাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে স্কুলে থাকাকালে অনেক পড়াশোনা ও লেখালেখি করলেও, কখনো কল্পনা করিনি যে একদিন আমি সাহিত্যের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করব। কারণ, তখন লাতিন আমেরিকায় বিশেষ করে পেরুতে সাহিত্য করাকে বিলাসিতা করা ছাড়া আর কিছু মনে করা হতো না। তাই আমি অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করেছিলাম। যেমন আইন পড়ব, অধ্যাপক বা সাংবাদিক হব। এ রকমই ছিল তখন আমার লক্ষ্য।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে যখন আমি বৃত্তি নিয়ে ইউরোপে যাই, তখন বুঝতে পারি যে অন্য কিছু হওয়ার ভাবনা মনে থাকলে আমি কোনো দিন লেখক হতে পারব না। তখন অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিই যে সাহিত্য শুধু আমার নেশা নয় বরং আমার পেশাও হবে। তাই আমি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সাহিত্যের জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিই। আর যেহেতু সাহিত্য দিয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে পারব না, তাই ঠিক করি যে এমন কাজ খুঁজব যেগুলো আমাকে লেখার জন্য সময় দেবে এবং কখনোই সে কাজটা অগ্রাধিকার পাবে না। অর্থাৎ, আমি আমার লেখকসত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পেশা বেছে নেব। আমার মনে হয়, সেই সিদ্ধান্তই আমার জীবনে এক মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আর আমার লেখার ক্ষমতা চলে আসে। তখন একধরনের মানসিক পরিবর্তনও হয়। তাই সাহিত্য আমার কাছে পেশার চেয়ে বেশি আবেগের মতো মনে হয়। আবার স্বীকার করতেই হয় যে সে আবেগটিই আমার একটি পেশা, কারণ তার মাধ্যমেই আমি জীবিকা নির্বাহ করি।
সাহিত্য কি আপনাকে ধনী করেছে?
য়োসা: না, আমি কোনো ধনী লোক নই। যদি একজন লেখকের আয়ের সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানের আয় তুলনা করা হয় বা কোনো পেশায় খ্যাতি অর্জনকারী ব্যক্তির সঙ্গে, কিংবা পেরুতে ষাঁড়ের লড়াইয়ের কোনো খেলোয়াড় বা শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে সাহিত্য করে এখনো স্বল্প পরিমাণের পারিশ্রমিকই পাওয়া যায়।
বছর কয়েক থেকে বেশ কিছু প্রবন্ধে আপনি হতাশাবাদী কথা বলেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৮২ সালে আপনি লিখেছিলেন—‘সাহিত্য রাজনীতির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লেখকদের রাজনীতিতে জড়ানো উচিত কেবল সেই অর্থে যে তারা রাজনীতির বিপজ্জনক বিষয়গুলোর বিরোধিতা করবে এবং তার মধ্যেই লেখক নিজেকে সীমিত রাখবে।’ এটা কি রাজনীতি জগতের অগ্রগতি আনতে পারে—এ রকম ধারণার প্রতি একধরনের হতাশাবাদী মনোভাব নয়?
য়োসা: না, হতাশাবাদী নয়। বরং আমি বলতে চেয়েছি, সাহিত্যের সঙ্গে স্থায়িত্বের ভাব যুক্ত, তার তুলনায় রাজনীতি অনেক বেশি ক্ষণস্থায়ী। একজন লেখক কখনো সাহিত্য ও রাজনীতিকে সমান জায়গায় রাখতে পারেন না। তা যদি রাখেন তাহলে তিনি লেখক হিসেবে যেমন ব্যর্থ হবেন, সম্ভবত রাজনীতিবিদ হিসেবেও ব্যর্থ হবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই ক্ষণস্থায়ী। আর সাহিত্য টিকে থাকার জন্যই জন্মায়। আপনি নিশ্চয়ই শুধু বর্তমানের জন্য কোনো বই লিখবেন না। কারণ, সাহিত্য সময় পেরিয়ে ভবিষ্যতেও বেঁচে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ততটা থাকে না বা থাকলেও খুব কমই থাকে।
তবে আমি সব সময়েই রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার-বিবেচনা করে দেখছি এবং আমার লেখা ও কাজের মাধ্যমে নিজেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করে রাখছি ঠিকই। এগুলো করা আমি কখনো বন্ধ করিনি। আমার বিশ্বাস, একজন লেখক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এড়িয়ে যেতে পারেন না, বিশেষত আমার দেশের মতো দেশে, যেখানে সমস্যা জটিল এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি প্রায়ই নাটকীয় মোড় নেয়। তাই এসব সমস্যার সমাধানে অবদান রাখার জন্য এসব ব্যাপারে লেখকদের কোনো না কোনোভাবে—সমালোচনা করে, ধারণা দিয়ে কিংবা কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে সক্রিয় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু আমি আপনার যে উক্তিটি তুলে ধরেছিলাম তাতে রাজনীতির ব্যাপারে একধরনের হতাশাবাদী মনোভাব রয়েছে। যাহোক, লেখকদের কি কেবল বিরোধিতা করেই কথা বলা, তার মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখা উচিত, নাকি রাখা সম্ভব?
য়োসা: আমার মনে হয়, লেখকদের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়া, বিচার-বিবেচনা করে দেখা এবং হস্তক্ষেপ করা খুবই দরকার। তবে একই সঙ্গে এটাও জরুরি যে রাজনীতি যেন সাহিত্যিক ক্ষেত্র, লেখকের সৃজনশীল জগতের ওপর আক্রমণ করে তা ধ্বংস করে না ফেলে। যদি ধ্বংস করে ফেলে তাহলে লেখক মরে যায়। সে হয়ে ওঠে কেবলমাত্র একজন প্রচারক। তাই লেখকের জন্য অত্যন্ত জরুরি হলো তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সীমারেখা টেনে রাখা। তবে এমনভাবে সেই সীমা টানতে হবে, যাতে তার নিজের মতো প্রকাশের দায়িত্ব অস্বীকার করতে বা পরিত্যাগ করতে না হয়।
আপনি একজন লেখক হয়ে সব সময় রাজনীতির প্রতি গভীর অবিশ্বাসের কথা বলেছেন। তারপরও কীভাবে ১৯৯০ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হলেন?
য়োসা: কোনো দেশ যখন কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পড়ে, যেমন কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে যায়, তখন সেখানে বিকল্প কিছু থাকে না। সে সময় পেরুর অবস্থা ঠিক সে রকম দুর্যোগময় হয়ে ওঠে। অর্থনীতি ডুবে যায়। মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে। ১৯৮৯ সালের প্রথম দশ মাসে, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে যায়। রাজনৈতিক সহিংসতা চরম বিধ্বস্ত অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে দেশে এ রকম বিশাল সংকট থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দিকে বড় ধরনের পরিবর্তন করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই সুযোগটি হারানো উচিত নয় বলে আমরা মনে করি। তাই আমি আমার সব দ্বিধা দূর করে রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করি, মানে নির্বাচনে প্রার্থী হই। তা শেষ পর্যন্ত একটা সরল বিশ্বাসের মতো হয়ে দাঁড়ায়।
মারিও বার্গাস য়োসা পেরুর দক্ষিণের ছোট শহর আরকুইপায় ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রাজধানী লিমায় পড়াশোনা শেষ করার পর বার্গাস য়োসা পেরু থেকে স্বেচ্ছায় সতেরো বছরের নির্বাসনে যান। এই নির্বাসনের সময়কালে তিনি উপন্যাস লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’ (১৯৬৩) স্পেনে প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য গ্রিন হাউস’ (১৯৬৩), ‘কনভারসেশন ইন দ্য ক্যাথিড্রাল’ (১৯৬৯) এবং ‘দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ (১৯৮১)। বার্গাস য়োসা একজন নাট্যকার, প্রবন্ধকারও। নোবেল পুরস্কার ছাড়াও তিনি বহু আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন।