
ভাষাসংগ্রামী ও গবেষক আহমদ রফিক সম্প্রতি প্রয়াত হলেন। তাঁর জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলা ভাষা, রাজনীতি, রবীন্দ্র-গবেষণা, একুশের মর্ম ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন। ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক গোলাম শফিক
আপনার মনন গঠনে কারও অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন কি?
আহমদ রফিক: অনুপ্রেরণা নিশ্চয়ই ছিল। তবে আমার কোনো গুরু ছিল না। দেশের মানুষই আমার গুরু। তাঁরা সময়ে সময়ে আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। দেশের ও সমাজের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমি বিভিন্ন অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। ভিন্নমাত্রিক পরিবেশে মানুষের মনের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া থেকে আমি শিক্ষা গ্রহণ করেছি। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, এক শহর থেকে অন্য শহরে যখন যেতাম, তখন মানুষের জীবনভাষ্যে ভিন্নতা লক্ষ করতাম। এই ভিন্নতার মধ্যেই আমি নিজস্ব চিন্তার উপাদান ও ঐক্য খুঁজে নিয়েছিলাম। এভাবে সময়ের পরিক্রমায় ক্রমে আমার মনন গঠিত হয়েছিল।
জীবনের এই পর্যায়ে এসে আপনি কি মনে করেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
আহমদ রফিক: একুশের চেতনা সমাজে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি। আমরা এর ইতিবাচক ফল পেয়েছি, কিন্তু সীমিতভাবে। এটা অবশ্যই আমাদের ভাবায় যে কেন সর্বস্তরে বাংলা ভাষা বায়ান্নর ৭০ বছর পরও চালু হয়নি। এখনো ইংরেজির মহাদাপুটে অস্তিত্ব লক্ষ করি। এর জন্য ঔপনিবেশিক মানসিকতাই দায়ী। আমরা এখনো উপনিবেশের দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙতে পারিনি, জাপান-কোরিয়া যেটা পেরেছিল। কারণ, তাদের সাহস আছে। তাদের জ্ঞান–বিজ্ঞানের চর্চা, উচ্চশিক্ষার পাঠদান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা—সবই সম্পন্ন হচ্ছে তাদের মাতৃভাষায়। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশের শাসন অনেক মজবুত ছিল। এটিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য ঔপনিবেশিক প্রভুরা একটা শিক্ষিত শ্রেণি তৈরি করেছিল। এই শিক্ষিত শ্রেণির সমর্থনেই উপনিবেশ স্থাপনকারীরা বৈধতা পেয়েছিল। ব্রিটিশরাজের অধীন উনিশ ও বিশ শতকে বাংলার যে রেনেসাঁর কথা আমরা বলি, সেটা প্রকৃত পুনর্জাগরণ নয়। ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে যখন কেউ বের হয়ে আসতে পারেনি, তখন সেটিকে পুনর্জাগরণ বা নবজাগরণ বলা ভুল। উনিশ শতকে রাজা রামমোহন রায়ের নেতৃত্বে যে ব্রাহ্মসমাজের আবির্ভাব ঘটেছিল, তা–ও ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমেই। উপনিবেশের নাগপাশে আবদ্ধ থেকে ভালোমন্দ যাচাই-বাছাই করার অবাধ সুযোগ থাকে না। অথচ ইতালির রেনেসাঁর পর যে পুনর্জাগরণ সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডই ছিল মাতৃভাষায় নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতিনির্ভর। ইউরোপের প্রতিটি দেশেই শিক্ষাদীক্ষায় মাতৃভাষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, আমরা সেটা পারিনি।
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশের শাসন অনেক মজবুত ছিল। এটিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য ঔপনিবেশিক প্রভুরা একটা শিক্ষিত শ্রেণি তৈরি করেছিল। এই শিক্ষিত শ্রেণির সমর্থনেই উপনিবেশ স্থাপনকারীরা বৈধতা পেয়েছিল।আহমদ রফিক
ভাষা আন্দোলনের পর দীর্ঘ পথপরিক্রমা শেষে আমরা রাষ্ট্রভাষার দাবি থেকে চলে এসেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষায়। একে আপনি কীভাবে দেখেন?
আহমদ রফিক: এটা তো ফলপ্রসূ হয়নি। একটি আধুনিক ভবন তৈরির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধির বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়নি। ইউনেসকো ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার পর যে আবেগ জাতির মধ্যে লক্ষ করেছি, তা কার্যক্ষেত্রে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অন্যান্য কারণে এ বিষয়ে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি।
আপনি রবীন্দ্র–গবেষণায় কীভাবে এসেছিলেন?
আহমদ রফিক: প্রথমত, প্রচণ্ড এক ভালোবাসা ও ভালো লাগা থেকে রবীন্দ্র–গবেষণায় প্রবেশ করেছিলাম। দ্বিতীয়ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে মুসলমান সমাজের অজ্ঞতা ও ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটানোর জন্য কিঞ্চিৎ দায়িত্ব অনুভব করেছিলাম। আমি লক্ষ করেছি, আজাদ বা মোহাম্মদী পত্রিকা এবং স্বয়ং মাওলানা আকরম খাঁ রবীন্দ্রনাথের যথাযথ মূল্যায়ন করেননি। এসব ছিল ভুল ও অবিচার। এ বিষয়ে আরেক কালান্তরে নামে আমি প্রথমে বই লিখি। বাংলা একাডেমি ১৯৭৭ সালে সেটি প্রকাশ করে।
আমাদের পশ্চাৎপদ সমাজে এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল যে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তিনি যদি এর বিরোধিতাই করবেন, তবে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ১৯২৬ সালে এখানে আসতেন? সে সময় তিনি কার্জন হলের দুটি অনুষ্ঠানে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ ও জগন্নাথ হলে গিয়েছিলেন এবং নবাববাড়ির চায়ের আমন্ত্রণ হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করেছিলেন। তখন ঢাকার নবাবদের ‘তুরাগ’ বোটে বুড়িগঙ্গা নদীতে তিনি অবস্থান করেছিলেন। প্রথম দিনেই তিনি করোনেশন পার্কে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাঁর সফরের শেষ দিকে তিনি কয়েক দিন রমেশচন্দ্র মজুমদারের বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন। সে সময় কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল ফজল, অপূর্বকুমার চন্দ (ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ) ও অন্যরা তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করলে আবাসিক ছাত্ররা বৈদ্যুতিক পাখার মাধ্যমে পুষ্পবৃষ্টির ব্যবস্থা করেছিল। তিনিও তাদের প্রশংসা করে বলেছিলেন, পূর্ববঙ্গের যুবকেরা খুব ভালো। তারা সংস্কারমুক্ত ও ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু কেউ কেউ এই উদার রবীন্দ্রনাথকে ভুল বুঝেছিলেন। তাই আমি চেয়েছিলাম এহেন ভুল–বোঝাবুঝির অবসান হোক এবং এ ভূখণ্ডের মানুষ বিশাল রবীন্দ্রভান্ডারের রসে সিক্ত হোক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে মুসলমান সমাজের অজ্ঞতা ও ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটানোর জন্য কিঞ্চিৎ দায়িত্ব অনুভব করেছিলাম। আমি লক্ষ করেছিলাম, আজাদ বা মোহাম্মদী পত্রিকা এবং স্বয়ং মাওলানা আকরম খাঁ রবীন্দ্রনাথের যথাযথ মূল্যায়ন করেননি।আহমদ রফিক
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেও চিকিৎসক হলেন না। হলেন গবেষক। এর কোনো কারণ ছিল?
আহমদ রফিক: ১৯৫২ সালে আমি ছিলাম ভাষাসংগ্রামী। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। পরে দীর্ঘ চেষ্টার পর মেডিকেল কলেজে আবার ভর্তি হই। ডিগ্রি অর্জন করি ১৯৫৭ সালের জানুয়ারিতে। তার আগেই সংসারজীবন শুরু হয়েছিল, ১৯৫৬ সালে। ইতিমধ্যেই যুগপৎ ছাত্ররাজনীতি ও সাহিত্যচর্চার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। জীবিকার প্রয়োজনে শুরু হয়েছিল নানা তৎপরতা। আমাকে লিখতে হয়েছিল গোয়েন্দা গল্পের বই ও নোটবই। করেছি টিউশনি, মিল্লাত পত্রিকায় সাব-এডিটরের সাময়িক চাকরি। এর মধ্যে মেডিকেল প্র্যাকটিসও ঢিমেতালে চলছিল। এত এত কাজে জড়িয়ে পড়ে একসময় ভাবতে লাগলাম, আমার হয়তো ডাক্তারি করা আর হবে না।
দেশের বর্তমান রাজনীতি কেমন দেখছেন?
আহমদ রফিক: রাজনীতি খুবই দূষিত, অসহিষ্ণু ও সহিংস। রাজনীতির চর্চা হয়ে গেছে অর্থবিত্তনির্ভর। এতে ব্যাপক দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে।
আপনি বরাবরই ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
আহমদ রফিক: ধর্মীয় উগ্রপন্থা খুব খারাপ চর্চা। এটি সুযোগসন্ধানীদের মাথা তোলার সুযোগ করে দেয়। আমাদের তরুণসমাজকে তারা মারাত্মকভাবে বিভ্রান্ত করেছে। এ ধারা অব্যাহত আছে। সুযোগ পেলে এ প্রবণতা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
একজন মার্ক্সবাদী হিসেবে সমাজতন্ত্রকে কি আপনি ব্যর্থ মনে করেন? সমাজে কি আদৌ সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে?
আহমদ রফিক: সমাজতন্ত্র একটি উৎকৃষ্ট আদর্শ। নানা কারণে এর পতন হয়েছিল। তবে ওই চেহারা নিয়ে সমাজতন্ত্র আর ফেরত আসবে না। একটি উত্তম আদর্শ বলে বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে দেশ পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে কি আপনি সম্ভাবনা দেখেন? তাদের অনেকেই তো বিদেশ চলে যাচ্ছে। এটা নিরাপত্তা, নাকি দেশপ্রেমের অভাব?
আহমদ রফিক: তাদের একতরফা দোষ দেওয়ার কিছু নেই। দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। বাস্তবতাই তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। যেখানে দলীয় বিবেচনা বড় হয়ে যায়, সেখানে প্রকৃত যোগ্যতা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় না। এ কারণে মেধাবী তরুণেরা হতাশ হয়ে পড়ছে। যেখানে গিয়ে তারা সুবিধা পাবে, সেখানেই যাচ্ছে।
তাদের (তরুণ প্রজন্মকে) একতরফা দোষ দেওয়ার কিছু নেই। দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। বাস্তবতাই তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। যেখানে দলীয় বিবেচনা বড় হয়ে যায়, সেখানে প্রকৃত যোগ্যতা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় না।আহমদ রফিক
প্রযুক্তির প্রসারে মানুষের পাঠাভ্যাস নির্বাসিত হয়েছে। ভবিষ্যতে জাতীয় জীবনে এর কী প্রভাব পড়বে বলে আপনার ধারণা?
আহমদ রফিক: পাঠাভ্যাস হ্রাস পাওয়ার কারণে একপর্যায়ে গিয়ে আমরা আর সুনাগরিক পাব না। জাতির তাতে সর্বনাশ হবে। ১৯৪৯ সালে ঢাকা শহরে এসে আমি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই, তখন বিভিন্ন মহল্লায় পাঠাগার দেখতে পেয়েছি। দেখেছি, অনেক উদ্দীপনা নিয়ে মানুষ পাঠাগারে যাতায়াত করছে। কিন্তু আমরা সেই উদ্দীপনাকে ধরে রাখতে পারিনি। যেকোনোভাবে বই পড়ার সেই অভ্যাস আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।
এখন অধিকাংশ সময়ই আপনার শুয়ে-বসে কাটছে। আপনার মনে কি কোনো আক্ষেপ হয়?
আহমদ রফিক: নিশ্চয়, আক্ষেপ একটা আছে। চোখে দেখতে পারি না বলে এখন লিখতেও পারি না। লেখাই আমার জীবন, লেখাই আমার সব। এই অক্ষমতার জন্য ভীষণ খারাপ লাগে। বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট।
বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল নেপালকে হারিয়ে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আহমদ রফিক: শুনে খুবই ভালো লাগছে। আমি সব সময়ই নারী অগ্রগতির প্রবক্তা। এ ঘটনা নারী অগ্রগতির একটি দৃশ্যমান সূচক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের মেয়েদের আরও ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। দেশের সব ক্ষেত্রেই নারী অগ্রগতির এ ধরনের সূচক চাই।
প্রত্যেকেই শ্রম দিয়ে নিজের ভুবন গড়ে তুললে সার্বিকভাবে দেশ উপকৃত হবে। সমাজ পরিবর্তনের সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক নাগরিকের। আমরা নৈতিক উন্নয়নের কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যাইনি। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত নৈতিক উন্নয়ন।আহমদ রফিক
কখনো কি মনে হয়েছে সমাজকে কোথায় রেখে যাচ্ছেন?
আহমদ রফিক: সমাজকে একটি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় রেখে যাওয়া কারও একার দায়িত্ব নয়। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে আত্মজিজ্ঞাসা থাকা উচিত। আমাদের চিন্তা ও প্রক্রিয়ায় নিশ্চয় গরমিল ছিল। তাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারিনি। দেশের জন্য, সমাজের জন্য কী করতে পেরেছি, সবারই তা নিয়ে আত্মজিজ্ঞাসা থাকা দরকার। শাসকেরাও আত্মজিজ্ঞাসা করে দেখুক না, তারা দুর্নীতি কেন নির্মূল করতে পারেনি।
দেশবাসীর জন্য কি বলার কিছু আছে?
আহমদ রফিক: আমাদের আরও দেশপ্রেমিক হওয়া দরকার। সমাজের বিকাশে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই দায়বদ্ধতা থেকে সার্বিক মুক্তির জন্য প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু করতে হবে। প্রত্যেকেই শ্রম দিয়ে নিজের ভুবন গড়ে তুললে সার্বিকভাবে দেশ উপকৃত হবে। সমাজ পরিবর্তনের সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক নাগরিকের। দুর্নীতি উন্নয়নকে গ্রাস করে ফেলে। আমরা নৈতিক উন্নয়নের কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যাইনি। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত নৈতিক উন্নয়ন।
দীর্ঘ একটা জীবন পেলেন। কোথাও কোনো অতৃপ্তি আছে?
আহমদ রফিক: জীবনে আমি কিছু হতে চাইনি, পেতেও চাইনি। কেবল চেয়েছিলাম সামাজিক সাম্য, দেশের উন্নতি, নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন অবস্থান ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলা ভাষার রাষ্ট্র। এ জন্য আমার সোনালি কর্মক্ষেত্র বিনষ্ট করে আমি ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী অন্যান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু আমি যেসব আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিলাম, সমাজবদলের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রতিফলন দেখি না। বাংলা এ দেশের রাষ্ট্রভাষা হলেও সর্বস্তরে তা ব্যবহৃত হচ্ছে না। জাতির এসব অপূর্ণতা আমার অতৃপ্তির কারণ হয়েছে।