
এই সাক্ষাৎকারে (শরৎ ১৯৬৬), পাররা আর উইলিয়ামস—পাররার কবিতার উল্লেখযোগ্য প্রভাব, বিশেষ করে ‘অ্যান্টিপোয়েট্রি’র বিকাশ, পরাবাস্তববাদের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা এবং নেরুদার মতো সমসাময়িকদের থেকে তাঁর দার্শনিক বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে বৈজ্ঞানিক পটভূমি আর কাব্যিক প্রকাশের মধ্যে ছেদ এবং লাতিন আমেরিকান কবিতার বৃহত্তর প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেছেন।
• আলাপচারিতা: মিলার উইলিয়ামস
• অনুবাদ: ঋতো আহমেদ
নিকানোর পাররা হলেন স্প্যানিশ ভাষায় লেখালেখির সবচেয়ে বিখ্যাত কবিদের একজন। সম্ভবত আজকের স্প্যানিশ বলাই ভালো হবে। কারণ, ভাষাকে তার পথের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য, ভাষাকে তার সীমার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার জন্য পাররার চেয়ে বেশি আর কেউ করেননি। এমনকি ভিসেন্তে হুইদোব্রোও তাঁর শত্রুদের কাছে এতটা অবক্ষয়ের প্রতীক বা তার রক্ষকদের কাছে এতটা সেলিব্রিটি ছিলেন না যতটা পাররা ১৯৫৪ সালে ‘পোয়েমস অ্যান্ড অ্যান্টিপোয়েমস’ প্রকাশের পর হয়েছিলেন।
১৯১৪ সালে চিলির দক্ষিণে চিলিয়ানে জন্মগ্রহণকারী পাররা সেখানেই বেড়ে ওঠেন। তাঁর বাবা যে স্কুলে পড়াতেন, তার আশপাশে বা গ্রামের কবরস্থানের পাথর নিয়ে তাঁর ভাইবোনদের সঙ্গে খেলতেন। চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা ছিল গণিত আর পদার্থবিদ্যায় কেন্দ্রীভূত, যা তিনি রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় আর অক্সফোর্ডেও চালিয়ে গেছেন। তিনি চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউটো পেডাগোজিকোতে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন। এই পদে ভালো থেকেও কয়েক বছর ধরে পিকিং, মস্কো, মেক্সিকো সিটি, হাভানা, প্যারিস এবং সান ফ্রান্সিসকোতে নিয়মিত কবিতা পড়েছেন তিনি। লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসরও ছিলেন।
নিকানোর পাররা হলেন স্প্যানিশ ভাষায় লেখালেখির সবচেয়ে বিখ্যাত কবিদের একজন। সম্ভবত আজকের স্প্যানিশ বলাই ভালো হবে। কারণ, ভাষাকে তার পথের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য, ভাষাকে তার সীমার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার জন্য পাররার চেয়ে বেশি আর কেউ করেননি।
পাররা বুদ্ধিমান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন। সমসাময়িককাল আর তাঁর গল্পগুলোর প্রতি ছিলেন উদার। ঠিক তার অ্যান্টিপোয়েমসের মতো—মনে হয় যেন এমন একটি পাথর থেকে তৈরি করা হয়েছে, না তাকালে বদলে যেতে থাকে। তার মধ্যে দারুণ দৃঢ়তা, বুদ্ধির জোর আর একই সঙ্গে গিরগিটির মতো অবিশ্বাস্য ও অদ্ভুত ব্যাপার রয়েছে। তাঁর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলার পর, তাঁর রুক্ষ পাথরের বাড়িতে সন্ধ্যার পরে, যে কেউ সান্তিয়াগোর দিকে তাকিয়ে বেশ ভালো ও ক্লান্ত বোধ করবেন।
পাররা রাশিয়া সফর থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পরেই আমার বন্ধুরা আমাকে সেই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সেদিনই আমি তাঁর সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করছিলাম। তবে সাক্ষাতের পর মনে হচ্ছিল যেন আমাদের এটা হাজারতমবার দেখা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা শক্ত রুটি খাচ্ছিলাম আর বিখ্যাত চিলির ওয়াইন ঢেলে গল্প করছিলাম।
—মিলার উইলিয়ামস
আমি গোসলের বিরুদ্ধে নই, এবং আমি কবিতার জন্য গাঁজা ব্যবহারেরও পক্ষে নই।নিকানোর পাররা
আপনাকে বলা হয় ১৯৩৮ সালের প্রজন্মের একজন সদস্য। এর মানে হলো আপনি অন্তত ২৬ বছর আগে লেখালেখি করতে আসেন, অবশ্যই সেটা আপনার গণিতবিদ হওয়ারও আগে। গণিত ও পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে আপনাকে কোন ব্যাপারটা এগিয়ে নিয়ে গেছে?
পাররা: একযোগে সর্বত্র উপস্থিত থাকার সৎ ইচ্ছা। এটা কোনো বৌদ্ধিক অহংকার ছিল না। ছিল একীভূত হওয়ার প্রবৃত্তি। কিন্তু অবশ্যই, ইচ্ছাটা ব্যয়বহুল। অন্য লেখকেরা আমাকে বিজ্ঞানের মানুষ বলে মনে করেন, আর আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা আমাকে একজন লেখক হিসেবে দেখেন। এর পেছনে বাস্তবিক কারণও আছে। আমাদের সমাজে পূর্ণকালীন কবির কোনো স্থান নেই। তথাকথিত অনুন্নত দেশে টিকে থাকতে হলে, একক কোনো ব্যক্তির যেকোনো একটা দলে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
আপনার বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ কি আপনার কবিতাকে কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে? আপনার কবিতার নির্দিষ্ট চিত্রে, অথবা আপনার কবিতার কঠিন অনুভূতির প্রকাশে, অর্থাৎ কবিতার সংক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য কি এটি কোনোভাবে দায়ী?
পাররা: চিত্রকল্পের ক্ষেত্রে, হ্যাঁ। ধ্রুপদি বলবিদ্যার মৌলিক বিষয়গুলোর একজন ছাত্র হিসেবে, আমি কেবল তখনই পদক্ষেপ নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছি, যখন আমি রাস্তাটি স্পষ্ট দেখতে পাই। গণিতের ঐতিহাসিক-সমালোচনামূলক পদ্ধতি, সচেতনভাবে বা অচেতনভাবে কাব্যিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে পরিচালিত হলে, একটি স্পষ্ট, ঝরঝরে আর স্বচ্ছ অভিব্যক্তিতে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু আবার কখনো কখনো প্রক্রিয়াটি বিপরীত দিকেও কাজ করে। আমি বলতে চাইছি যে অ্যান্টি-পোয়েট্রির হাতিয়ারটি নিউটনের খুলি ট্রফিন করতে ভালো ব্যাটারিং র্যাপম তৈরি করে, ভেতরে কী ঘটেছে, তা দেখার জন্য। সেই ট্রফিনেশনের ফলে আমাদের অ্যান্টি-মেকানিকস পেয়েছি, যা জড়তার পরিপ্রেক্ষিতে মহাকর্ষীয় ভরের পরিচয়ের নীতি দিয়ে শুরু করে F সমান ma সমীকরণের রহস্য ব্যাখ্যা করে।
ফার্নান্দো আলেগ্রিয়া বলেছেন যে আপনিই আপনার প্রজন্মের একমাত্র লেখক যিনি একটি ‘বিদ্যালয়’ তৈরি করেছেন। চিলিতে কি আসলেই কোনো পরাবাস্তববাদী কবিতার স্কুল আছে?
পাররা: আচ্ছা, মনোবিশ্লেষণমূলক নীতির প্রতি আমার যতই শ্রদ্ধা থাকুক না কেন আমি নিজেকে চিলিয়ান বা ফরাসি পরাবাস্তববাদীদের সঙ্গে মেলাই না। আমি ফ্রয়েডীয় গভীরতার মতোই ভাসা ভাসা মানসিক প্রক্রিয়াগুলোকেও পছন্দ করি। অবিচ্ছেদ্য মানুষের সঙ্গে কাজ করি। কেবল একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্তা হিসেবেই নয়, খুব উল্লেখযোগ্যভাবে, একটি ঐতিহাসিক সত্তা হিসেবেও কাজ করি। উদ্ধৃত করতে গেলে—মানবিক কোনো কিছুই আমার কাছে অপরিচিত নয়। এই কারণেই আমি সৌন্দর্যের কবিদের সঙ্গে বিভ্রান্ত নই, আমার বইতে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না একে। আমি নিজেকে একজন কবি-প্রতিকবি বলতে পছন্দ করি। এ ছাড়া এসব কবিতার বিকাশের ক্ষেত্রে, এনরিক লিন—চিলির কবিতার একজন মহান ও নতুন ব্যক্তিত্ব—রাউল রিভেরা, গ্যাব্রিয়েল কারভাজাল, মারিও ফেরেরো, আরমান্দো উরিবে এবং আরও বেশ কয়েকজনকে কবি-প্রতিকবি বলা হয়েছে। এমনকি নেরুদাকেও, তাঁর এস্ট্রাভাগারিওর জন্য।
নিজেকে চিলিয়ান বা ফরাসি পরাবাস্তববাদীদের সঙ্গে মেলাই না। আমি ফ্রয়েডীয় গভীরতার মতোই ভাসা ভাসা মানসিক প্রক্রিয়াগুলোকেও পছন্দ করি। অবিচ্ছেদ্য মানুষের সঙ্গে কাজ করি। কেবল একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্তা হিসেবেই নয়, খুব উল্লেখযোগ্যভাবে, একটি ঐতিহাসিক সত্তা হিসেবেও কাজ করি।নিকানোর পাররা
সিমন কার্গিম্যানের লেখা ‘অ্যান্টিপোয়েমস ১৯৬২’ নামে একটি বই আর্জেন্টিনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অন্য লেখকদের মধ্যে যাঁরা এই প্রতিকবিতার অর্থ বোঝেন তাঁরা হলেন উরুগুয়ের মারিও বেনেডেট, ভেনেজুয়েলার কার্লোস রেবোলেডো, পানামার অ্যারিস্টিডেস মার্টিনেজ এবং বলিভিয়ার অস্কার ইচাজা। এবং কিছু উত্তর আমেরিকার কবি, যেমন গিন্সবার্গ, ফেরলিংহেটি আর লুইস গার্সিয়া। আমি যখন রাশিয়ায় ছিলাম তখন ভোসনেজেনস্কির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলাম, তিনি একজন প্রতিকবি। জুয়ান-আগাস্টিন পালাজুয়েলসও এখন প্রতিকবিতাতে কাজ করছেন। প্রতিকবিতার অসামান্য ব্যাখ্যাকারেরা হলেন জর্জ এলিয়ট, লিহন, সার্জিও হার্নান্দেজ, ফ্রেডেরিকো শপফ এবং চিলির পেদ্রো লাস্ট্রা, উরুগুয়ের বেনেডেটি আর রদ্রিগেজ মোনেগাল, সুইডেনের আর্থার লুন্ডকুইস্ট আর রাশিয়ার ভিদাস সিলিমাস। প্রতিকবিতার আরও অপ্রতিরোধ্য শত্রু হলেন পাবলো ডি রোখা এবং নেইভ ফাদার সালভাটিয়েরা।
প্রতিকবিতা বা প্রতিকবিদের বর্ণনা করতে গিয়ে আপনি কি ‘বিট’ শব্দটি ব্যবহার করবেন?
পাররা: আচ্ছা, আপনি জানেন সান ফ্রান্সিসকোর বিটনিকরা আমার প্রতিকবিতার একটি সংগ্রহ সম্পাদনা করেছেন। তারা স্বাভাবিকভাবেই আমার লেখার প্রতি আগ্রহী, কারণ আমাদের লেখায় কিছু সাধারণ উপাদান রয়েছে। প্রথমত, আমরা সবাই অপ্রতিরোধ্যভাবে অ-অনুসারী। বিটনিক এবং প্রতিকবিরা হাসিকে মুক্তির শক্তি হিসেবে বিশ্বাস করেন। কিন্তু আমি গোসলের বিরুদ্ধে নই, এবং আমি কবিতার জন্য গাঁজা ব্যবহারেরও পক্ষে নই।
আপনার কবিতাগুলোকে সাধারণত ‘পরাবাস্তববাদী’ বলা হয়। ‘সলিলোকুইও দেল ইন্ডিভিডুও’ এবং ‘লা মন্টানা রুসা’র মতো কবিতাগুলো অবশ্যই পৃথিবী সম্পর্কে আপনার বিশ্বাস সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলে। এগুলো কিছুটা হলেও শিক্ষামূলক। কিন্তু ‘সুয়েনোস’ সম্পূর্ণরূপে পরাবাস্তববাদী চিত্রকল্প বলে মনে হয়। সামগ্রিকভাবে আপনার রচনার সঙ্গে এটি কীভাবে সম্পর্কিত?
পাররা: ‘সুয়েনোস’-এ আমি একজন জাগ্রত পাঠকের ঘুমের অনুভূতি তৈরির চেয়ে বেশি কিছু করিনি। জাদুর লন্ঠনের মতো প্রাথমিক স্বপ্নের পরিস্থিতিগুলোকে উপস্থাপনের সহজ পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। হয়তো এখানেই আমি নিজেকে বাস্তববাদের সবচেয়ে কাছাকাছি খুঁজে পাই। কিন্তু নিয়ম হিসেবে আমার কবিতা যতবার স্বপ্নের দেশে প্রবেশ করে, ততবারই জাগ্রত অবস্থায় ডুব দেয়। অর্থাৎ অ্যান্টিপোয়েট্রি একই শক্তিতে সমস্ত দিকেই গুলি চালায়।
আপনি প্রায়ই ৪০ সংখ্যাটি ব্যবহার করেন। এই সংখ্যাটির কি আপনার কাছে বিশেষ কোনো তাৎপর্য আছে?
পাররা: সেভাবে বুঝে করিনি। সম্ভবত সংখ্যাটি স্প্যানিশ ব্রিস্কা থেকে নিয়েছি, চিলানের পাড়ায় ছোটবেলায় এমন একটি তাস খেলা আমি অনেক খেলতাম। ব্রিস্কা চল্লিশে—ঘোড়া এবং ট্রাম্প রাজা—একটি বিজয়ী সমন্বয়।
আপনার কবিতা নেরুদার গীতিকার থেকে স্পষ্টতই ভিন্ন। যেহেতু তিনি অন্তত কিছুটা সময় উপকূলে থাকেন, আর আপনি এখানে সান্তিয়াগোতে, তাই আমার মনে হয় ‘ভিভা লা কর্দিলেরা দে লস আন্দেস’ কবিতাটি, যা মূলত ‘উপকূলীয় পরিসরের সঙ্গে আন্দিজ পর্বতমালার শুভেচ্ছা’র মতো কিছু,—এটা কি নতুন কবিতা আর প্রচলিত রচনা সম্পর্কে আপনার অনুভূতির প্রকাশ?
পাররা: লোকেদের মধ্যে আমার কাজকর্ম আর চিন্তাভাবনাকে নেরুদার পরিপ্রেক্ষিতে ভাবার প্রবণতা রয়েছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ লাতিন আমেরিকান কাব্যিক প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি সম্ভবত সবচেয়ে স্বাভাবিক এবং বৈধ রেফারেন্স কাঠামো গঠন করেছেন, এমনকি কেউ কেউ আমাকে নেরুদাবিরোধী বলেও অভিহিত করেন। যারা ‘ডিসকারসোস’ [নেরুদা ও পাররার রচনা, ন্যাসিমেন্টো প্রেস, স্টগো, ১৯৬২] পড়েছেন তাঁরা জানেন যে আমাদের মধ্যে কোনো গভীর বিভাজন নেই। আমাদের সম্পর্ক পিতার সঙ্গে পুত্রের, হটেনটটের সঙ্গে কাফিরের নয়। বুদ্ধিবৃত্তিক আর স্নেহের ক্ষেত্রে আমাদের এই সম্পর্ক সত্য। আমার কবিতাগুলো সেই নেতিবাচকতার দিকে লক্ষ্য করে সৃষ্ট যা প্রতিটি আবেগগত স্পষ্টবাদিতা নিশ্চিতকরণে নিহিত। জীবনের আনন্দের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা আর মৃত্যুর হাস্যকর নিন্দার সমতুল্য। মনে রাখবেন যে চিলিতে সূর্য আন্দিজ পর্বতমালায় উদিত হয় আর অস্ত যায় সমুদ্রে।
কেউ কেউ আমাকে নেরুদাবিরোধী বলেও অভিহিত করেন। যারা ‘ডিসকারসোস’ [নেরুদা ও পাররার রচনা, ন্যাসিমেন্টো প্রেস, স্টগো, ১৯৬২] পড়েছেন তাঁরা জানেন যে আমাদের মধ্যে কোনো গভীর বিভাজন নেই। আমাদের সম্পর্ক পিতার সঙ্গে পুত্রের, হটেনটটের সঙ্গে কাফিরের নয়।
নিকানোর পাররা স্প্যানিশ কবিতার কাঠামো ভেঙে দিয়েছেন, যেমন হুইটম্যান ভেঙেছিলেন ইংরেজিতে এবং পাউন্ড আবারও ইংরেজিতে। আপনি কি এটাই করতে চেয়েছিলেন?
পাররা: হ্যাঁ। এটা এমন একটা কাজ ছিল যা আমাকে করতেই হতো। আলো আর অক্সিজেন প্রবেশের জন্য আমাদের অ্যাথেনিয়ামের দরজা-জানালা খুলে দিতে হয়েছিল। আবার রক্তমাংসের মানুষটির ওপর মনোনিবেশ করতে হয়েছিল, তার সমস্ত মাত্রায়, ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ক্ষেত্রেই। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য এখনো পাউন্ডের চেয়েও কঠোর। কারণ, আমি এমন একটি গিরগিটির সঙ্গে কাজ করি যে বর্ণালির সব রঙের ভেতর দিয়ে ঘোরাফেরা করে। সে একই সঙ্গে স্পষ্ট ও দৃঢ়, সর্বহারা ও বুর্জোয়া, অসুস্থ ও সুস্থ। আমার সৃষ্টির একমাত্র ধ্রুবক হলো সত্যতা।
আমেরিকায় এখন এমন কিছু লেখা হচ্ছে যাকে অ্যান্টিপোয়েট্রি বলা যেতে পারে—কার্ল শাপিরো এবং অন্যদের গদ্য-কবিতা। আপনি কি এর সঙ্গে পরিচিত?
পাররা: না, আমি শাপিরোকে চিনি না, কিন্তু আমি খুব শিগগির তাঁকে পড়ব।
আপনার প্রাথমিক কবিতা কি স্প্যানিশ মাস্টারদের ঐতিহ্যবাহী রচনার অনুকরণে রচিত হয়েছিল?
পাররা: আমি একজন গার্সিয়ালোরকুইয়ান কবি হিসেবে শুরু করেছিলাম। সেই সময় আমার কর্মপরিকল্পনা ছিল চিলিতে প্রয়োগ করা, যে পদ্ধতি লোরকা স্পেনে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর আমার গুরুর প্রতি মোহভঙ্গ হয়ে যায়। আমাকে আমার নিজস্ব মতবাদ নিয়ে ভাবতে হয়। তারপর, যখন আমি নিজের জন্য ভাবতে শুরু করি, তখন প্রথমেই আমি বুঝতে পারি যে আমার চরিত্রটি নবজাগরণ থেকে উদ্ভূত নয় বরং অনেক আগের। অ্যারিস্টোফেনিস থেকে। চসার থেকে। গেস্টা রোমানোরাম থেকে। স্প্যানিশ পিকারেস্ক উপন্যাস থেকে। সার্ভান্তেস থেকে। কুয়েভেদো থেকে। এবং তারপর কাফকা আর চ্যাপলিন থেকে। কিন্তু এই প্রতিকবিতার সৃষ্টিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল চিলির জনপ্রিয় চরিত্রগুলো। বিশেষ করে এলকুই এবং এল রোটো চোরোর খ্রিষ্ট। [‘খ্রিষ্ট’ ছিলেন একজন ফুটপাতের ঋষি যিনি চিলির রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন; এল রোটো চোরো কঠোর নাকওয়ালা, জ্ঞানী-ক্র্যাকিং পদযাত্রী।]
আমাকে বলা হয়েছে যে আপনি নেরুদার বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন, আর আমি জানি আপনারা বহু বছর ধরে বন্ধু। আপনার কবিতার বিকাশে কি তাঁর সরাসরি কোনো প্রভাব ছিল?
পাররা: আমি কখনো নেরুদার বাড়িতে থাকিনি। হ্যাঁ, আমরা বন্ধু ছিলাম এবং এখনো আছি। আমরা একই পাড়ায় থাকতাম। মাঝেমধ্যে আমরা একে অপরকে প্রতিদিন দেখেছি। নেরুদা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। প্রতিটি স্প্যানিশভাষী কবির পথ অবশ্যই ‘রেসিডেনসিয়া এন লা টিয়েরা” দিয়ে যায়। আমাদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে তিনি একজন ভদ্রলোক, অন্যদিকে আমি একজন রুক্ষ গ্রাম্য ছেলে।
নিকানোর পাররা ছাড়া, লাতিন আমেরিকার সেরা কবি কারা?
পাররা: আমি বর্তমান লাতিন আমেরিকার কবিতা এত ভালোভাবে জানি না যে আমি তার মূল্যায়ন করতে পারব। তবে চিলির যে কবির প্রতি আমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ, তিনি হলেন এনরিক লিন।
যখন আমি নিজের জন্য ভাবতে শুরু করি, তখন প্রথমেই আমি বুঝতে পারি যে আমার চরিত্রটি নবজাগরণ থেকে উদ্ভূত নয় বরং অনেক আগের। অ্যারিস্টোফেনিস থেকে। চসার থেকে। গেস্টা রোমানোরাম থেকে। স্প্যানিশ পিকারেস্ক উপন্যাস থেকে। সার্ভান্তেস থেকে। কুয়েভেদো থেকে।নিকানোর পাররা
চিলিতে কেন এত বেশি ভালো কবি তৈরি হয়েছে?
পাররা: অসংখ্য স্থায়ী কারণে চিলি একটি অনন্য দেশ। প্রথম কারণ হলো এর ভূগোল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে, এখানে প্রচুরসংখ্যক গদ্য লেখক, বিজ্ঞানী, ঋষি আর দার্শনিকের জন্ম হয়।
আপনি যে ভাষাগুলো বলতে পারেন, যেমন স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজি, অন্ততপক্ষে—কাব্যিক প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে এগুলোর তুলনা কেমন? একজন কবির কি একটার চেয়ে আরেকটাতে কাজ করার কোনো বিশেষ সুবিধা বা অসুবিধা আছে?
পাররা: যেহেতু প্রতিকবিতা কোনো ভাষাগত শাখা নয়, বরং শব্দের জাদুর মাধ্যমে বাস্তবতাকে আনুমানিক করার একটি পদ্ধতি, তাই অবশ্যই এ ক্ষেত্রে কোনো বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত ভাষা নেই। যেমন, আলাকালুফ ইন্ডিয়ানদের কাছে আলাকালুফ ভাষার চেয়ে উপযুক্ত আর কিছুই নেই। অন্যান্য ভাষায় অনুপ্রবেশ অবশ্যই প্রতিকবিকে অপ্রত্যাশিত প্যানোরামাতে নিয়ে যেতে পারে। অন্যথায় পিকাসো আদিম মানুষের প্লাস্টিক ল্যাঙ্গুয়েজে এত আগ্রহী হতেন না। এ ব্যাপারে আমি একমত যে একটি ভাষা অন্যটির চেয়ে আরও জটিল বা সমৃদ্ধ হতে পারে, তবে প্রায়ই সম্প্রসারণে যা অর্জন করা হয় তাতে ভাষার সেই তীব্রতাটুকু হারিয়ে যায়। কিন্তু অধ্যয়ন সহায়ক হয়। স্প্যানিশের পর আমার কাছে, ইংরেজি ভাষাটা আকর্ষণীয়।
স্প্যানিশ কবিতার সাধারণ দুর্বলতাগুলো কী কী? অর্থাৎ, স্প্যানিশ কবিরা প্রায়ই কোনো কোনো অসুস্থতার শিকার হন?
পাররা: আনুষ্ঠানিকতা আর বাগ্মিতা, বক্তৃতা, ভঙ্গিমা, স্পষ্টতা, চরিত্রের শিথিলতা, কোমলতা ইত্যাদি।
পরিশেষে, একটি প্রতিপ্রশ্ন: আমি জিজ্ঞাসা করিনি এমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রশ্নের উত্তরে আপনি কী বলতে চান?
পাররা: স্বাধীনতা ছাড়া কবিতা হয় না। কবিতাই প্রকাশ—স্বাধীনতার আত্মা।