
ইরানে নারীদের সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৭ শতাংশে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, নারীরা শিক্ষা গ্রহণ ও সাহিত্য, সাংবাদিকতা, সংস্কৃতি উৎপাদনে রীতিমতো নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটি এমন এক সূচক যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে নজিরবিহীন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট অফিসের নারী ও পরিবারবিষয়ক উপপ্রধান পারভিন হাজি-মোহাম্মাদি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৬০ শতাংশ আবেদনকারীই নারী। তাঁর মতে, নারীদের শিক্ষা ও সাক্ষরতার প্রসার সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।
ইরানের ইতিহাসে নারীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ এত বিস্তৃত ছিল না। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে নারীরা প্রাথমিকভাবে উচ্চশিক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। বর্তমান শতকের শুরুর দশকে ধারাবাহিক নীতিগত পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্যোগ নারীর শিক্ষায় নতুন পথ খুলে দেয়।
বিশেষত ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে নতুন স্কুল ও টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সাক্ষরতার বিস্তার সরাসরি প্রভাব ফেলেছে সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে। ইরানের বিভিন্ন শহরে নারী লেখক, কবি ও প্রকাশকদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। তেহরান ও ইস্পাহানে প্রকাশিত সাম্প্রতিক সাহিত্য সাময়িকীগুলোর অন্তত এক তৃতীয়াংশ জুড়ে নারীরাই সম্পাদক বা অনুবাদক হিসেবে যুক্ত আছেন।
ইরানি লেখক ফারিবা ভাফি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নারীর সাক্ষরতা মানে সমাজের আত্মজিজ্ঞাসা জাগ্রত হওয়া।’ তাঁর মতে, পাঠ ও লেখালেখির মধ্য দিয়ে নারীরা নিজেদের অবস্থান ও স্বাধীনতা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছেন।
তবে এই উন্নতির সঙ্গে চ্যালেঞ্জও আছে। সামাজিক রক্ষণশীলতা ও রাজনৈতিক চাপ এখনো অনেক নারীর প্রকাশ ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ইরানি নারী কবি মাহনাজ সাদি বলেন, ‘লেখা মানে কণ্ঠস্বর; কিন্তু অনেক সময় এই কণ্ঠস্বর শোনা যায় না।’
ইরানের শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাক্ষরতার এই সাফল্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে পাঠসংস্কৃতির বিস্তারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। স্থানীয় গ্রন্থাগার, অনলাইন শিক্ষা, অনুবাদ কর্মসূচি ও প্রকাশনা শিল্পের প্রসার—এই চারটি ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ আগামী দিনে ইরানের সাহিত্যকে আরও বিস্তৃত করবে।
সূত্র: ওয়ানা নিউজ
সম্প্রতি আলাবামার মনরোভিল শহরের এক পুরোনো পারিবারিক আর্কাইভ থেকে বিখ্যাত মার্কিন ঔপন্যাসিক, ‘টু কিল আ মকিংবার্ড’-এর লেখক হার্পার লির (১৯২৬-২০১৬) অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি উদ্ধার হয়। একগুচ্ছ অপ্রকাশিত গল্প সংবলিত পাণ্ডুলিপির নাম ‘দ্য ল্যান্ড অব সুইট ফরেভার’—গত ২১ অক্টোবর হার্পারকলিন্স থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
লির সাহিত্যে আমেরিকান দক্ষিণের বর্ণবিদ্বেষ, নৈতিক জটিলতা এবং শৈশবের নস্টালজিয়া সবসময়ই বড় ভূমিকা রেখেছে। নতুন প্রাপ্ত এই সংকলনে পাঠকরা দেখতে পাবেন এক ভিন্ন লিকে, যিনি নিজের সমাজের নারীদের, একাকিত্বে থাকা বৃদ্ধদের এবং শ্রেণিগত সংকটের বেদনাকে আরও সূক্ষ্মভাবে ধরেছেন।
বইটির সম্পাদক জেন হোলম্যান জানিয়েছেন, ‘এগুলো মূলত ১৯৫০-এর দশকে লেখা গল্প, যখন লি টু কিল আ মকিংবার্ড প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি এগুলো প্রকাশ করেননি, হয়তো অতিরিক্ত আত্মসমালোচনার কারণে।’
দ্য গার্ডিয়ান-এর রিভিউতে সমালোচক নিকোলাস হ্যারল্ড লিখেছেন, ‘এই গল্পগুলো প্রমাণ করে লি ছিলেন মানবঅভিজ্ঞতার সূক্ষ্মতম পর্যবেক্ষক।’ অন্যদিকে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউ-এর বিশ্লেষণ বলছে, ‘হার্পার লির নৈতিক কণ্ঠ আজও প্রাসঙ্গিক বিশেষত এমন সময়ে যখন আমেরিকান সমাজ আবার জাতিগত বিভাজনের মুখোমুখি।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউ
• গ্রন্থনা: বোদরুল হেকীম