অমর একুশে বইমেলায় লেখক–প্রকাশকের মেলবন্ধনে এক অন্য রকম আবহ তৈরি হয়। বইমেলার
অমর একুশে বইমেলায় লেখক–প্রকাশকের মেলবন্ধনে এক অন্য রকম আবহ তৈরি হয়। বইমেলার

বইমেলা কেমন দেখেছি, কেমন দেখতে চাই

এই নতুন সময়ে আর কদিন পরই অমর একুশে বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে মেলাটি পরিণত হয় লেখক–প্রকাশক–পাঠকের মিলনকেন্দ্রে। পুরোনো স্মৃতির সঙ্গে এই লেখায় ধরা পড়েছে বইমেলাকে কেমন দেখতে চাই, সে আকাঙ্ক্ষাও—

বইমেলা ঘিরে অনেকের মতোই আমারও নানান স্মৃতি সঞ্চিত হয়েছে, দেশে ও দেশের বাইরে বইমেলায় যাওয়ার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে নানান চিন্তাভাবনা। প্রথমে খুদে পাঠক হিসেবে, তারপর পরিণত পাঠক হয়ে; এবং পরবর্তী অনেক বছর বইমেলার অংশীদার প্রকাশক হিসেবে। এখন পর্যন্ত আমরা আর কোনো বইমেলার কথা জানি না যে মেলা এক মাস ধরে উদ্​যাপিত হয়। এই মেলাকে ঘিরে লেখক, প্রকাশক, পাঠক, গণমাধ্যম, সরকারসহ আপামর জনসাধারণের উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশার শেষ নেই। আমি খানিকটা স্মৃতিচারণা আর অনেকটা বইমেলা ও গ্রন্থসংস্কৃতিকে কেমন দেখতে চাই আমাদের নতুন সময়ে, তা নিয়ে এ লেখায় আলোকপাতের চেষ্টা করব।

বাংলাদেশের বইমেলা

পাঠক হিসেবে নব্বইয়ের দশকের বইমেলাগুলো আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল। সে সময় মেলার আয়োজন ছিল একেবারে সাদামাটা, কিন্তু অসাধারণ মেধাবী কবি–লেখকদের উজ্জ্বল উপস্থিতি সেই সাদামাটা আয়োজনকে ছাপিয়ে মেলাকে করে রাখত প্রাণবন্ত। ১৯৫০ ও ’৬০ দশকের লেখকেরা তখনো ছিলেন সক্রিয় এবং তাঁদের অনেকেই নিয়মিত মেলায় আসতেন, তাঁদের ঘিরে পাঠকদের একটা প্রাণবন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক আবহ তৈরি হতো। আসতেন নবীন লেখকেরাও। প্রকাশনা ও প্রকাশকের সংখ্যা অনেক কম থাকলেও বই ও আলোচনার মান অমর একুশে বইমেলাকে পরিণত করেছিল বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কেন্দ্রস্থলে।

ঢাকার বইমেলায় প্রকাশকের চেয়ে লেখক ধরে বই খোঁজাটাই পাঠকদের জন্য সব সময় স্বাভাবিক ছিল। এমন প্রতিষ্ঠান সম্ভবত হাতে গোনা ছিল, যাদের গবেষণামূলক বই পাঠকদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারায় গণমাধ্যমে প্রায় অপরিচিত গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের বইও পাঠকেরা এখান থেকে কিনতেন।

একুশে বইমেলা নিয়ে আমাদের বরাবরের অভিযোগ যে বই নিয়ে সব আয়োজন শুধু এই মেলা ঘিরেই। আমরা এর থেকে উত্তরণ করে কীভাবে বই আর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে সারা বছর ধরে উদ্​যাপন করব, তা নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন আছে। আমাদের আশপাশের দেশের এবং বিশ্বের অন্যান্য বইমেলার অভিজ্ঞতা থেকে তার কিছু দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা

একুশে বইমেলার পাশাপাশি বাবার (ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড—ইউপিএলের প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দীন আহমেদ) উদ্যোগে পরিবারসহ একাধিকবার কলকাতা বইমেলায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মাত্র এক সপ্তাহব্যাপী এ মেলার আয়োজন। তবে বরাবরই বাংলাদেশের বইমেলার সঙ্গে পার্থক্য লক্ষ করেছি। প্রথম কলকাতা বইমেলায় যাওয়ার সুযোগ হয় ১৯৯২ সালে। সে সময় ইউপিএল আলাদাভাবে স্টল নিয়ে কয়েক বছর ওই মেলায় অংশ নিয়েছিল। সেই সুবাদে আমাদের ঘুরতে যাওয়া—রথ দেখা আর কলা বেচা আরকি। আমার তরুণ বয়সে দেখা সেই মেলার স্মৃতি ছিল অবিস্মরণীয়। তখনো একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমির চৌহদ্দিতেই হতো। তাই অত বড় ময়দানে কলকাতার মেলা আমাদের মুগ্ধ করেছিল। সেখানে প্রথম দেখতে পেলাম বড় প্রকাশকেরা প্যাভিলিয়নে বই প্রদর্শন করে। একেকটা প্যাভিলিয়ন বেশ বড়, এক প্রান্ত দিয়ে লাইন করে লোকে ঢুকছে, বের হচ্ছে অন্য প্রান্ত দিয়ে। 

কলকাতা বইমেলায় পরে বাংলাদেশের জন্য তৈরি প্যাভিলিয়নে আমরাও বই বিক্রি করেছি, যদিও সেই স্মৃতি অম্লমধুর। কারণ, সেখানে বই নিয়ে পাঠকদের প্রশ্ন আর আগ্রহের ধরন চমকপ্রদ, কিন্তু প্যাভিলিয়নের ভেতর ঘুপচি ঘুপচি স্টলে বই বিক্রি করা অত্যন্ত দমবন্ধকর, গরমে রীতিমতো প্রাণান্তকর পরিস্থিতি। পাঠকদের পক্ষেও তা অস্বস্তিকর। এসব দিক বিবেচনায় বরাবরই মনে হয়েছে যে সঠিক পরিকল্পনা ও আমাদের যে সম্পদ আছে, তাকে গর্বভরে এবং ন্যায্যভাবে উপস্থাপন করতে পারার অভাবেই কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় আমার এই অভিজ্ঞতা।

দিল্লির ওয়ার্ল্ড বুক ফেয়ার 

যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল দিল্লির ওয়ার্ল্ড বুক ফেয়ারেও। কলকাতার চেয়ে কয়েক গুণ বড় পরিসরে আয়োজন। আর ছড়িয়ে থাকার ফলে জনসমাগম হয়তো তেমন বোঝা যায় না। মেলাটি হয় দিল্লির প্রগতি ময়দান প্রাঙ্গণে, সেখানে ইট-সিমেন্ট-কংক্রিটের স্থায়ী স্থাপনার ভেতরেই সব স্টল ও প্যাভিলিয়নকে জায়গা দেওয়া হয়। কাজেই আমাদের মেলার মতো প্রতিবার স্টল/প্যাভিলিয়ন তৈরি করে আবার সেগুলো ভেঙে পরের বছর নতুন করে তৈরির ঝক্কিই নেই, আপনি প্রকাশক হিসেবে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন বই তৈরির কাজে। এখানে পাঠক ঠিকই আপনাকে খুঁজে নেবে। কারণ, সবার হাতে দেওয়া থাকে স্টল নির্দেশিকা; এবং প্রকাশক ধরে স্টল নম্বর খুঁজে বের করে তাঁর কাছে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন হারিয়ে না গিয়ে। এই আয়োজনগুলো থেকে আমাদের মেলাকেও ভবিষ্যতে আরও উৎকর্ষ দেওয়ার কিছু দিকনির্দেশনা আমরা পেতে পারি। 

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা

আমার ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার অভিজ্ঞতা ছিল অন্য রকম মনোমুগ্ধকর। সেখানে পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে ছোট–বড়–মাঝারি হরেক প্রকাশকের ভিড়। একেকটা দেশের প্রতিনিধি স্টল তাদের প্রকাশকদের জন্য বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে, স্বত্ব কেনাবেচার সেশন হচ্ছে, রাইটস ক্যাটালগ নিয়ে প্রকাশকেরা বিভিন্ন ভাষায় তাঁদের বইকে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার আশায় বুক বেঁধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও বইয়ের মেটাডেটা নিয়ে সেশন চলছে, কোথাও চলছে নামজাদা লেখকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, কোথাও আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় বইয়ের প্রচারণা কীভাবে আরও সুকৌশলে করা যায়, তা নিয়ে চলছে আলোচনা, কোথাও পৃথিবীর নানা দেশের ইউনিভার্সিটি প্রেসগুলো মিলে আলোচনা করছে কীভাবে নিজেদের মধ্যে কাজের আদান–প্রদান বাড়ানো যেতে পারে, এদিকে আবার কোনো কান্ট্রি প্যাভিলিয়নের রিসেপশনে হচ্ছে মেলার আয়োজকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমাগম। ছোটদের বই, আর্টের বই, গবেষণাধর্মী বইসহ কত হাজার রকমের, আর তাদের উপস্থাপনার কত রকম বাহার—সে এক ভিন্ন দুনিয়া, যেখানে হারিয়ে গিয়ে কিছু সময়ের জন্য বাস্তব দুনিয়াকে ভুলেও যাওয়া যায়! মুদ্রিত বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে যাঁরা সব সময় শঙ্কিত, উন্নত বিশ্বের এই মেলায় একবার ঘুরে আসতে পারলে তাঁদের ভ্রম ভাঙবে নিশ্চিতভাবেই। 

কেমন দেখতে চাই আমাদের মেলা

অনেক বছরের পথপরিক্রমায় অমর একুশে বইমেলা আজকের পরিসরে উপনীত হয়েছে। মেলাটিকে আমাদের কিশোর বা তরুণ বয়সে যেমন দেখেছি, এমনকি প্রকাশনা পেশায় আসার পরও যেমন দেখেছি, এখনকার পরিসর তার চেয়ে অনেক ভিন্ন। গত ১০ বছরে, অর্থাৎ মেলা প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমির বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাপ্ত হওয়ার পর থেকে এর উপস্থাপন ও আবেদন প্রতিবছরই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পাঠকদের প্রত্যাশাও প্রতিবছর তাই বেড়েই চলেছে। তবে কিছু ন্যায্য সমালোচনাও যে মেলার আয়োজন নিয়ে হয়েছে এবং হচ্ছে, সেগুলো আমলে নেওয়া খুব দরকার।

একুশে বইমেলাকে বলা যায় আমাদের জাতিসত্তার আত্মপ্রকাশের কেন্দ্রবিন্দুস্বরূপ। এর সঙ্গে যেমন অনেক আবেগ জড়িত—অনেকেই বলেন, ‘এ আমাদের প্রাণের বইমেলা’—তেমনি এর আয়োজনে পেশাদারত্বের দিকটাও জোরদার করার বিকল্প নেই। মেলার নীতিমালা, বিন্যাস ও সামগ্রিক আয়োজনকে হতে হবে পাঠকবান্ধব। বর্তমানে এটি আয়োজিত হয় বাংলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এবং মেলা কমিটিতে একাডেমির কর্মকর্তারা ছাড়াও থাকেন কয়েকজন প্রকাশক প্রতিনিধি, লেখক প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক প্রতিনিধি, কপিরাইট অফিস, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি প্রমুখ। এ বছর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি আলোচনা করে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মেলা আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় বাংলা একাডেমির থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানান সময়ে; এবং এর পেছনে যুক্তিগুলোও পরিষ্কার—বাংলা একাডেমির নিজস্ব প্রকাশনা রয়েছে। কাজেই নিজে প্রকাশক হয়ে এ ধরনের একটা মেলা আয়োজনের দায়িত্বে থাকা একরকম স্বার্থের সংঘাত। তা ছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিধানে বইমেলা আয়োজনের কাজ ন্যস্ত রয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ওপর, দেশজুড়ে সারা বছর বইমেলার আয়োজন করছে তারা। পাশাপাশি এটাও স্বীকার করতেই হয় যে বাংলা একাডেমি প্রায় অর্ধশতক সময় ধরে বইমেলার আয়োজন করতে করতে একধরনের পারদর্শিতা অর্জন করেছে। তবে এখানে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি এবং মনে করেছি যে সামনের দিনে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন অপরিহার্য।

নানা দিক থেকে একুশে বইমেলার গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্যও আছে। এই মেলায় ২০০৪ সালে ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন লেখক হুমায়ুন আজাদ। ২০১২ সালে আততায়ীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন লেখক অভিজিৎ রায়। এ বইমেলাতেই একবার নিষিদ্ধ করা হয় রোদেলা প্রকাশনীকে। আর ২০২৩ সালে ‘বিতর্কিত’ ব্যক্তিদের বই প্রকাশের ‘অপরাধ’–এ স্টল দেওয়া হলো না আদর্শকে। আবার যাঁরা স্টল বা প্যাভিলিয়ন পেলেন, তাঁরা সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে পেলেন কি না, এসব নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকল। কাজেই ফেব্রুয়ারিজুড়ে যেমন আমাদের পাঠকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন মেলায় কখন যাবেন, কী বই কিনবেন, এই ভাবনা নিয়ে, তেমনি আমরা ভেতরে ভেতরে আতঙ্কিতও থেকেছি নানা অঘটনের আশঙ্কায়। অঘটনগুলো বস্তুত তখনই ঘটে, যখন সমাজে বা রাষ্ট্রে মানুষের মতপ্রকাশের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার শক্তিগুলো সোচ্চার হয়ে ওঠে। আমাদের প্রত্যাশা, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে অন্তত এ ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটবে না।

এ বছরই বইমেলা পাঠকের সব প্রত্যাশা পূরণ করে ফেলতে পারবে, এমন ভাবার কারণ নেই। তবে বইমেলা আয়োজনের প্রচেষ্টায় উত্তরোত্তর পাঠকবান্ধব হয়ে ওঠা, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলা একাডেমিসহ সম্পৃক্ত সবার সদিচ্ছা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। এমন আশা তো আমরা করতেই পারি যে কোন স্টল কোথায়, তার একটা নির্দেশক মানচিত্র এবার থাকবে। একইভাবে কোন প্রকাশনা থেকে নতুন কী কী বই প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কে তথ্য পাঠকদের কাছে সহজে পৌঁছে যাবে গণমাধ্যমের তরফে। পাশাপাশি কোন বই নিয়ে কী আলোচনা হচ্ছে, কোন কোন বই কী কী কারণে সংগ্রহ করা উচিত—এসব বিষয়েও পাঠক যেন অবগত হন।

আরও আশা করি যে গ্রন্থস্বত্ব, অনুবাদস্বত্ব, অনুবাদের মান বৃদ্ধি করা, সম্পাদনা, উপস্থাপন—এসব বিষয়ে প্রকাশকেরা আরও পেশাদার ও সচেতন হবেন। কেননা বিষয়গুলো পাঠকের অধিকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। পাঠক শেষ পর্যন্ত বই কেনেন তাঁর কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে। আমরা যেন নিম্নমানের বই তুলে দিয়ে পাঠককে না ঠকাই—প্রকাশক হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব। আর প্রকাশকের আরেকটি মৌলিক দায়িত্ব হলো লেখকের সম্মানী যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেওয়া।

এসব প্রসঙ্গ বইমেলার সময়ে আলোচিত হয়। কিন্তু মেলা শেষ হয়ে গেলে এই সৃজনশীল জগৎটাকে ভুলে যাই আমরা। গণমাধ্যমও এই ব্যস্ত সময়েই আমাদের কাছে লেখা চান, টক শোতে ডাকেন, অন্য সময়ে তেমন একটা খোঁজ রাখেন না। বছরজুড়েই আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের আলোচনার আয়োজন করি, সেগুলো কখনো খবরে আসে, কখনো আসে না। আশা করি, এই চর্চারও একদিন অবসান ঘটবে। বই পড়া, মানসিক উৎকর্ষের চর্চা, জ্ঞান ও সাহিত্যের চর্চা শুধু ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বরাদ্দ নয়। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তখনই অর্জিত হবে, যখন আমরা আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য পূর্ববর্তী কী জ্ঞান তৈরি হয়েছে, আর নতুন সময়ে কীভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নেব—এসব ঠিক করতে পারব।

সর্বোপরি জাতিগতভাবে জ্ঞানভিত্তিক যাত্রাকে নিশ্চিত করতে মত ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতেই হবে। আমরা যেন অযৌক্তিকভাবে সেন্সরশিপ বা আক্রমণের শিকার আবার না হই, নতুন জাগরণের যুগে এইটুকু থাকবে লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের প্রত্যাশা।