ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশে–বিদেশে

বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখানো হচ্ছে কীভাবে বড় উপন্যাস পড়তে হয়

প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমাদের পাঠের অভ্যাস। রিলস ও শর্ট ভিডিওর যুগে মানুষের মনোযোগের সময়সীমা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। সম্প্রতি এর প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাহিত্যপাঠে। বড় উপন্যাস, মহাকাব্য ও ক্ল্যাসিক সাহিত্যের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ ক্রমেই কমছে।

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সাহিত্য বিভাগগুলোতে নতুন করে ‘লং রিডিং স্কিলস’ বা ‘দীর্ঘ পাঠের দক্ষতা’ নামে আলাদা কর্মশালা চালু হয়েছে। এসব কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে কীভাবে বড় উপন্যাস বা ক্ল্যাসিক সাহিত্যপাঠে ধৈর্য ধরে থাকা যায়, কীভাবে চরিত্র, সময় ও ভাষার স্তরগুলো বোঝা যায়। অক্সফোর্ড, সাসেক্স ও ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা বলছেন, অনলাইন যুগে তরুণদের পড়ার ধরন বদলে গেছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিদিন অসংখ্য ছোট লেখা, টুইট, মিম বা পোস্ট পড়েন। কিন্তু দীর্ঘ কোনো লেখা পড়তে গিয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে তাঁদের সমস্যা হয়। এখন তাঁরা দীর্ঘ রচনা পাঠের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ছাত্রদের দিনে নির্দিষ্ট সময় মুঠোফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

এ প্রবণতা শুধু যুক্তরাজ্য নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা যাচ্ছে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা এখন ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ পড়তে ভয় পান। তাঁরা ভাবেন, এত বড় বই পড়ার জন্য সময় কোথায়? অথচ সাহিত্যচর্চার অন্যতম গুণই হলো সময় ও মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিনির্ভর জীবন থেকে সামান্য সময় আলাদা রেখে বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনাই হতে পারে সমাধান। ধীর পঠনই দীর্ঘ মেয়াদে গভীর চিন্তা, ভাষাবোধ ও কল্পনাশক্তিকে টিকিয়ে রাখতে পারে।

ডিজিটাল বিশ্বে যেখানে প্রতিটি নোটিফিকেশন মনোযোগ কেড়ে নেয়, সেখানে একটানা ৫০০ পৃষ্ঠা পড়ার ক্ষমতা হয়তো একধরনের বিপ্লব। সেই বিপ্লবের দীক্ষাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিতে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, সাহিত্য কেবল তথ্য নয়, অভিজ্ঞতারও এক গভীর সাধনা।

সূত্র: দ্য টাইমস