
পিছুটান
যেকোনো ফলের পিছুটান তার ভূতপূর্ব ফুল
যেমন বৃষ্টির পিছুটান তার ফেলে আসা মেঘ।
ভাব ঘনীভূত হয়ে তবেই তো বিন্দু বিন্দু ভাবনার পুঁতি...
হঠাৎ মেঘের সূত্র ছিঁড়ে ঝরতে থাকে সেই পুঁতির সিরিজ
তাকেই তো বৃষ্টি বলি, সুভাষিত স্বরে বলি—অনর্গল মেঘের বিবৃতি।
ফলের ভেতরে থাকে প্রস্ফুটন আর পরাগায়নের কত সুখস্মৃতি!
বিস্তার
কেউ চলে যাবার পরেও থেকে যায় তার নিঃশব্দ আবেশ
বৃষ্টি থেমে গেলেও যেমন থাকে মিষ্টি আওয়াজের মৃদু রেশ।
থেমে গেছে সুফিগান, ঘুমিয়ে পড়েছে শ্রোতা, আজকের মতো এই শেষ
তবুও ঘূর্ণনজাড্যে ঘুরেই চলেছে ধীরে সেই এক আবিষ্ট দরবেশ।
আকাশদুহিতা
হঠাৎ পড়েছে বাজ, চঞ্চুতে, উড়ন্ত উড়োজাহাজের।
সঙ্গে সঙ্গে বিমানের প্রত্যেকটি রোমকূপ থেকে মুহুর্মুহু বিচ্ছুরিত হচ্ছে
শিহরিত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিজলির শুঁড়।
সে এক গগনচেরা বিদ্যুৎ–ভাষায় হাহাকার করতে করতে
ছুটছে এখন ওই বিজলিরোমা আহত বিমান।
অনেক উঁচুতে এক অন্ধকার উত্তল জোনাকজ্বলা ওয়েবসাইট থেকে অনুক্ষণ
চমকাতে চমকাতে ভেসে আসছে তারসপ্তকের তীক্ষ্ণ আকাশদুহিতাগণ।
মরীচিকা
ঘনিয়ে আসছে কত যে উড়ন্ত প্রবচন! এই যেমন
‘খাঁচার পাখির কাছে উড্ডয়ন এক অসুস্থতা। মুক্তি, ব্যাধিমাত্র।’
‘জগতে বাতিল বলে কিছু নেই, কিছু নয়
বিকল ঘড়িও দেয় দিনে দুইবার সঠিক সময়।’
এবং ‘কথার চেয়ে কাজ আরও অধিক বাঙ্ময়।’
দিগ্বিলীন প্রান্তরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেমন
চটপটে পর্যটকও হয়ে পড়ে দিকাদিক জ্ঞানশূন্য,
ঘূর্ণিবাতাসে কয়েক পাক ঘুরে এক ঝটকায় উড়ে যায় শেষে
শেষতম দিকফলকটিও, এখানেও তা-ই। শোনো,
হৃদয়ের যে আইন, এখানে নেই তার বলবত্তা কোনো।
এখন যেকোনো দরজায় টোকা দিলেই বেমক্কা ধমকের বেগে
বেরিয়ে আসবে আয়ুনাশক উৎকট গন্ধঝাপটা, কার্যকারণবিহীন।
ভিতু মানুষের দমকা সাহসের দোহাই
জলবাঁদর দিয়ে মাছ ধরার প্রশিক্ষণের দোহাই
পর্বতের চূড়া থেকে হাঁসের বাচ্চার
সে বিখ্যাত বেপরোয়া ঝাঁপ আর অন্তহীন পতনদৃশ্যের দোহাই—
অন্তত কিছুটা সহনীয় হয়ে উঠুক নির্জন খাঁ খাঁ প্রান্তরের অট্টহাসি,
মরীচিকার স্যাডিস্ট হাতছানি, হুতাশনের হিসহিস,
অনর্গল গোধিকাজিভের সঞ্চালন।